ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামের রাস্তায় হেঁটেই শেষের শুরু হয়েছিল বামেদের। বিরোধীদের এটাই ব্যাখ্যা। যদিও সিপিএম শিল্পায়নকেই ভবিষ্যৎ ভেবে এগিয়ে যেতে চেয়েছিল। সেই পথই ঠিক ধরে নিয়েছিল। সিংহাসন হারানোর আট বছর পরেও তা স্পষ্ট করে দিচ্ছেন রাজ্য সিপিএমের অবিসংবাদী নেতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সচরাচর তাঁর সঙ্গে কথা বলার অনুমতি মেলে না। তবে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ফোনে পাওয়া গেল তাঁকে। জিজ্ঞাসা করা হয়, এবার ভোটে তো আপনাকে পাওয়া গেল না? উত্তরে অভিমানী বুদ্ধ বলেন, “২০১১ সালে আমি যা চেয়েছিলাম তা যদি সফল হত তাহলে হয়তো আজও থাকতাম।” এতেই স্পষ্ট আজও শিল্পায়নের স্বপ্ন দেখেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী।
[ আরও পড়ুন: প্রার্থীতালিকার পর এবার তারকা প্রচারকমণ্ডলী থেকেও বাদ আডবানী,যোশী]
পাম অ্যাভিনিউয়ের সরকারি আবাসনে অসুস্থ শরীরে দীর্ঘদিন ঘরবন্দি। কিন্তু দেশের রাজনীতি সম্পর্কে পুরোমাত্রায় ওয়াকিবহাল। চোখের সমস্যার জন্য অনেকদিনই টিভি দেখেন না। তাঁর নিজের কথায়, “টিভি তো আর দেখি না, এখন আমি টিভি শুনি।” বন্ধ লেখালেখিও। প্রবল শ্বাসকষ্টের জন্য অক্সিজেনের নল নিত্যসঙ্গী। সেই অক্সিজেন নল লাগানো অবস্থাতেই গত ক’দিন ধরে ডিকটেশন দিয়ে চলেছেন নতুন লেখার জন্য।
পুজোর আগে প্রকাশিত হয়েছে বুদ্ধবাবুর লেখা বই ‘নাৎসি জার্মানির জন্ম ও মৃত্যু।’ কিছুদিন অবসরের পর ফের নতুন করে লেখালেখি শুরু করেছেন। তবে কীসের লেখা, বিষয়বস্তুই বা কী, সেসব নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাঁর সতীর্থরা যখন পথসভা-প্রচারে ব্যস্ত, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তখন তাঁর প্রিয় একচিলতে ফ্ল্যাটে বসে ডিকটেশন দিচ্ছেন। ফোন করতেই সেই চেনা কণ্ঠস্বর। কুশল জিজ্ঞাসা করতেই বলেন, “ভাল আছেন।”
[ আরও পড়ুন: ক্ষমতায় এলে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করবে কংগ্রেস, ফের ‘ধামাকা’ প্রতিশ্রুতি রাহুল গান্ধীর়়]
কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ভ্রাতুষ্পুত্র প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বরাবরই লেখাপড়া নিয়ে থাকতে ভালবাসেন। মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় কয়েকটি নাটক লিখেছিলেন। পার্টির মুখপত্রেও নিয়মিত লিখেছেন। এমনকী কয়েক বছর আগে অসুস্থ অবস্থাতেও তিনি লিখেছেন। কিন্তু চোখের সমস্যা বাড়তেই লেখাপড়ায় ব্যাঘাত ঘটে।
শারদ সংখ্যায় তাঁর লেখা হয়নি। কিন্তু বই লিখেছেন। চোখের সমস্যাকে তেমন গুরুত্ব না দিয়ে এখনও যে তিনি লেখাতেই সমান আগ্রহী তা বুঝিয়েছেন।
ভরা ব্রিগেডের সমাবেশে হাজির হয়ে সহকর্মীদের বলেছিলেন, “ভোটেও যেন এই ঘটনার প্রতিফলন হয়।” ভোটের প্রচার সবে জমে উঠেছে। কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের অন্যতম প্রবক্তা তিনি। কিন্তু কংগ্রেসের সঙ্গে এবার আসনরফা কার্যত ভেস্তে গিয়েছে। পার্টির এমন কঠিন পরিস্থিতিতে বুদ্ধবাবুর অনুপস্থিতি বারবার অনুভব করেছেন সহকর্মীরা। তিনি নিজেও সে কথা বুঝছেন। তবে অসুস্থতার পাশাপাশি অভিমানও কিছুটা যেন স্পষ্ট হয়েছে। কথা শেষ করার আগে স্বভাবসিদ্ধ ঢঙে বলেন, “ভাল থাকবেন।”
The post ‘সফল হলে আজও রাজনীতিতে থাকতাম’, অকপট স্বীকারোক্তি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর appeared first on Sangbad Pratidin.