কলহার মুখোপাধ্যায, বিধাননগর: কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা, এনআইএ (NIA)-র উঁচু পদে কাজ করে পাত্র। সঙ্গে চলচিত্র পরিচালনার অল্পবিস্তর শখও রয়েছে। সব মিলিয়ে বিবিধ গুণের অধিকারী। কথাবার্তায় চৌকস। মন্দ নয় সে পাত্র ভালই। চারহাত এক হতে বিশেষ সময় লাগল না। তাল কাটতে অবশ্য লাগল চার বছর। পুরো বিষয়টা জানার পর আচমকা বজ্রাঘাত।
চার বছরের বৈবাহিক জীবন ভাল-মন্দে চলছিল। তবে ক্রমেই বাড়ছিল স্ত্রীয়ের উপর নিয়মিত মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার। শেষমেশ অতিষ্ঠ হয়ে স্বামীর বিরুদ্ধে খোঁজখবর নিতে শুরু করেন স্ত্রী রাধিকা সেন। এরপর এক লহমায় সব স্বপ্ন ধুলিসাৎ। স্বামী দেবেশ কোলে আদতে এনআইএ সংস্থার কোনও আধিকারিকই নন। পরিচয় সম্পূর্ণ ভুয়ো। বিস্তর খোজখবর করার পর জানলেন রাধিকা। এরপর পুলিশের দ্বারস্থ স্ত্রী। দেবেশ কোলে বধূ নির্যাতন, প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার। বুধবার তাকে গ্রেপ্তার করে বিধাননগর দক্ষিণ থানার পুলিশ।
[আরও পড়ুন: রাজ্যে স্নাতকে ভরতির দিনক্ষণ চূড়ান্ত, এবারেও হচ্ছে না প্রবেশিকা পরীক্ষা, লাগবে না ফি]
জানা গিয়েছে, ২০১৭ সালে ‘বিবাহ বন্ধনী’ অ্যাপে পরিচয় হয় দেবেশ ও রাধিকার। সূত্রের খবর, সংশ্লিষ্ট অ্যাপে অভিযুক্তের প্রোফাইলে লেখা ছিল, তিনি একজন এনআইএ আধিকারিক। এখানেই শেষ নয়, একইসঙ্গে তিনি রাধিকার কাছে নিজেকে চিত্র পরিচালক হিসেবেও পরিচয় দেন। ওই বছরই বিয়ে। পরিণয় সূত্রে বাঁধা পড়ার পরেই শুরু হয় স্ত্রীর উপর অত্যাচার। অভিযোগকারিণী পুলিশকে জানায়, মানসিক অত্যাচারের পাশাপাশি তাঁকে মারধরও করত অভিযুক্ত। একইসঙ্গে, স্ত্রীর কথায়, বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই নানা অজুহাতে টাকা ধার নিতে শুরু করে দেবেশ৷ টাকা ফেরৎ দেওয়ার কথা বললেই স্ত্রীর কপালে জুটত শারীরিক নির্যাতন৷ এরপরেই নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে স্বামীর পরিচয় সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে শুরু করেন রাধিকা। চলতি মাসের প্রথম দিকে তিনি জানতে পারেন দেবেশ আদতে কোন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকই নন। সম্পূর্ণ ভুয়ো পরিচয় দেখিয়ে বিয়ে করেছিল সে। একইসঙ্গে, চিত্র পরিচালকের পরিচয়টিও সম্পূর্ণ মিথ্যা। গত শুক্রবার বিধাননগর দক্ষিণ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন মহিলা। তার অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নামে পুলিশ।
[আরও পড়ুন: জল্পনায় ইতি! ইস্তফার সিদ্ধান্ত থেকে সরে দাঁড়ালেন সৌমিত্র খাঁ]
সূত্রের খবর, তদন্তে উঠে এসেছে যে, অভিযোগকারিণী এবং অভিযুক্ত দু’জনেই পূর্ব বিবাহিত ছিলেন। তবে দুজনেরই বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। মহিলার প্রথম পক্ষের একটি ১৬ বছরের মেয়ে রয়েছে বলে পুলিস সূত্রে খবর। মহিলার অভিযোগ, নানান সময় ওই নাবালিকাকে যৌন নির্যাতন করতো অভিযুক্ত। সংশ্লিষ্ট বিষয়টি পুলিসকে জানিয়েছেন তিনি। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে পকসো আইনেও মামলা রুজু করেছে বিধাননগর দক্ষিণ থানা। তদন্তে আরও একটি বিষয় সামনে এসেছে। পুলিস জানতে পেরেছে, নিজেকে চিত্র পরিচালক পরিচয় দিয়ে একাধিক মহিলার সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল অভিযুক্ত। একইসঙ্গে, সংশ্লিষ্ট মহিলাদের থেকে ভয় দেখিয়ে টাকাও নিত বলে অভিযোগ উঠেছিল।