সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গণপরিবহণে চড়ার অভ্যাসে অনেক দিন আগেই ছেদ পড়েছিল। নীল বাতির গাড়িই ছিল দস্তুর। কিন্তু বিধি বাম, হাই কোর্টের নির্দেশ রক্ষায় সরকারি বাসে হাজির হতে হল রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের যুগ্ম সচিবকে। শুধুমাত্র তিনিই নন। হাই কোর্টের নির্দেশ পালনে ট্যাক্সি করে আদালতে হাজির হলেন হাওড়া জেলা পুলিশ সুপার (গ্রামীণ)।
তবে কোন মামলার প্রেক্ষিতে তাঁদের এই অবাক হাজিরার নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট? আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, তিন দশক কেটে গেলেও প্রাপ্য ‘ফ্যামিলি পেনশন’ থেকে বঞ্চিত হাওড়ার মৃত কনস্টেবলের পরিবার। এত দিনেও মৃত পুলিশকর্মীর পরিবারের পেনশন না মেলায় হাওড়া জেলা পুলিশের ভূমিকায় বিরক্ত কলকাতা হাই কোর্ট। আর তাতেই বিরক্তি প্রকাশ করে বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি মোহাম্মদ শব্বর রসিদির ডিভিশন বেঞ্চ স্বরাষ্ট্র দফতরের যুগ্ম সচিব এবং হাওড়া গ্রামীণ জেলার পুলিশ সুপারকে তলব করে।
[আরও পড়ুন: ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে দলে নেই কেন রিঙ্কু? নির্বাচকদের তোপ প্রাক্তন ভারতীয় ওপেনারের]
বৃহস্পতিবারই এই মামলার শুনানিতে বিচারপতি জানিয়ে দেন, ওই আধিকারিকদের আসতে হবে নিজেদের খরচে, নেওয়া যাবে না সরকারি পরিবহণ। ওই মৌখিক নির্দেশে তড়িঘড়ি শুক্রবার সকালেই সরকারি গাড়ির বদলে বেসরকারি বাসে চড়ে হাই কোর্টে আসেন স্বরাষ্ট্র দফতরের যুগ্ম সচিব। আর একই নির্দেশে, সরকারি গাড়ির বদলে নিজে ভাড়া করা গাড়িতে ব্যক্তিগত হাজিরা দিতে আসেন হাওড়া গ্রামীণের পুলিশ সুপার। এদিন ওই অফিসারদের কে, কীভাবে আদালতে এসেছেন সেটা জানতে চায় ডিভিশন বেঞ্চ। যুগ্ম সচিব জানান, তিনি সরকারি বসে চড়ে এসেছেন। বিচারপতি তাঁর কাছে বাসের টিকিট দেখতে চান। তা অবশ্য তিনি দেখাতে পারেননি। আর আদালতে উপস্থিত এসপি জানান, তিনি বেসরকারি ট্যাক্সি ভাড়া করে এসেছেন।
তবে তাঁরা এলেও এদিনও কোনও সুরাহা পেলেন না বঞ্চিত পুলিশ কর্মীর পরিবার। তাই আগামী সোমবার মামলার পরবর্তী শুনানিতে এনিয়ে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের ঊর্ধ্বতন অফিসারের কাছে জবাবদিহি তলব করেছে হাই কোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি মোহাম্মদ শব্বর রসিদির ডিভিশন বেঞ্চ।
আদালতে মৃত পুলিশকর্মী কপিল দে প্রসাদ পাঠকের পরিবারের আইনজীবী সঞ্জীব শেঠের অভিযোগ, “১৯৯১ সালে কনস্টেবলের মৃত্যুর পর থেকে ফ্যামিলি পেনশন বন্ধ হয়ে যায়। এ দরজা থেকে ও দরজায় ঘুরতে হয়েছে কিন্তু ফ্যামিলি পেনশন মেলেনি। প্রথমে সিভিল কোর্ট, পরে স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ট্রাইব্যুনালের দ্বারস্থ হন পুলিশ কর্মীর স্ত্রী ভাগমানো দেবী। সেখানের নির্দেশে খুশি না হয়ে বাধ্য হন হাই কোর্টে আসতে।” সঞ্জীব বাবুর দাবি, “এর আগে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীও এনিয়ে নির্দেশ দেন। কিন্তু সেই নির্দেশ মানা হয়নি বলে অভিযোগ।” এদিন আদালতে উপস্থিত আমলাদের কাছে ওই পুলিশকর্মীর পরিবার পেনশন পায়নি কেন তা জানতে যায় আদালত, একই সঙ্গে কেনও এতদিন ওই পরিবারকে ফ্যামিলি পেনশন দেওয়া হয়নি সে প্রসঙ্গেও প্রশ্ন তুলে কাটমানি নিয়ে এসপিকে কটাক্ষ করে আদালত। রাজ্যের আইনজীবীকে আদালতের নির্দেশ, এই অফিসারদের সঙ্গেই স্বরাষ্ট্র দফতরের ঊর্ধ্বতন অফিসারকেও সোমবার হাজিরা দিয়ে কৈফিয়ত দিতে হবে কেন এতদিন পেনশন দেওয়া হয়নি। এসপি-সহ অফিসারদেরও সেদিন হাজির থাকতে হবে বলে জানিয়েছে আদালতে। একই সঙ্গে রাজ্যের কৌঁসুলিকে ওইদিন জানাতে হবে, কর্তব্যে গাফিলতির জন্য এই অফিসারদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ করবে রাজ্য।