অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, কালনা: বাবার সঙ্গে মাঠের কাজে হাত লাগাতে হয়েছে। তার মাঝেও পড়াশোনায় অবহেলা করেনি। মাধ্যমিক (Madhyamik Exam 2022) পরীক্ষায় নজরকাড়া রেজাল্ট করল কালনার সেই কিরণ ঘোষ। তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৪৬। দারিদ্র্যতার প্রতিকূলতাকে কাটিয়ে তার এই সাফল্যে খুশি স্কুলের তার পরিবার, এলাকার মানুষজন ও স্কুলের শিক্ষকরা।
কালনা (Kalna) ১ ব্লকের আটঘরিয়া-সিমলন পঞ্চায়েতের সারগড়িয়া এলাকার বাসিন্দা কিরণ ঘোষ নামে ওই ছাত্র। সে সোন্দলপুর বৃন্দাদেবী বিদ্যামন্দির স্কুলের ছাত্র। তার বাবার এক বিঘা জমি রয়েছে। অন্যের জমিতেও চাষ করেন তিনি। কিন্তু তাতেও সংসার চালানো দায়। ফলে মাঝে মধ্যে দুধও বিক্রি করেন বাবা সুনীল ঘোষ। কিরণও পড়াশোনার ফাঁকে সাহায্য করে বাবাকে। সেই পড়ুয়াই মাধ্যমিকে বাংলায় পেয়েছে ৯৬, ইংরাজিতে ৭৩, অংকে ৯৫, ভৌতবিজ্ঞানে ৯৫, জীবনবিজ্ঞানে ৯৮, ইতিহাসে ৯০ ও ভূগোলে ৯৯। এত ভাল নম্বর পেয়েও পাশ করেছে পড়ুয়া, তাতেও চিন্তিত তার পরিবার।
[আরও পড়ুন: চলবে ইন্টারলকিংয়ের কাজ, আগামী একমাস ব্যান্ডেল শাখায় বাতিল ১০ টি লোকাল ট্রেন]
কিরণ জানায়, “বাবার এক বিঘা জমি রয়েছে। অন্যের জমিও ঠিকা নিয়েও চাষ করে।” স্বাভাবিক কারণেই দিন আনা দিন খাওয়া সংসারে ও তার পড়াশোনার খরচের সামাল দিতে অন্যের জমিতে চাষ করার পাশাপাশি দুটি গরুকেও পোষে তার বাবা। দুধ বিক্রিও করতে হয় কখনও। সময় পেলেই বাবাকে আমিও মাঠের কাজে সহযোগিতা করি। দুধও বিক্রি করি।”
বাবা সুনীল ঘোষ বলেন, “নিজের এক বিঘা ও অন্য জনের এক বিঘা জমি চাষ করে সংসার চালাই। তার উপর শারীরিক অসুস্থতাতেও চিকিৎসার প্রয়োজনেও টাকা লাগে। গরীব হয়ে ছেলের উচ্চশিক্ষার খরচ কিভাবে সামাল দেব বুঝে উঠতে পারছি না।” ভবিষ্যতে গবেষক হতে চায় কিরণ। তাই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে সহযোগিতার আরজি জানিয়েছে ছাত্র। সে জানায়,“ভূগোল বিষয়ে পড়াশোনা-সহ গবেষনা করতে চাই। উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হতে চাই। তার জন্য অর্থেরও প্রয়োজন। জানি না কতদূর কী হবে। কেউ সাহয্যের হাত বাড়িয়ে দিলে ভাল হয়।” স্কুলের প্রধান শিক্ষক অভিজিৎ পাল বলেন, “গরীব পরিবারের ছেলে কিরণ ঘোষ খুবই মেধাবী ছাত্র। ওর রেজাল্টে আমরা খুবই খুশি।” এলাকার বিধায়ক তথা মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, “ওর পাশে আমরা আছি। ভরতি ও পড়াশোনার ব্যাপারে ওই ছাত্রকে সাহায্য করা হবে।”