সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: নিম্নচাপের প্রভাবে শুক্রবার রাত থেকেই টানা বৃষ্টিতে ভিজছে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলি। শনি পেরিয়ে রবিবারও আকাশের মুখভার। লাগাতার বৃষ্টি হয়েই চলেছে। ফলে, কোথাও চাষের জমি, কোথাও লোকালয় চলে গিয়েছে জলের তলায়। বন্যা হওয়ার আশঙ্কা করছেন বাসিন্দারা। টানা বৃষ্টির জেরে বিশ্বকর্মা পুজোয় ফুলের দাম হতে পারে আকাশছোঁয়া।
শুক্রবার রাত থেকে শনিবার রাত পর্যন্ত টানা বৃষ্টিতে বনগাঁ পুরসভার একাধিক এলাকা-সহ বনগাঁ, বাগদা, গাইঘাটার বিস্তীর্ণ চাষের জমিতে জল জমেছে। এর ফলে ফসল নষ্টের আতঙ্কে ভুগতে শুরু করেছেন কৃষকরা। পুরসভার নয় নম্বর ওয়ার্ডের একাধিক এলাকা, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে দীনবন্ধু নগর, তাবু কলোনি-সহ একাধিক এলাকায় জলবন্দি বাসিন্দারা। বিদ্যুৎ না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে মোটর চালিয়ে নিকাশির কাজও। ফলে, একাধিক জায়গা জলমগ্ন হয়ে রয়েছে। সাপ, পোকামাকড়ের আতঙ্কে ভুগছেন স্থানীয়রা। ধারাবাহিক বৃষ্টিতে বন্যা হওয়ার শঙ্কা করছেন বাসিন্দারা। ভারী বৃষ্টিতে বনগাঁ, বাগদা, গাইঘাটার একাধিক চাষের জমিতে জল জমেছে। বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যান ও কাউন্সিলর-সহ পুরকর্মীরা বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে পরিস্থিতি ঘুরে দেখছেন। খোঁজ নেন ব্লক অফিসের আধিকারিকরাও।
অন্যদিকে, গত দুদিন ধরে অবিরাম বৃষ্টি, সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়ায় নষ্ট হয়েছে বহু ফুল। এই অবস্থায় মঙ্গলবার বিশ্বকর্মা পুজো। এই পুজোয় ফুলের দাম আকাশছোঁয়া হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন হাওড়ার ফুলচাষিরা। বিশ্বকর্মা পুজোয় দোপাটি, রজনী, গাঁদা-সহ সব ধরনের ফুলই দরকার হয়। তবে গাঁদার চাহিদা বেশি। বিশেষ করে হলুদ গাঁদা ফুলের মালার তো ব্যাপক চাহিদা থাকে। প্রতিবছর এই সময় ফুলচাষিরা পুজোর এক সপ্তাহ আগে থেকে ফুল তুলে তা হিমঘরে রেখে দেন। আর পুজোয় তা সেখান থেকে বের করেন। তাছাড়া ফুল টাটকা থাকার জন্য দিন দুই-তিনেক আগে সেই ফুল বের করে অন্যত্র বিপণন করেন ফুলচাষিরা। এতে তাঁরা কিছুটা বাড়তি রোজগার করতে পারেন। হাওড়ার বাগনান ২ নম্বর ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকার ফুলচাষিরা মূলত এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এছাড়া এক নম্বর ব্লকের কয়েকটি পঞ্চায়েতেও ফুলচাষিরা রয়েছেন। বৃষ্টির কারণে চাষিরা গত দুদিন ধরে ফুল সংগ্রহ করতে পারছেন না। ফুল সংগ্রহের এই ঘাটতি থেকে যাচ্ছে।
বিশ্বকর্মা পুজোর ফুলের বাজারে এর প্রভাব পড়বে, এমনটাই জানিয়েছেন সারা বাংলা ফুলচাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতির রাজ্য সম্পাদক নারায়ণ নায়েক। শুধু তাই নয়, বৃষ্টির জন্য ফুলের পাপড়িতে দাগও হয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টি থেমে গেলেও সেই ফুল বাজারজাত করার আগে দাগওয়ালা ফুল বাদ দিতে হবে। এতেও ফুলের জোগান কমে যাবে। স্বাভাবিকভাবে ফুলের দাম বাড়বে। একই কথা জানিয়েছেন বাগনানের বাঁকুড়দহ গ্রামের ফুলচাষি পুলক ধাড়াও। সমস্যায় পড়েছেন প্রতিমা শিল্পীরাও। বৃষ্টির ফলে প্রতিমা শিল্পীরা ঠিকঠাক করে মূর্তি গড়তে পারছেন না। বৃষ্টি পড়ে অনেক প্রতিমার কিছু অংশ ধুয়ে যাচ্ছে। ফলে বাইরে থেকে সব প্রতিমাকে নির্দিষ্ট জায়গায় তুলে এনে রাখতে হচ্ছে। কোথাও আবার ত্রিপল ঢাকা দিয়ে রাখতে হচ্ছে। এতেও সব প্রতিমাকে সুরক্ষিত রাখা যাচ্ছে না বলে দাবি প্রতিমা শিল্পীদের। যার জেরে সময়ে প্রতিমা ডেলিভারি দেওয়া নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন বাউড়িয়া থানার বুড়িখালির তাপস রুইদাস। আমতা থানার শেরপুরের প্রতিমা শিল্পী গোপাল পালও সমস্যায় পড়েছেন। বাগনানের প্রতিমা শিল্পী পলাশ পুরকাইত জানান, কোনওরকমে ত্রিপল টাঙিয়ে বিশ্বকর্মার প্রতিমা গড়ার কাজ করছেন। অন্যদিকে, লাগাতার বৃষ্টিতে হুগলি সদর শহর চুঁচুড়া-সহ ব্যান্ডেলের একাধিক জায়গা অনেকাংশে প্লাবিত হয়েছে। নিম্নচাপের প্রভাব পড়েছে উপকূলে।