টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: বাঁকুড়ার ওন্দা ব্লকের রামসাগরের মাছের ডিম থেকে উৎপাদিত পোনার দেশজোড়া বাজার। এখানে মাছের ডিম ফুটিয়ে পোনা তৈরি করে সেই ছোট মাছ প্যাকেটবন্দি করে দেশের নানা প্রান্তে চলে যায়। গোটা দেশের মাছের বাজারের প্রায় ৬০ শতাংশই এই রামসাগর নিয়ন্ত্রণ করে বলে জানাচ্ছেন প্রশাসনিক আধিকারিকেরা। কিন্তু চলতি বছরের স্বল্প বৃষ্টির জন্য দেশজুড়েই রামসাগরের পোনার চাহিদা কমেছে।
জেলা মৎস্য দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই রামসাগর এলাকায় ৩২২টি মাছের হ্যাচারি রয়েছে। গোটা রামসাগরের বাসিন্দাদের অর্থনীতির বেশির ভাগই এই ডিমপোনা উৎপাদনের উপর নির্ভরশীল। ফি বছর মার্চ থেকে আগস্ট মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত মাছের ডিম ফুটিয়ে পোনা তৈরি করার একেবারে সুবর্ণ সময়। বছরের এই সময়ের জন্যই মুখিয়ে থাকেন ব্যবসায়ীরা। সপ্তাহ দুয়েক আগেই অবশ্য এই মরসুম শেষ হয়ে গিয়েছে। যদিও চলতি বছর শেষপর্বে ব্যবসা অনেকটাই বেড়েছিল। জানা গিয়েছে, এই কয়েক মাসে ব্যবসার জন্য বছরভর হাড়ভাঙা খাটুনি খাটেন রামসাগরের ডিম পোনা ব্যবসায়ীরা। ডিম পোনা ফোটানোর জন্য বছরভর স্থানীয় বিভিন্ন পুকুরের পরিচর্যা করে স্ত্রী ও পুরুষ মাছ লালন-পালন করেন ব্যবসায়ীরা। তার জন্য প্রয়োজনীয় নানান ওষুধ, বিপুল পরিমাণ মাছের খাবার এবং ইলেকট্রিক যন্ত্রাংশ ও শ্রমিক-সহ বিপুল পরিমাণ খরচ খরচা করতে হয়।
অস্তিত্ব সংকটে সরপুঁটি। ফাইল ছবি
[আরও পড়ুন: সময় বেঁধে দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট, পালটা রাজ্যকে ডেডলাইন জুনিয়র ডাক্তারদের]
রামসাগরের ডিমপোনা ব্যবসায়ী শিবদাস নন্দীর কথায়, ‘‘বছরভর বিভিন্ন পুকুরে ‘ব্রুডার’ অর্থাৎ এক থেকে পাঁচ কিলোর মধ্যে স্ত্রী ও পুরুষ মাছের প্রতিপালন করা হয়। ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ওই ব্রুডারগুলিকে হ্যাচারিতে ছেড়ে দেওয়া হয়। হ্যাচারিতে ওই ব্রুডারগুলিকে ছাড়ার পরেও জলে বিভিন্ন ওষুধ দেওয়া হয়। যেখানে একটি হ্যাচারির ভাড়া বাবদ খরচা হয় ৪ হাজার টাকা সেখানে একটি হ্যাচারিতে ৮০ থেকে ১০০ বাটি ডিম পোনার উৎপাদন হয়। চলতি বছর ডিমপোনা বিক্রি হয়েছে সাড়ে সাতশো থেকে ৮০০ টাকায়। তবে মরশুমের শুরুতে বৃষ্টি না হওয়ায় পুকুর-সহ বিভিন্ন জলাশয়ে জল তলানিতে থেকে যাওয়ার কারণে ডিম পোনার চাহিদা ছিল না বললেই চলে। কারণ কোনওভাবেই এই ডিম পোনা সংরক্ষণ করা যায় না। তিন দিনের মধ্যে মাছের ডিম পোনা নষ্ট হয়ে যায়। চাহিদা না থাকায় ডিম পোনার দামও দ্রুত পড়ে যায় বাজারে।
রামসাগর অঞ্চল মাছ ও ডিমপোনা উৎপাদন কো-অপারেটিভ সোসাইটির সম্পাদক মাধব পাল বলেন, ‘‘চলতি বছর ৪০ থেকে ৫০ কোটি টাকার মতো ব্যবসা করেছেন রামসাগরের ডিম পোনা ব্যবসায়ীরা।’’ যদিও ২০১৯ সাল থেকে এই কো অপারেটিভ সোসাইটির পরিচালন কমিটির নির্বাচন হয়নি। ফলে নানান সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন এই কো-অপারেটিভ সোসাইটির সদস্যরা। জানা গিয়েছে, বর্তমানে এই কো-অপারেটিভ সোসাইটির সঙ্গে প্রায় আড়াইশো জন ডিম পোনা ব্যবসায়ী যুক্ত।