এই সময়ে বাদামের জমিতে যে রোগগুলি প্রধানত দেখা যায়, তার মধ্যে টিক্কা রোগ অন্যতম। টিক্কা রোগ দুই প্রকারের হয়, যাকে আমরা পাতার জলদি দাগ ও নাবি দাগ বলি। এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি হলে ফলনের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। এই রোগের প্রতিকার নিয়ে লিখেছেন বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ব বিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক শুভেন্দু যশ।
বাদামের পাতার জলদি দাগ:
আমাদের রাজ্যে চিনা বাদামের প্রধান রোগগুলির মধ্যে এটি অন্যতম। রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি হলে ১৫-৫৯% ফলনে ক্ষতি হতে পারে। সাধারণত বীজ বোনার ৩০ দিন পর নিচের দিকের পাতায় এই রোগ শুরু হয়। প্রাথমিক অবস্থায় ক্ষুদ্র গোলাকৃতি, ১-১০ মিমি. ব্যাসের হলুদ দাগ নিচের পাতার উপরের তলে দেখা যায়। পরবর্তীকালে এই দাগ বাদামি বর্ণের ও চারদিক হলুদ রঙ দিয়ে ঢাকা থাকে। রোগাক্রান্ত নিচের পাতা কালো হয়ে ঝরে যায়। বাদামি গোলাকার দাগ আস্তে আস্তে গাছের মধ্যবর্তী ও উপরের পাতায় দেখা যায়।
বাদামের পাতার নাবি দাগ :
ছত্রাকঘটিত এই রোগ বীজ বোনার ৬০ দিন পর থেকে ফসল তোলা পর্যন্ত দেখা যায়। এই রোগে ঘন বাদামি বা কালো রঙের গোলাকার ১-৫ মিমি ব্যাসের দাগ পাতার নিচের তলে সৃষ্টি হয়। পরবর্তীকালে পাতার বাদামি দাগ একে অপরের সঙ্গে মিশে পাতার বেশির ভাগ অংশ কালো হয় ও পাতা ঝরে পড়ে। নাবি টিক্কা রোগে পাতার বাদামি দাগের চারিদিকে হলুদ রঙ দেখা যায় না। গাছ দুর্বল হওয়ার কারণে শুঁটির ফলন কম হয়। রোগের প্রকোপ বেশি হলে এই দাগ কাণ্ড বা শাখাপ্রশাখাতেও হতে পারে।
[আরও পড়ুন: পুরনো চাল ভাতে বাড়ে! নোনা মাটিতে হারিয়ে যাওয়া ধানের ফলন বাড়াতে জোর কৃষিদপ্তরের]
এই রোগের প্রাথমিক উৎসগুলি হল:
১। রোগাক্রান্ত মরা গাছের অবশিষ্টাংশ।
২। মাটিতে পড়ে থাকা বাদাম বীজ থেকে পরবর্তী মরশুমে স্বজাত বাদাম গাছের সংক্রমণ থেকে।
৩। রোগাক্রান্ত বাদামের খোসা।
৪। সংক্রমিত বীজের মাধ্যমে।বাতাসে উপস্থিত ছত্রাকের রেণু, বৃষ্টির ফোঁটা ইত্যাদির মাধ্যমে এক গাছ থেকে অন্য গাছে ছড়িয়ে পড়ে। দিনের তাপমাত্রা ২৫-৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড দীর্ঘ সময় পাতায় শিশির, ৮০ শতাংশের বেশি আপেক্ষিক আর্দ্রতা থাকলে এই রোগ বেশি হয়।
রোগের প্রতিকার :
• রোগাক্রান্ত ফসলের অবশিষ্টাংশ, আগাছা ও স্বজাত বাদাম গাছ পড়ে থাকা বাদাম বীজ থেকে পরবর্তী মরশুমে জন্মায়, সেগুলি নষ্ট করতে হবে।
• বাদামের সঙ্গে অড়হর, কলাই, বাজরা, জোয়ার, বরবটি ইত্যাদি ফসল অন্তর্বর্তী ফসল হিসাবে চাষ করলে পাতার দাগ কম হয়।
• প্রতিরোধী জাতের চাষ করলে রোগের প্রকোপ কম হয়।
• জলদি পাতায় দাগ : জওহর বাদাম-২৩, প্রতাপ মুংফলি- ১.২, স্মৃতি, ভিআরআই-২, বিএইউ ১৩।
• পাতার নাবি দাগ : টিজি-৩৭এ, প্রতাপ মুংফলি- ১, ২, গিরনার-২, জওহর বাদাম- ৩, কাদিরি ৪, ৫, ৭, ৮ ইত্যাদি।
• ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজশোধন করলে পাতায় জলদি দাগ, নাবি দাগ, অল্টারনারিয়া পাতায় দাগ ইত্যাদি রোগের প্রাদুর্ভাব কম হয়।