সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: কথায় আছে, সবুরে মেওয়া ফলে। আর সেই সবুর করেই বন্ধ্যা জমিতে ফলছে আপেল, লেবু, কলা, মৌসম্বির মতো ফল। তার জন্য চার বছর ধরে প্রতিটি গাছের কঠোর পরিচর্যা করতে হয়েছে। এখন সেই অনুর্বর জমিতে আম, কাঁঠাল ফলিয়ে সাফল্য অর্জন করেছে দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকের (Faridpur-Durgapur) প্রতাপপুর গ্রাম পঞ্চায়েত। কৃষিতে একপ্রকার অসাধ্যসাধন করে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছে তারা। শুধু তাই নয়, অনুর্বর কাঁকুরে জমির উপর ফলনের এই ‘পাইলট প্রোজেক্ট’ অন্যান্য ব্লকের কৃষকদের দিশা দেখাচ্ছে।
প্রতাপপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার অধিকাংশ জমিই অনুর্বর। সেসব জমিতে কেবল মোরাম রয়েছে। বন্ধ্যা এই জমি চাষবাসের জন্য একেবারেই অনুকূল নয়। প্রায় চার বছর আগে এই পঞ্চায়েতের বড়গড়িয়া এলাকায় প্রায় ১০ বিঘা কাঁকুরে জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে ফলচাষের পাইলট প্রোজেক্ট নেওয়া হয়। ফল থেকে ফুল-বহু মূল্যবান গাছ লাগানো হয় ওই জমিতে।
[আরও পড়ুন: মিটল অভাব! রোগীর প্রাণ বাঁচাতে কেরল থেকে SSKM-এ এল বিরল বোম্বে O নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত]
তার মধ্যে রয়েছে ৫০টি আপেল গাছ, ৩০০টি বিভিন্ন প্রজাতির আম গাছ-সহ কয়েক হাজার গাছ। প্রায় চার বছর কঠোর পরিচর্যার পর এখন প্রতিটি গাছ ফলন দিতে শুরু করেছে। আমের মরশুমে ভাল আমও ফলেছিল। মহিলা-পুরুষ নিয়ে প্রায় ১২ জন কর্মী ওই বাগানের গাছ পরিচর্যা করে স্থায়ী রোজগারও করছেন। ওই বাগানের ফল থেকে সবজি পঞ্চায়েতের শিশুশিক্ষা কেন্দ্রগুলিতে বিনামূল্যে দেওয়া হয়। শিশুরাও পুষ্টিকর খাবার পায়। এছাড়াও বেশকিছু ফল বিক্রি করে পঞ্চায়েতের রাজস্ব লাভ হচ্ছে বলেও জানা গিয়েছে।
বাগান পরিচর্যার দায়িত্বে থাকা সুজয় পাল বলেন, “কাঁকুরে জমিতে মাটি নেই বললেই চলে। সেই মাটিতে গাছ পরিচর্যা করে তোলাটা আমাদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। কঠোর পরিশ্রম করে আজ প্রায় অধিকাংশ গাছে ফলন শুরু হয়েছে। আপেল গাছগুলিও প্রাপ্তবয়স্ক হয়েছে। এই বছরেই ফলন হবে বলে মনে করছি।” প্রতাপপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের কাছে এই মাটিতে নির্মল উদ্যান প্রকল্প করা বিশাল চ্যালেঞ্জ ছিল। এখন এই প্রোজেক্ট দেখতে আসানসোল, রূপনারায়ণপুর-সহ একাধিক ব্লকের কৃষকরা এখানে আসছেন। বাগানের উৎপাদিত ফল ও সবজি এই অঞ্চলের স্কুলগুলিতে মিড-ডে মিল হিসাবেও দেওয়া হয়। স্কুল বন্ধ থাকায় স্থানীয় বাজারে সেগুলি বিক্রি করা হচ্ছে। তা থেকে পঞ্চায়েতের সামান্য আয় হয়ে থাকে।”