shono
Advertisement

ধান জমিতে জৈব সার হিসাবে অপরিহার্য অ্যাজোলা, জেনে নিন ভাসমান জলজ ফার্ন চাষের পদ্ধতি

অ্যাজোলা ব্যবহারে মাটির উর্বরতা শক্তি অনেক গুণ বেড়ে যায়।
Posted: 02:39 PM Jan 11, 2023Updated: 02:39 PM Jan 11, 2023

পুষ্টিগুণে ভরপুর অ্যাজোলা। কৃষি ক্ষেত্রে জৈব সার হিসাবে ব্যবহার করা হয়। চাষের খরচও অনেক কম হয়। আবার পশুপালনেও অ্যাজোলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে থাকে। গবাদি পশুকে খাওয়ালে দুধের পরিমাণ বাড়ে। মাংসের উৎপাদনও বেশি‌ হয়। হাঁস-মুরগিকে খাওয়ালেও ভাল ফল পাওয়া যায়। আবার অ্যাজোলা চাষ করে বাজারজাত করে বিকল্প আয়েরও সুযোগ রয়েছে। লিখেছেন মেঘালয়ের ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির গ্রামোন্নয়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সৈকত মজুমদার।

Advertisement

অ্যাজোলা কি? অ্যাজোলা ভাসমান জলজ ফার্ন, যা আমরা প্রধানত জৈব ও সবুজ সার হিসাবে চাষের জমিতে প্রয়োগ করে থাকি। অ্যাজোলাতে প্রচুর পরিমাণ নাইট্রোজেন থাকে। তার ফলে ধান চাষের জমিতে ইউরিয়া সারের পরিবর্তে অ্যাজোলা জৈব সার হিসাবে ব্যবহার করা যায়। অ্যাজোলা ব্যবহার করতে মাটির উর্বরতা শক্তি অনেক গুণ বেড়ে যায়। অপর দিকে ইউরিয়া সারের প্রয়োগে মাটির উর্বরতা শক্তি কিছুটা হ্রাস পায়।

ধান চাষের জমিতে অ্যাজোলা
ধান চাষ এর ভূমিকা অনেক। ধান রোয়ার দিন ৭-১০ পর থেকে সেই জমিতে অ্যাজোলা চাষ করলে আগাছা নিয়ন্ত্রণ করে। ধান গাছের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এছাড়াও জলের আর্সেনিক নিয়ন্ত্রণ করে ভাল ফলন উৎপাদনে সাহায্য করে।

গবাদি পশু পালনে অ্যাজোলা
সাধারণ ঘাসের থেকে এতে ১০ গুন বেশি পুষ্টি আছে। গরু, ছাগল, শুয়োর, ভেড়া, খরগোশ, হাঁস ও মুরগির বিকল্প খাদ্য হিসাবে অ্যাজোলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন যদি চাষিভাইরা ২-৩ কেজি অ্যাজোলা বিচুলি বা দানা খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে গবাদি পশুদের খাওয়ালে খুব সহজেই তারা খুব ভাল পরিমাণ দুধ ও মাংস পেতে পারেন। দুধের উৎপাদন ২০-২৫ শতাংশ বেড়ে যাবে। অ্যাজোলা খাইয়ে বাড়ির হাঁস-মুরগির ওজন প্রায় ১০-১২ গুণ বাড়ানো যেতে পারে। মাছের ভাল উৎপাদনে এর ভূমিকা অনেক। দিনে দুবার চাষিরা অ্যাজোলা খাবার হিসাবে দিলে মাছের ওজন বাড়বে ও মাছের খাবার খরচ অনকে কমে যাবে।


জৈব সার প্রস্তুত করতে অ্যাজোলা
ভার্মিকম্পস্ট তৈরি করতে অ্যাজোলা সাহায্য করে। চাষিভাইরা কেঁচো খাবার হিসাবে অ্যাজোলা ব্যবহার করতে পারেন। এতে তাঁরা খুব ভাল ফল পাবেন।

[আরও পড়ুন: উত্তর দিনাজপুরের বুনো ধান থেকেই উৎপত্তি কালো চালের, সংরক্ষণের দাবি গবেষকের]

প্রাণীখাদ্য হিসাবে অ্যাজোলার গুরুত্ব 

  • প্রোটিনে ভরপুর এই অ্যাজোলা, অ্যামিনো অ্যাসিড, ভিটামিন এ, বি-১২ ও বিটা ক্যারোটিনে সমৃদ্ধ।
  • এছাড়া ও প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পটাসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে।
  • গবাদি পশুর খাদ্য হিসাবে অ্যাজোলার জুড়ি মেলা ভার। গরুর বেশি দুধ উৎপাদনে এর ভূমিকা অপরিহার্য।
  •  হাঁস, মুরগি পালনে অ্যাজোলা বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ভাল ডিম ও মাংস উৎপাদনে সাহায্য করে।
  •  ছাগল, শুয়োর চাষেও এর ভূমিকা অপরিহার্য। ভাল মাংস পেতে সাহায্য করে।
  •  মাছের খাবার হিসাবে অ্যাজোলা খুব ভাল।

প্রাণী পালকদের কাছে বিশেষ ভাবে আবেদন তাঁরা এই অ্যাজোলা চাষ করবেন ও এই চাষের মধ্যে দিয়ে তাঁরা গবাদি পশু চাষে সাফল্য পাবেন।

অ্যাজোলা চাষের উপকরণ:

  • অ্যাজোলা
  •  সুপার ফসফেট
  •  ইট
  •  ভাল পলিথিন
  •  বেলে বা দোঁয়াশ মাটি
  •  গোবর
  •  জল

অ্যাজোলা বেড প্রস্তুতকরণ:

  • যেখানে অ্যাজোলা বেড প্রস্তুত করা হবে সেই জায়গা আগে ভাল করে কোদাল দিয়ে সমান করে নিতে হবে।
  •  খুব ভাল করে খেয়াল রাখতে হবে যাতে কোনও উঁচু নিচু না থাকে।
  • এখন একটি ইট দিয়ে জায়গা বা ছোট চৌবাচ্চা বানাতে হবে যেটার উচ্চতা কযপক্ষে ২১ ইঞ্চি হতে হবে, প্রস্থ ১.৫ মিটার ও দীর্ঘ ২.৫ মিটার হলে ভাল অ্যাজোলা উৎপন্ন হয়।
  • খুব সহজেই এখানে অ্যাজোলা চাষ করতে পারেন।
  • চাষী ভাইরা চাইলে একের বেশি অ্যাজোলা ট্যাঙ্ক বা চৌবাচ্চা বা জলাধার বানাতে পারেন। যত বেশি ট্যাঙ্ক তত বেশি বেশি অর্থ উপার্জনের সুযোগ।
  • আমরা সিমেন্ট দিয়েও এই ট্যাঙ্ক বানাতে পারি।
  • এবার তৈরি হয় কৃত্রিম জলাধারটি ভাল করে মোটা প্লাস্টিক দিয়ে ডেকে দিতে হবে।
  • খেয়াল রাখতে হবে প্লাস্টিকটি যাতে ভাল মানের হয়।
  • ৩০-৩৫ কেজি বেলে বা দোঁয়াশ মাটি দিয়ে ভাল করে প্লাস্টিকের উপর ছড়িয়ে দিতে হবে।
  • এই মাটির আস্তরণটা যাতে মোটামুটি ৩ ইঞ্চি হয় সেটা স্কেল দিয়ে মেপে নিতে হবে।
  •  এবার ৫-৬ কেজি ভাল গোবর নিয়ে জল দিয়ে তরল করে নিতে হবে।
  •  তরল গোবর নিয়ে সেই বিছানো মাটির উপর ভাল করে সমানভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে।
  •  এবার জল দিতে হবে যার pH মাত্রা ৫-৬ হতে হবে। তাহলে ভাল উৎপাদন সম্ভব।
  •  এমনভাবে জল দিয়ে ভর্তি করতে হবে যাতে জলাধারটি ৭-১০ সেন্টিমিটার জলে পূর্ণ থাকে।
  •  এখন অল্প পরিমাণ সুপার ফসফেট জলে মেশাতে হবে, সঙ্গৈ ১-২ কেজি অ্যাজোলা ছেড়ে দিতে হবে।
  •  অ্যাজোলা ট্যাঙ্ক তৈরি হয়ে গেছে।
  •  খুব সহজেই ও তাড়াতাড়ি অ্যাজোলা বংশবৃদ্ধি করে।
  •  ঠিক চার থেকে পাঁচ দিনের মাথায় এর উৎপাদন পেতে শুরু হবে।
  •  এরপর থেকে প্রতিদিন প্রতি বর্গ মিটার থেকে ৩০০ গ্রাম মতো অ্যাজোলা পাওয়া যাবে।

অ্যাজোলার বাজার মূল্য

  •  বাড়িতে অ্যাজোলা চাষে খুব বেশি খরচ নেই। খুব অল্প পুঁজিতে বা বিনা পুঁজিতে চাষীরা এই চাষ করতে পারেন। চাষীরা বাড়িতে বা খামারে ছোট ছোট ট্যাঙ্ক বানিয়ে অ্যাজোলা চাষ করতে পারেন।
  •  সারের দোকানে অ্যাজোলা পাওয়া যায়। এর দাম ও বেশি। মোটামুটি ১৫০ -২০০ টাকা কেজি দরে অ্যাজোলা পাওয়া যায়। অনলাইনে এর দাম খুব বেশি।
  •  চাষিরা বাড়িতে অ্যাজোলা চাষ করে সেটা বাজারে বিক্রি করে প্রতি কেজিতে কম করে ৬০ থেকে ৭০ টাকা লাভ করতে পারেন, যেটা তাঁদের অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। অনলাইনে প্রায় ১৫০-২০০ টাকা দরে পাওয়া যায়।

অ্যাজোলার রোগ থেকে প্রতিকার
যখন অ্যাজোলার পাতা ও ডাঁটা লাল হয়ে যাবে তখন বুঝতে হবে রোগ হয়েছে। এক ধরনের শামুক পাতা ও ডাঁটা খেয়ে এই চাষের ক্ষতি করে। খুব ভাল করে লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে এই শামুকের আক্রমণ না হয় অ্যাজোলার ট্যাঙ্কে। এক বার অ্যাজোলার রোগ ট্যাঙ্কে হলে পুরো ট্যাঙ্ক ভাল করে পরিষ্কার করে আবার অ্যাজোলার চাষ নতুন করে শুরু করতে হবে। চাষিভাইদের এই দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

অ্যাজোলা চাষের প্রশিক্ষণ
কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র , কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় চাষিদের এই চাষে উৎসাহিত করে থাকে যাতে তারা নিজের উদ্যোগে এই চাষ করতে পারেন। তাঁদের চাষের উন্নতির জন্য। ক্লাস্টার অর্গানাইজেশন, গ্রামের স্বনির্ভর গোষ্ঠী এই চাষের সুবিধা পেয়ে থাকে। দিন দিন রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমাতে ও চাষিদের সাহায্য করতে সরকারি প্রতিষ্ঠান এই ধরনের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করে থাকে।

অ্যাজোলার বীজ পাওয়া যাবে
কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র বিনামূল্যে বীজ চাষিদের বিতরণ করে থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন এনজিও এই কাজে চাষিদের সাহায্য করে থাকে।

[আরও পড়ুন: চড়া দামেও দেদার বিকোচ্ছে নবাবগঞ্জের ‘নবাবি বেগুন’, মুখে হাসি কৃষকদের]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement