shono
Advertisement

আবর্জনা ভেবে পোড়াবেন না, নাড়াই সম্পদ, জেনে নিন বিশেষজ্ঞের মত

অত্যধিক নাড়া পোড়ানোয় ফুসফুসের রোগ বাড়ে।
Posted: 08:19 PM Mar 14, 2024Updated: 08:19 PM Mar 14, 2024

‘নাড়া পোড়া’ আপাত নিরীহ এক কথা। কিন্তু এর কুপ্রভাব সুদূরপ্রসারী। ‘নাড়া’ যা আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ তাকে আবর্জনা বলে পুড়িয়ে দিয়ে হয়তো শ্রমসাধ্য ও ব্যয়সাপেক্ষ একটি কাজকে নাড়া পোড়ার মাধ্যমে সহজ করে তোলা হয়। কিন্তু এর ফলে প্রকৃতি ও পরিবেশের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। লিখেছেন বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অধ্যাপক ড. অমিতাভ বিশ্বাস।

Advertisement

সাধারণত ফসল কাটার পরে শিকড়-সহ অবশিষ্টাংশ জমিতে থেকে যায়। পরবর্তী ফসল চাষের জন্য জমি তৈরি করতে গেলে ফসলের এই অবশেষ তুলে ফেলতে হবে। তাতে সময় লাগে আর মজুরি বাবদ বেশ কিছু টাকা খরচ হয়। তাই তাৎক্ষণিক লাভের জন্য জমির ফসলের। অবশিষ্টাংশে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। দিন পেরিয়ে রাতের গাঢ় অন্ধকারকে ভেদ করে আগুনের লেলিহান শিখা দাউদাউ করে জ্বলতে থাকে। ছড়িয়ে পড়ে মাঠের পর মাঠ। ধোঁয়ায় ভরে যায় চারদিক। ধোঁয়ায় দৃশ্যমানতা কমে যায়। ফলে সড়ক দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বাড়ে। শ্বাসরোধকারী পরিস্থিতি তৈরি হয়। পরদিন মাঠ জুড়ে দগদগে ঘায়ের মতো কালো কালো পোড়া চিহ্ন পড়ে থাকে। যেহেতু এই আগুন নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন তাই মাঠ ছাড়িয়ে বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডে   রূপান্তরিত হতে পারে। পুড়িয়ে শেষ করে দিতে পারে গ্রামকে গ্রাম। ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, মানুষ, গৃহপালিত পশুপাখি, গাছপালা ও তাদের উপর নির্ভরশীল জীববৈচিত্র্য। পোড়া মাটি ইটের মতো শক্ত হয়ে যায়। সুতরাং সাবধান হওয়ার প্রয়োজন আছে।

বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত কৃষিমেলায় (১৫-১৬ ফেব্রুয়ারি,২০২৪) এ বিষয়ে কৃষকদের সচেতন করার জন্য কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের পক্ষ থেকে প্রদর্শিত হয়েছিল একটি বিশাল ফ্লেক্স যার শিরোনাম ছিল ‘নাড়াই সম্পদ-নাড়া পোড়াবেন না, পুনর্ব্যবহার করুন।’ এই শিরোনামে নাড়া পোড়ানোর বিপদ ও তার থেকে উদ্ধার পেতে যে পরামর্শগুলো দেওয়া হয়েছে তাই এখানে বিবৃত হল। নাড়া পোড়ালে মাটির তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। মাটির উপরিস্থ ২.৫ সেমি পর্যন্ত স্তরের উপকারী ব্যাকটেরিয়া আর ছত্রাককে মেরে ফেলে। পরবর্তী ফসলের উৎপাদনশীলতা হ্রাস পেতে থাকে। যেখানে অত্যধিক নাড়া পোড়ানো হয় সেই অঞ্চলে মানুষের ফুসফুসের রোগ বেশি হয়।

[আরও পড়ুন: খাবারের প্লেটে বাড়ছে কাঁকড়ার চাহিদা, সঠিক পদ্ধতিতে চাষের পথ দেখালেন বিশেষজ্ঞ]

একটন মাটি পোড়ালে মাটি থেকে বেড়িয়ে যায়- ৫.৫ কেজি নাইট্রোজেন, ২.৩ কেজি ফসফরাস, ২৫ কেজি পটাশিয়াম, ১.২ কেজি সালফার। প্রতি টন খড় পোড়ালে বাতাসে মেশে- ২ কেজি সালফার ডাই-অক্সাইড, ৩ কেজি বস্তুকণা, ৬০ কেজি কার্বন মনোক্সাইড, ১৪৬০ কেজি কার্বন ডাই অক্সাইড এবং ১৯৯ কেজি ছাই। এইভাবেই নাড়াপোড়ার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত বাতাস দূষিত হচ্ছে। নাড়া পোড়ানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। নাড়া পোড়ানোর বিরুদ্ধে তাই সর্বস্তরে প্রচারাভিযান চলছে।

বিকল্প ব্যবস্থা
নাড়া পোড়ানোর বদলে তাকে সম্পদ হিসাবে পেতে কিছু সুপারিশ আছে। “পুসা বায়ো ডিকম্পোজার” ক্যাপসুল ব্যবহার করলে নাড়া পচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে মাত্র পঁচিশ দিন সময় লাগে, একর প্রতি ১০০০ টাকার কম খরচ হয়। স্থানীয় কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র, কৃষি দপ্তরে যোগাযোগ করে এর প্রাপ্যতা বিষয়ে অবহিত হতে হবে। অন লাইনেও পাওয়া যেতে পারে। “হ্যাপি সীডার” যন্ত্র ব্যবহার করলে একসাথে নাড়া কাটা, গমের বীজ বপন ও নাড়ার টুকরোগুলো বপিত বীজের উপর আচ্ছাদন (mulching) হিসাবে কাজ করে। ফলে জমিতে জল সংরক্ষণ হয়, সঠিক সময়ে বপন করা বীজ থেকে অঙ্কুরোদগম হয়, আগাছার উপদ্রব কমে ও জমি জৈব উপাদানে সমৃদ্ধ হয় ও সঠিক সময়ে গমের বীজ বোনা যায়।

স্থানীয় “কাস্টম হায়ারিং সেন্টারে” এই যন্ত্র কেনার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এছাড়া নাড়া তুলে জমির এক কোণে স্তরে স্তরে জমা করে তার থেকেও বহুমূল্য জৈবসার প্রস্তুতি বা কেঁচোর খাবার হিসাবে ব্যবহার করে কেঁচো সার বা ভারমি কম্পোস্ট তৈরি করা যায়। মাশরুম চাষের উপাদান হিসাবেও এই নাড়া ব্যবহৃত হতে পারে। সুতরাং এখন থেকে আর নাড়া পোড়ানোর নয়, একে জৈব সম্পদ হিসাবে ব্যবহার করুন।

[আরও পড়ুন: বাংলায় কৃষি বিপ্লব, এবার আলিপুরদুয়ারে শুরু আলু বীজ উৎপাদন]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement