গত সপ্তাহে বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ জয়দীপ সেনের বিশেষ লেখার প্রথম পর্বটি পড়েছেন। বিষয়: এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড। আগের লেখায় জানিয়েছিলাম প্রাথমিক কয়েকটি প্রসঙ্গ নিয়ে। ইটিএফ কী এবং কত ধরনের হতে পারে, তা জেনেছিলেন ‘সঞ্চয়’-এর পাঠক। নিচের চার্ট দিয়ে বাকি লেখা শুরু করছি। এবারের লেখার নির্যাস ট্র্যাকিং এরর, ট্র্যাকিং ডিফারেন্স।
ট্র্যাকিং এরর, ট্র্যাকিং ডিফারেন্স
ট্র্যাকিং এরর: ইটিএফ-এর বৈশিষ্ট্য স্মরণ করুন। একটি ইনডেক্স আছে, যার ভিত্তিতে ইটিএফ গঠিত। এবার দুটির পারফরম্যান্সের মধ্যে ফারাক হতেই পারে, হয়তো। এই ফারাকটি মেপে নেওয়া যেতে পারে, সাধারণ রাশিবিজ্ঞানের নিয়ম মেনে। স্ট্যান্ডার্ড ডেভিয়েশন এখানে প্রযোজ্য। এমন ‘অ্যাবসোলিউট ডিফারেন্স’ এক্ষেত্রে খুব প্রাসঙ্গিক একটি মাপকাঠি। অন্য শর্তও জরুরি হয়ে ওঠে। যেমন ধরুন ফি, ট্রেডিং কস্ট ইত্যাদি। যদি যথাযথভাবে অনুসরণ করা না হয় ইনডেক্সটি, তাহলেও তার প্রতিফলন দেখতে পাওয়া য়ায়। যে ইটিএফে কম ট্র্যাকিং এরর, সেই ইটিএফ ভালো বলে গণ্য। ট্র্যাকিং এরর বেশি হলে লগ্নিকারীর অসুবিধা। যখন ইটিএফের পারফর্ম্যান্সের পর্যালোচনা করা হয়, তখন ট্র্যাকিং এরর বেশি না কম, তা বিশেষভাবে দেখা হয়। সূচক ছাড়িয়ে গেলেও এরর, আবার সূচকের নিচে নামলেও এরর-ই।
ট্র্যাকিং ডিফারেন্স: সংশ্লিষ্ট সূচক যেটিকে আমরা গোড়াতেই ‘আন্ডারলাইং ইনডেক্স’ বলে উল্লেখ করেছি (গত সপ্তাহের লেখা দেখুন) এবং ইটিএফ, এই দুইয়ের রিটার্নের তফাৎ হয়। সাধারণত, এই মাপকাঠি নেগেটিভ থাকে ইটিএফের এক্সপেন্স রেশিওর নিরিখে। ‘ট্র্যাকিং ডিফারেন্স’ও পর্যালোচনা করার সময় দরকারি হয়ে ওঠে।
[আরও পড়ুন: ‘ফাঁদ পেতেছে’ জালিয়াতরা! গ্রাহকদের সতর্ক করল এলআইসি]
উল্লেখ্য, ট্রেডেড ভলিউম নিয়েও বুঝে নিতে হবে। কোনও নির্দিষ্ট দিনে অথবা নির্দিষ্ট টাইম পিরিয়ডে যে সংখ্যক ইউনিট বেচা-কেনা হয়, তাই-ই ট্রেডেড ভলিউম হিসাবে ঘোষিত হয়। এর সঙ্গে লিকুইডিটির প্রত্যক্ষ যোগ আছে। তার কারণ ট্রেডেড ভলিউম যত বেশ, ততই বায়ার এবং সেলারদের সংখ্যা বেশি। কেনা-বেচা সক্রিয়তার প্রমাণ দেয়। এর সঙ্গে এ-ও বলে রাখি যে ইটিএফ-এর কর্পাস (অ্যাসেট আন্ডার ম্যানেজমেন্ট) ভলিউমের নির্ধারক হতে পারে। বড় কর্পাস মানে ইনভেস্টরদের সংখ্যা উঁচুর দিকে। ফান্ডের পারফরম্যান্স এবং বেঞ্চমার্ক ইনডেক্সের পারফরম্যান্সের তফাত বোঝানো হচ্ছে।
পরিশিষ্ট: ‘সঞ্চয়’-এর পাঠকদের জন্য পরিশেষে কয়েকটি কথা বলি। ইদানিং ইটিএফ নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে, তাই এর পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কথা জানানো জরুরি, বলে মনে করি। ইটিএফ সারা পৃথিবীতেই দেখতে পাবেন, বেশ ‘ইনোভেটিভ’ এবং বিনিয়োগের বাজারে আলোড়ন ফেলে দিয়েছে ইতিমধ্যেই। একটিমাত্র ইটিএফ-এর ইউনিট কিনছেন মানে আপনি এক গুচ্ছ স্টক কিনছেন। শুধু তাই নয়, যে অনুপাতে স্টকগুলো ইনডেক্সে আছে, আপনিও সেই অনুপাতেই হাতে পাচ্ছেন। এছাড়াও, খুব সহজেই কেনাবেচা করার সুবিধা ভোগ করছেন এই সঙ্গে। এবার প্রশ্ন হল, কীসের ভিত্তিতে ইটিএফ কিনবেন আপনি? আমার মতামত খুব পরিষ্কার এই বিষয়ে। সঙ্গের পয়েন্টগুলোর দিকে নজর দিন।
[আরও পড়ুন: বাজারে এসেছে থিমভিত্তিক ফান্ড, কী কী সুবিধা পাবেন আপনি?]
১. ইটিএফ নির্বাচন আপনার সামগ্রিক পোর্টফোলিওর সঙ্গে সাযুজ্য রেখে করুন।
২. নিজের অ্যাসেট অ্যালোকেশন কৌশলের বাইরে নয় ইটিএফে লগ্নি। ইক্যুইটি, ডেট, গোল্ড–যাই-ই হোক না কেন, ঠিক করে নিন কোন অ্যাসেট ক্লাসকে কতখানি দেবেন, কীভাবে লগ্নি করবেন।
৩. সামগ্রিক অ্যালোকেশনের পর ভেবে নিন অন্য বিষয়গুলো সম্বন্ধেও। যদি ইক্যুইটি-ই চান, কতখানি হবে লার্জ ক্যাপে? মিড ক্যাপেই বা কত দেবেন? একইভাবে, যদি ডেট আপনার পছন্দসই হয়, বুঝে নিন লং ম্যাচুরিটি বন্ডের জন্য কত অ্যালোকেশন বরাদ্দ করবেন? আর শর্ট ম্যাচুরিটি ঋণপত্রের জন্যই বা কতখানি ধার্য করবেন? এই সংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো নিতে হবে আপনাকেই।
৪. এরই সঙ্গে জড়িয়ে আছে আরও একটি বিষয়। অ্যাক্টিভ ম্যানেজমেন্ট যদি পুরোদস্তুর না চান, তাহলে ইটিএফ আপনার সহায় হবে। তখন বুঝে নিতে হবে অ্যাক্টিভকে ঠিক কতখানি বিশ্বাস করবেন আর প্যাসিভকে কী চোখে দেখবেন?
আমার মতে, যখন ইটিএফ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় হবে, তখন বিশেষ করে ট্র্যাকিং এরর, ট্র্যাকিং ডিফারেন্স এবং ট্রেডেড ভ্ল্যুইম–এই তিন প্রসঙ্গের কথা ভুললে চলবে না। ইদানিং প্রচুর ধরনের ইটিএফ বাজারে এসেছে, ভবিষ্যতে বাড়ার সম্ভাবনা প্রবল। তাই এই ব্যাপারে সম্যক জ্ঞান থাকতে হবে অবশ্যই।