টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: বীজ পোঁতার সময় প্রায় শেষ হতে চলেছে। তার মধ্যেই আকাশে ঘন কালো মেঘ। বৃষ্টির সম্ভাবনার খবরে বাঁকুড়ার আলু চাষিদের মুখে এখন একটাই প্রশ্ন, "এ মরশুম কি শুরুতেই হাতছাড়া?" জেলার বিভিন্ন ব্লকে জমি তৈরি থাকলেও আবহাওয়ার দোলাচলে বীজ রোপণে দেরি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
জেলা উপকৃষি অধিকর্তা দেবকুমার সরকার জানান, এপর্যন্ত ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে বীজরোপণ শেষ হয়েছে। অথচ বাঁকুড়ায় প্রতি বছর মোট ৫০ হাজার হেক্টরে আলু চাষ হয়। অর্থাৎ এখনও ৩৫ হাজার হেক্টর কাজ বাকি। দেবকুমারবাবুর আশ্বাস, "দেখুন, এখনও হাতে সময় আছে। আবহাওয়া যদি দু'-তিন দিনের মধ্যে স্বাভাবিক হয়, আমরা দ্রুত বাকি জমিতে কাজ এগিয়ে নিতে পারব।” কিন্তু চাষিরা বলছেন, সময় আছে ঠিকই, কিন্তু মেঘের দাপটে তাঁদের বুক কাঁপছে। সোনামুখীর চাষি গোবিন্দ সিংহ জমির ধারে দাঁড়িয়ে বললেন, "মাঠ তৈরি করেছি দিন দশেক আগে। কিন্তু বীজ পোঁতা হয়ে উঠল না। দেরি হলে ফলন কমে যায়, একথাটা আমরা খুব ভালো করেই জানি।"
ইন্দাসের চাষি রতন মাহাতোর উদ্বেগ আরও স্পষ্ট। তিনি বলেন, "গত বছর পাঞ্জাবের বীজ নিয়ে বিপদে পড়েছিলাম। অঙ্কুর ওঠেনি। এ বছর দামও বেড়েছে-কুইন্টাল পিছু ১৮০০ থেকে ২৩০০ টাকা। এখন আবার বাঁকুড়ার আকাশে মেঘ। কী করব বলুন?" বড়জোড়ার মাধব বাউরির বক্তব্য, "ট্রাক্টর নামানো যাচ্ছে না। সময়ের হিসেব মাথায় নিয়ে কাজ করি। একদিনের দেরিও ক্ষতি ডেকে আনে।” তিনি আরও বলেন, "যদি আবার নিম্নচাপ হয়, তা হলে এ মরশুমে লাভতো দূরের কথা, বীজ-সার-শ্রমিকের খরচটাই তুলতে পারব কি না সন্দেহ।” পাঞ্জাবি বীজের গুণমান নিয়ে যে প্রশ্ন গত বছর উঠেছিল, সেটাও চাষিদের দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে। বহু জমিতে অঙ্কুরোদগম কম হওয়া এবং গাছ দুর্বল হয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। যদিও কৃষিদপ্তর এবছর প্রতিটি চালান পরীক্ষা করা হচ্ছে বলে দাবি করছে। দেবকুমার সরকার আবারও চাষিদের আশ্বস্ত করে বলেন, "আবহাওয়া একটু বদলালেই কাজ গতি পাবে। দেরি যে হয়েছে, তা মানছি, কিন্তু খুব বড় ক্ষতির সম্ভাবনা এখনও নেই।"
ফাইল ছবি
