বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: উত্তরে চা উৎপাদনে উদ্বেগজনক ঘাটতি। চা পর্ষদের প্রকাশিত রিপোর্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে উৎপাদন কমেছে ৮৩ লক্ষ ২০ হাজার কেজি। অক্টোবরের হিসেব এখনও মেলেনি। তবে চা চাষিদের সূত্রে জানা গিয়েছে, অতি বৃষ্টি এবং হড়পা বানের জেরে পুজোর মাসে উত্তরে চা পাতার উৎপাদন কমে যাওয়ায় তৈরি চা উৎপাদনও মার খেয়েছে।
সম্প্রতি ভারতীয় চা পর্ষদের প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে উত্তরবঙ্গে উৎপাদিত চায়ের পরিমাণ ৪ কোটি ৩০ হাজার কেজি। গত বছর ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এখানে উৎপাদিত চায়ের পরিমাণ ছিল ৪ কোটি ৮৩ লক্ষ ৫০ হাজার কেজি। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে চায়ের উৎপাদন কমেছে ৮৩ লক্ষ ২০ হাজার কেজি। এখানেই শেষ নয়। ডুয়ার্স চা বাগান ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক গোপাল প্রধান জানান, ডুয়ার্সে ২২টি বন্ধ বাগান। পাতার উৎপাদন কমে যাওয়ায় ক্ষুদ্র চা বগানেও সংকট বাড়ছে।
এই মুহূর্তে আলিপুরদুয়ার জেলায় বন্ধ তিনটি চা বাগান। প্রায় ৩ হাজার চা শ্রমিকের দিন কাটছে আশঙ্কায়। তিনমাস আলিপুরদুয়ারের দলসিংপাড়া চা বাগান বন্ধ থাকলেও সরকারি খাতায় খোলা। শুধু শ্রমিক সংগঠন নয়। চা বণিক সভার কর্তারাও জানান, একদিকে বন্ধ বাগানের সংখ্যা বাড়ছে। অন্যদিকে ক্ষুদ্র চা চাষিরাও দিশাহারা। সব মিলিয়ে বিপাকে পড়েছেন রাজ্যের প্রায় ছয় লক্ষেরও বেশি চা শ্রমিক। তার উপর হড়পা বানের খাড়া নেমে আসায় আরও বিপাকে পড়েছেন চা বাগান কর্তৃপক্ষ। সাম্প্রতিক হড়পা বানে আলিপুরদুয়ার এবং জলপাইগুড়ি জেলার ৫০টিরও বেশি বড় চা বাগান বিধ্বস্ত হয়েছে। কোথাও পুরো ডুবে গিয়েছিল। এরপর কোথাও জল নেমে গেলেও পলিতে তলিয়েছে চা গাছ। পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত চা বাগানের সংখ্যা ৪০। প্রায় ৯৫০ হেক্টর জমির চা গাছ তছনছ হয়েছে। তার মধ্যে বন্যার জলে ধুয়ে ভেসেছে ৪০০ হেক্টর জমির চা বাগান। এখানেই শেষ নয়। একাধিক রাস্তা, কালভার্ট জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে।
ডুয়ার্স ব্রাঞ্চ টি অ্যাসোসিয়েশনের সচিব রাম অবতার শর্মা বলেন, "কেবল কালচিনির সুভাষিণী চা বাগানের ৯২ হেক্টর চা বাগান ডলোমাইটে তলিয়ে নষ্ট হয়েছে। এখানে আর কিছু হবে না।" চা বণিক সভাগুলো সূত্রে জানা গিয়েছে, সুভাষিণী ছাড়াও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চ্যাংমারি, বামনডাঙা টন্ডু, দলসিংপাড়া চা বাগান। চা বাগান মালিক পুরণজিত বক্সি গুপ্ত বলেন, "ক্ষতিগ্রস্ত চা বাগানগুলোর বেশিরভাগ এখনও ডলোমাইটের কাদায় তলিয়ে আছে। সেগুলো কতটা টিকে থাকবে বলা মুশকিল।"
