আমাদের দেশে, রপ্তানির ক্ষেত্রে অন্যান্য ফলের তুলনায় আম বেশি সম্ভাবনাময়। প্রতি একক জমিতে আমের উৎপাদন বৃদ্ধি ও গুণগত মান উন্নত করা আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জ। প্রচলিত আম চাষ পদ্ধতির বাইরে গিয়ে উৎপাদন ও গুণমান বৃদ্ধির করা প্রয়োজন। পড়ুন দ্বিতীয় পর্ব।
পরিণত গাছের ডাল ছাঁটার পদ্ধতি
বড়, পুরনো গাছে দেখা যায়, শুধুমাত্র কিছু ডালে ফল ধরে। অধিকাংশ ডালে কিন্তু কোনও ফল দেখা যায় না। অর্থাৎ, গাছ তার ক্ষমতা অনুযায়ী ফল দিতে পারছে না। এর ফলে, চাষির আয় কমে, ফল পাড়ার খরচও বাড়ে।
ডাল যথাযথভাবে ছেঁটে, গাছে এক সঙ্গে ফুল ফোটা ও ফল ধরা উদ্দীপিত করা যায়। মনে রাখা দরকার, আম গাছের বৃদ্ধি ও ফুল ধরা একটি নির্দিষ্ট আবর্তে সংঘটিত হয়। দুটি বৃদ্ধি পর্যায়ের ব্যবধানের দৈর্ঘের উপর নির্ভর করে সেই বৃদ্ধির ফলে শুধুমাত্র পাতা হবে, না পুষ্পমঞ্জরী বেরবে, যেখান থেকে আমরা ফল পাব। যদি এই ব্যবধান, ৫ মাসের কম হয় তবে সাধারণত পাতার সংখ্যাই বাড়বে। যদি তা ৫ মাস বা তার বেশি ব্যবধান হয়, তাহলে পুষ্পমঞ্জরী বেরোবে। যা ৪ মাস পর ফলন দেবে।
আম গাছের শাখার ডগা কাটলে সেই অংশ থেকে নতুন বৃদ্ধি হয়। তাই উপরোক্ত বিষয়টি বুঝে নিয়ে ডাল ছাঁটার সময় নির্ধারণ করতে পারে। গাছের সব ডাল একসঙ্গে ছাঁটার মাধ্যমে একই সঙ্গে সব ডালে ফল ধরানো সম্ভব। কিছু আম গাছে দেখা যায়, কখনই ফল ধরে না। কারণ, দুটি বৃদ্ধি পর্যায়ের ব্যবধান এতই কম থাকে যে তা ফুল ধরা উদ্দীপিত করতে সক্ষম হয় না। এর সঙ্গে সেই ধরনের গাছে শুধু নাইট্রেজেন সার প্রয়োগ করলে পাতা ও শাখার বৃদ্ধিই ত্বরান্বিত হয় কিন্তু ফুল ধরে না। এক্ষেত্রে পাতা পরীক্ষা করে সার ব্যবহার করলে গাছে মুকুল আনা সুনিশ্চিত করা যায়।
[আরও পড়ুন: ধানজমিতে করুন মাছ চাষ, জেনে নিন পদ্ধতি]
পরিণত আমগাছকে যথাযথ উৎপাদনশীল রাখতে হলে প্রত্যেকটি শাখার ডগা কাটতে হবে। তাই আগে গাছের আকৃতি ছোট করা প্রয়োজন। তবে, এধরনের পদক্ষেপ করলে, প্রাথমিক ভাবে গাছের ফলন কিছু কম হবে। কারণ গাছের যথেষ্ট শাখা উৎপন্ন হতে কিছু সময় লাগবে। তবে কাটা ডালপালা বিক্রির মাধ্যমে এ ক্ষতি কিছুটা কমানো যাবে। এরপরে সেই গাছে প্রচুর পরিমাণে ফল উৎপাদনকারী শাখা জন্মাবে। ফলন বেশি হবে।
কোন ডালপালা ছাঁটতে হবে?
যেগুলো মইয়ের নাগালের বাইরে এবং যার জন্য গাছের মধ্যে আলো বাতাস প্রবেশ করতে পারে না। এই পদ্ধতিতে বেশ কিছু সংখ্যক ডাল ক্রমাগত ফলনের জন্য সংরক্ষিত রাখতে হবে। গাছের কান্ডকে কাটতে হবে এমন ভাবে, যেন বৃষ্টির জল কাটা অংশে না জমে। জল জমলে সেই অংশে রোগ পোকার সংক্রমণ ঘটতে পারে। কাটা অংশে কপার অক্সিক্লরাইড লেপন করতে হবে। বড় বড় ডাল, যেগুলো সরাসরি সূর্যালোক পাচ্ছে, সেগুলোতে চুন লেপতে হবে। যেন প্রখর রোদ্রে পুড়ে (sunburn) না যায়।
কিছুদিন পর কাণ্ডের কাটা অংশের ধার থেকে অনেক কচি শাখা জন্মাবে। এর মধ্যে ৫-৬টি শাখা রেখে বাকি গুলো কেটে ফেলতে হবে। নতুন শাখা গুলোতে প্রাথমিক বৃদ্ধি দশার পর যখন অস্থায়ী ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে এবং পাতাগুলোও গাঢ় সবুজ বর্ণ ধারণ করবে, তখন শাখাগুলোর ডগা কেটে দিতে হবে (যেমন ভাবে চারা গাছের ক্ষেত্রেও করা হয়েছিল)। ফুল ধরা ও ফল পাড়ার সময় অনুযায়ী শেষ ডাল ছাঁটার সময় নির্ধারণ করতে হবে।
(অধ্যাপক মোহম্মদ আবু হাসানের পরামর্শে কল্যাণীর অ্যাসোসিয়েশন ফর অ্যাডভান্সমেন্ট ইন প্ল্যান্ট প্রোটেকশন কর্তৃক প্রকাশিত)