সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: জঙ্গলমহলের মাটিতেই যেন বারুইপুর পেয়ারার স্বাদ! এক একটির ওজন ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম। মূলত ব্যক্তিগত উদ্যোগে রুখাশুখা পুরুলিয়ায় বারুইপুরের মতো পেয়ারা ফলিয়ে তাক লাগালেন পুরুলিয়ার জঙ্গলমহলের দুই কৃষক। আড়শা ব্লকের বেলডি গ্রাম পঞ্চায়েতের তুম্বা-ঝালদা এলাকার দুই কৃষক চিত্তরঞ্জন মাহাতো ও ভরত মাহাতোর পেয়ারার ফলন এখন জেলা উদ্যানপালন দপ্তরের আলোচনাতেও জায়গা করে নিয়েছে। রাজ্যজুড়ে চলা উদ্যানপালন সপ্তাহ (২২-২৮ আগস্ট)-এ এই দুই কৃষকের সাফল্য যেন আলাদাভাবে চোখ টানল ওই দপ্তরের।
এই দুই কৃষকই কয়েক মাস ধরে পেয়ারা ফলিয়ে আয়ের মুখ দেখেছেন। তাদের জমির পেয়ারা আসছে পুরুলিয়ার বাজারেও। জেলা উদ্যানপালন দপ্তরের আধিকারিক কৃষ্ণেন্দু নন্দন বলেন, “ওই দুই কৃষকের পেয়ারা চাষের ফলন নজর কেড়েছে। দপ্তর থেকে সবরকম সাহায্য করা হয়েছে। ওই দুই কৃষকই উন্নত ভ্যারাইটি এল ৪৯-র চারায় চাষ করেন।”
খরা কবলিত এই জেলায় আমন ধান, তৈলবীজ, কয়েকটা সবজি আর সম্পূর্ণভাবে উদ্যান পালন বিভাগের উদ্যোগে কয়েকটা ফল, এটিই হল মোটামুটিভাবে পুরুলিয়ার চাষের ক্ষেত্র। সেই জায়গায় জঙ্গলমহল আড়শার এই দুই কৃষক কার্যত নিজ উদ্যোগে পেয়ারা চাষ করে সেই ফলন থেকে আয়ের মুখ দেখায় ওই দুই চাষির সাফল্য হিসাবেই দেখছে পুরুলিয়া উদ্যানপালন দপ্তর। কারণ, এই জেলায় গৃহস্থের দু-তিনটে করে পেয়ারা গাছ রয়েছে। তবে বারুইপুরের মতো বড় আকৃতির পেয়ারা এই জেলা আগে সেভাবে দেখেনি। আর তেমনই সুস্বাদু। তাই ওই দুই কৃষককেই বাহবা জানাচ্ছে উদ্যানপালন দপ্তর।
[আরও পড়ুন: মিজোরামে দুর্ঘটনায় মৃত মালদহের শ্রমিকদের বাড়িতে রাজ্যপাল, দিলেন আর্থিক সাহায্য]
রাজ্যে পালাবদলের পর জঙ্গলমহলের এই জেলায় ব্যাপকভাবে ফল চাষের উদ্যোগ নেওয়া হলেও সেভাবে ফলপ্রসূ হয়নি। বছর দুয়েক আগে এই দুই কৃষকই এল ৪৯ প্রজাতির পেয়ারার চারা নিয়ে চাষ শুরু করেন। চিত্তরঞ্জন মাহাতো চার বিঘা জমিতে ও ভরত মাহাতো তাঁর পাঁচ বিঘা জমিতে এই চাষ করেন। কৃষক চিত্তরঞ্জন মাহাতোর জমিতেই প্রায় কম বেশি ১৫০ পেয়ারা গাছ মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। চলতি বছর থেকেই যার ফলন মিলছে। তবে তিনি নিজেই এই চারা জোগাড় করেন। তবে ভরত মাহাতোকে উদ্যানপালন দপ্তর থেকে চারা দেয়। তার জমিতে কমবেশি ২৩০ টি পেয়ারা গাছ রয়েছে। গত বছর থেকেই ফলন মিলছে। প্রতিদিন ৮০ থেকে ৯০ কেজি ফলন হচ্ছে।
ভরত মাহাতোর কথায়, “নিজেও ভাবিনি পেয়ারা চাষ করে এভাবে নজরে চলে আসব। বছরে তিনবার ফলন হচ্ছে।” আরেক কৃষক চিত্তরঞ্জন মাহাতো জানান, “উদ্যানপালন দপ্তরের পাশাপাশি ইউটিউব দেখেও এই চাষ করেছি। পেয়ারার ফলন দেখে সত্যি খুব ভাল লাগছে।” এই দুই কৃষকের চাষ করা পেয়ারার ফলন দেখতে এলাকার মানুষজন ভিড়ও জমাচ্ছেন তাদের চাষের জমি এলাকায়। আসলে বছর দুয়েক আগেও এই জমি কার্যত পড়েই ছিল। আড়শা থেকে বেলডি যাওয়ার রাস্তার পাশেই রয়েছে এই দুই কৃষকের জমি। সেখানেই দুই কৃষকের জমিতে পেয়ারা চাষে তারা আয়ের মুখ দেখায় এই ফল চাষে উৎসাহ দেখা দিচ্ছে ওই এলাকায়।
দেখুন ভিডিও: