শেখর চন্দ্র ও সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়: প্রায় ২৪ ঘণ্টা পরেও মানসিকভাবে ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারছেন না তাঁরা। বিমানের যাত্রী হিসাবে যে অভিজ্ঞতা তাঁদের হল, তা মনে করলেই কেঁপে উঠছেন বাবা ও মেয়ে। এবং কপালে জোড়হাত ঠেকিয়ে বিড়বিড় করে ঈশ্বর স্মরণ করছেন। অস্ফুটে বলছেন, “বেঁচে ফিরব ভাবিনি।” “হুড়মুড়িয়ে আপার বাঙ্ক থেকে পড়ে গেল লাগেজ। একবার ওদিক একবার এদিকে তীব্র গতিতে ছুটে বেড়াচ্ছে সেগুলো। কারও পায়ে ধাক্কা মারছে। কারও ঘাড়ে পড়ছে। সিট বেল্ট বেঁধেও বসে থাকা যাচ্ছে না। একে অপরের গায়ে ধাক্কা খেতে হচ্ছে।
বিমানসেবিকারা কী করবেন বুঝতেই পারছেন না। মাঝে মধ্যে ঘোষণা করছেন, আতঙ্কিত হবেন না। কিন্তু আতঙ্ক যে তাঁদেরও চোখেমুখে! বাচ্চাগুলো কাঁদছে। মহিলারা চিৎকার করছেন।” ঘটনার কথা বলতে গিয়ে কাঁপছেন তিয়া। আর পাইলট? তিনি শুধু কয়েকবার বললেন, “আবহাওয়া প্রতিকূল। কেউ ভয় পাবেন না। আমরা সেফ ল্যান্ডিংয়ের চেষ্টা করছি।” প্লেন মাটি ছুঁলো। কিন্তু দুর্ঘটনা একেবারে এড়ানো গেল না যে!
[আরও পড়ুন: ‘ইউক্রেন যুদ্ধে কেউই জয়ী নয়, ভারত শান্তির পক্ষে’, জার্মানিতে বার্তা মোদির]
বাবা মণীন্দ্র বর্মা ও তাঁর মেয়ে তিয়া। তাঁরা মুম্বইয়ের বাসিন্দা। সোমবার সকালে আসানসোলের এসবি গরাই রোডের একটি ম্যারেজ হলে, তাঁদের সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল, তখনও তাঁরা আগের রাতের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা ও আতঙ্ক কাটিয়ে উঠতে পারেননি। বাবা ও মেয়ে বলেন, “মিরাকল বলেই হয়তো এখন এখানে।”
রবিবার সন্ধেয় এই গরমে প্রথম কালবৈশাখী হয় পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে। আর সেই কালবৈশাখীর তাণ্ডবে মুম্বই থেকে দুর্গাপুরের অন্ডালের কাজি নজরুল ইসলাম বিমানবন্দরে অবতরণের সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হয় স্পাইসজেটের বোয়িং বি ৭৩৭ বিমানকে। সন্ধে সাতটার ঠিক ১০ থেকে ১৫ মিনিট আগে প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টির মুখে পড়ে বিমানটি। প্রাকৃতিক এই দুর্যোগের মধ্যে তীব্র ঝাঁকুনির সৃষ্টি হয়। শেষ পর্যন্ত ধাক্কা সামলে পাইলটের দক্ষতায় প্রায় ১৮৮ জন যাত্রী দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পান৷ সন্ধে ৭টা ২৫ মিনিট নাগাদ সেই বিমান অন্ডাল বিমানবন্দরে নামে। এই ঘটনায় তিন বিমানসেবিকা সহ ৪০ জন যাত্রী জখম হন। যাঁদের মধ্যে দু’জন আইসিইউতে ভরতি। বিমানবন্দরে কর্তৃপক্ষের তরফে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয় আহত যাত্রীদের।
এই বিমানেই যাত্রী ছিলেন মুম্বইয়ের মণীন্দ্র বর্মা ও তাঁর মেয়ে তিয়া। তাঁরা মুম্বই থেকে অন্ডাল বিমান বন্দরে নেমে আসানসোলের একটি বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। সোমবার মণীন্দ্র বর্মার এক ভাইপোর বিয়েতে আসানসোলে এসেছেন তাঁরা। সেখানেই শোনালেন ভয়াবহতার কথা। মণীন্দ্র ভার্মা বলেন, “বিমানে যাত্রা অনেকবার করেছি। কিন্তু রবিবার যা হল, তা ভাবতেই পারছি না। আর এটার জন্য আমি কেন, কেউই প্রস্তুত ছিলেন না।” এই ঘটনার পর বিমানে উঠতেই ভয় পাচ্ছেন তিয়া।
[আরও পড়ুন: সার্কিট হাউসে উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রীকে ইঁদুরের কামড়! ভরতি হাসপাতালে]
এদিকে, বিমানসংস্থা স্পাইসজেটের পক্ষ ঘটনাটিকে দুর্ভাগ্যজনক আখ্যা দিয়ে বলা হয়, আহতদের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে এও জানানো হয়, গোটা ঘটনার তদন্তে করা হচ্ছে। রিপোর্ট হাতে এলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তদন্ত চলাকালীন ওই পাইলটের উপর বিমান ওড়ানোয় নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে।