shono
Advertisement

এফবিআইয়ের ক্লিনচিট, স্বস্তিতে হিলারি

তবে ক্লিনটন বা ট্রাম্প সকলের জন্যই শেষ মুহূর্তে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে ‘ব্যাটলফিল্ড’ হিসাবে চিহ্নিত প্রদেশগুলি৷
Posted: 03:38 PM Nov 08, 2016Updated: 10:08 AM Nov 08, 2016

সুচন্দ্রা মজুমদার: আর কয়েক ঘণ্টা৷ বাড়ছে উত্তেজনার পারদ৷ বাইরে কিন্তু পারদ নামছে৷ বেশ ঠান্ডা পড়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই৷ কিন্তু ভোটের পারদ চড়ছে পাল্লা দিয়ে৷ রোজকার বাড়তি-কমতির হিসাব বলছে ‘লাস্ট মিনিট ফোটো  ফিনিশ’-ই হয়তো হতে চলেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে৷ এই অবস্থায় হঠাৎই স্বস্তির আবহ হিলারি ক্লিনটনের জন্য৷ ভোটের ময়দানের হিসেবনিকেশে নয়৷ এফবিআইয়ের ক্লিনচিট৷

Advertisement

একজন প্রার্থীকে নিয়ে শুরু থেকেই ছিল বিতর্কের ঝড়৷ তিনি রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ আর অপরজন সম্প্রতি ই-মেল সংক্রান্ত বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন৷ তিনি হিলারি ক্লিনটন৷ হোয়াইট হাউসে পৌঁছনোর শেষ মুহূর্তের দৌড়ে সমীক্ষার হিসাবে তাঁদের ব্যবধান কখনও বাড়ছে কখনও কমছে৷ তবে চূড়ান্ত ভোট শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে হিলারির জন্য সুখবর দিয়েছে এফবিআই৷ মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়ে দিয়েছে, ই-মেল সংক্রান্ত অভিযোগে কোনও ক্রিমিনাল চার্জ অর্থাৎ গুরুতর অপরাধের অভিযোগ নেই হিলারির বিরু‌দ্ধে৷ এই খবরে নিশ্চিতভাবেই স্বস্তি পাচ্ছেন মার্কিন মুলুকের প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী৷ এফবিআই জানিয়ে দিয়েছে, সব ই-মেল ভাল করে খতিয়ে দেখা হয়েছে৷ এফবিআই ডিরেক্টর জেমস কোমে বলেছেন, “হিলারির কোনও ই-মেল থেকেই এমন কোনও তথ্য মেলেনি যাতে প্রমাণ হয় বিদেশ সচিব পদে থাকার সময় কোনও অনৈতিক কাজ তিনি করেছেন৷”

গত জুলাই মাসেও অবশ্য হিলারির ই-মেল সংক্রান্ত বিতর্কের বিষয়ে এফবিআইয়ের তরফ থেকে জানানো হয় যে তারা মনে করছে না প্রশাসনের কোনও গোপন তথ্য বাইরে গিয়েছে৷ এদিন সেই প্রসঙ্গ টেনে জেমস বি কোমে বলেছেন, “প্রাক্তন বিদেশসচিব সম্পর্কে আমাদের পুরনো অবস্থান থেকে আমরা কোনওভাবেই সরছি না৷” ট্রাম্প অবশ্য এফবিআইয়ের এই ক্লিনচিটকে মোটেই গুরুত্ব দিচ্ছেন না৷ বলেছেন, হিলারিকে এই ছাড় দেওয়ার পিছনে নিশ্চিতভাবেই কারচুপি রয়েছে৷ বলেছেন, “এটা অবিশ্বাস্য৷ আমি ভাবতেই পারছি না হিলারি কীভাবে এই অভিযোগ থেকে ছাড় পেয়ে গেলেন!” হিলারি নিজে অবশ্য এ বিষয়ে সরাসরি মুখ খোলেননি৷ কিন্তু তাঁর মুখপাত্র ব্রায়ান ফ্যালন টুইটারে জানিয়েছেন, তাঁরা এ বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন যে হিলারির বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগই প্রমাণ হবে না৷ ক্লিনটন শিবিরের পক্ষ থেকে দৃশ্যতই খুশি ব্যক্ত করা হয় এফবিআইয়ের রিপোর্ট প্রকাশে৷

সাদা বাড়ি দখলের ফোটো ফিনিশে দেখা যাচ্ছে, ভোট শুরুর আটচল্লিশ ঘণ্টা আগের সমীক্ষায় ২৭০-এর ম্যাজিক ফিগার থেকে অন্তত ১০ ভোট পিছনে ছিলেন রিপাবলিকান ট্রাম্প৷ সমীক্ষা বলছে, হিলারির পক্ষে ৪৫ শতাংশ ভোট, ট্রাম্পের পক্ষে ৪১ শতাংশ৷

হোয়াইট হাউসে পৌঁছতে ট্রাম্পকে যে প্রদেশগুলিতে জিততেই হবে তার মধ্যে রয়েছে নর্থ ক্যারোলিনা ও অ্যারিজোনা৷ এছাড়াও গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা নেবে ফ্লোরিডা, ওহায়ো আর আইওয়া৷ ওবামা যখন প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন তখনও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল এই তিন প্রদেশ৷ তাই এই তিন রাজ্যে হেরে গেলে স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য৷ গত ছ’টি ভোটে পেনসিলভানিয়া আর মিশিগান ছিল ডেমোক্র্যাটদের দখলে৷ এবারের ভোটে এই দুই প্রদেশ ট্রাম্পের দখলে এলে ভোটের ময়দানে তাঁর জন্য সুবিধাই হবে৷ শেষ মুহূর্তে সমর্থন কাড়তে ডোনাল্ড ট্রাম্প আর হিলারি ক্লিনটন দু’জনেই অবশ্য চরম ব্যস্ত৷

হিলারি অবশ্য ভোটের হিসাবেও তুলনায় কিছুটা স্বস্তিতে৷ কারণ সমীক্ষায় প্রদেশের সংখ্যার হিসাবে না হলেও ইলেকটোরাল কলেজের হিসাবে সামান্য হলেও বরাবরই এগিয়ে রয়েছেন তিনি৷ তবে ক্লিনটন বা ট্রাম্প সকলের জন্যই শেষ মুহূর্তে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে ‘ব্যাটলফিল্ড’ হিসাবে চিহ্নিত প্রদেশগুলি৷ পেনসিলভানিয়া, মিশিগান ও উইসকনসিন যদি হিলারির পক্ষে যায়, তবে সাদা বাড়িতে প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট আসার বিষয়টি প্রায় নিশ্চিত হয়ে যাবে৷ আর এই প্রদেশগুলি তাঁর হাতের বাইরে চলে গেলে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে নর্থ ক্যারোলিনা, ফ্লোরিডা আর ওহায়ো৷ যে তিন প্রদেশ ট্রাম্পের খাস জমি হিসাবেই পরিচিত সেখান থেকে তাঁকে সরাতে না পারলে লড়াই কঠিন হয় যাবে হিলারির জন্য৷

এগিয়ে আসছে বড়দিন৷ তার আগে রয়েছে থ্যাঙ্কস গিভিং৷ উৎসবের মেজাজ ইতিমধ্যেই গোটা দেশে৷ তাপমাত্রা হিমাঙ্কের প্রায় কাছাকাছি নেমে আসছে রাতে৷ ‘ফল’-এর আগে প্রকৃতিও সাজছে তার নিজের মেজাজে৷ তার আগেই শাসক বাছতে হচ্ছে আমেরিকার মানুষকে৷ হিলারি ক্লিনটন কিংবা ডোনাল্ড ট্রাম্প কেউই কিন্তু দেশের মানুষের কাছে তুমুল জনপ্রিয় নন৷ নানা কারণেই৷ তবু তাঁদের মধ্যে থেকে একজনকে বেছে নিতে হবে আগামী চারবছরের জন্য৷ এই অবস্থায় ভোট দিতে গিয়ে মার্কিনরা কিন্তু বেছে নেবেন তাঁকেই যিনি কিছুটা হলেও কম অপ্রিয়৷ তবে ট্রাম্পের সমর্থকদের একটা বড় অংশ অবশ্য নীরব৷ মানে তাঁদের নির্বাচনী প্রচারে কিংবা সভায় আসতে বিশেষ দেখা যায় না৷ শ্বেতাঙ্গদের সেই অংশের ভোট ট্রাম্পের পক্ষে যাবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ আবার কৃষ্ণাঙ্গদের ভোটের একটা বড় অংশ রয়েছে হিলারির পক্ষে৷ সবমিলিয়ে আটলান্টিকের  তিরে ভোটের লড়াই জমজমাট৷ মঙ্গলবার গভীর রাতে জয় উৎযাপন হোক বা হার স্বীকার, এবার কিন্তু দুইয়েরই সাক্ষী থাকবে নিউ ইয়র্ক৷ কারণ হিলারি আর ট্রাম্প, দু’জনেই এই প্রদেশের৷ তাঁদের শুভেচ্ছা জানাতে কিংবা হারের দিনে পাশে থাকতে সমর্থক পাওয়া যাবে তো? সে উত্তর বোধহয় আটলান্টিকই দিতে পারবে৷

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement