দুলাল দে: এই মরশুমে মাত্র ৮ পয়েন্ট নিয়ে আইএসএলের (ISL 10) লিগ টেবিলে শেষতম স্থান পেয়েছে হায়দরাবাদ এফসি (Hyderabad FC)। কিন্তু দলের যা আর্থিক পরিস্থিতি, তাতে সামনের মরশুমে দল নামাতে পারবে তো? দীর্ঘদিন ধরে কোচ-ফুটবলারদের বেতন না দেওয়ায়, ফিফার (FIFA) নির্দেশে হায়দরাবাদকে বড়সড় শাস্তির মুখে ফেলে দিল সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন (AIFF)। সামনের দু’-দুটো ট্রান্সফার উইন্ডোতে, প্রথমটা জুন থেকে আগস্ট। দ্বিতীয়টা ২০২৫ সালে জানুয়ারি মাসের ট্রান্সফার উইন্ডোতে ফুটবলার নেওয়ার ব্যপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। যার অর্থ, নতুন করে কোনও ক্লাব থেকে যেমন ভারতীয় ফুটবলার নিতে পারবে না। সেরকম কোনও বিদেশি ফুটবলারকেও আর সই করানো সম্ভব হবে না। এই অবস্থায় সামনের মরশুমে আইএসএলে খেলতে হলে অ্যাকাডেমির জুনিয়র ফুটবলারদের নিয়ে দল গড়া ছাড়া আর অন্য কোনও উপায় নেই হায়দরাবাদের। এই অবস্থায় নিজামদের শহরের দল কীভাবে ইন্ডিয়ান সুপার লিগে দল নামাবে, তা নিয়েই ভারতীয় ফুটবলে বড় প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।
যখন থেকে ইন্ডিয়ান সুপার লিগ শুরু হয়েছে, সেই সময় থেকে হায়দরাবাদ এফসির কোনও অস্তিত্বই ছিল না। বলিউড তারকা ঋত্বিক রোশনকে ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিক দেখিয়ে খেলত পুণে সিটি এফসি। ২০১৯-র ২৭ আগস্ট শুধু আইএসএল থেকেই নয়, পেশাদার ফুটবল ক্লাব হিসেবেই পাকাপাকি ভাবে বিলুপ্তি ঘটে পুনে সিটি এফসির। সেই জায়গায় আইএসএলের নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্লাব হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে হায়দরাবাদ এফসি। সমর্থকরা ভালোবেসে যার নাম দেয়, ‘দ্য ইয়েলো অ্যান্ড ব্ল্যাক আর্মি’। শুরুর দিকে কিন্তু পরিস্থিতি এতটা খারাপ ছিল না। সমস্যাটা শুরু হল গত মরশুম থেকে। কোচ মানোলো মার্কেজ যখন ক্লাব ছেড়ে এফসি গোয়ায় যোগ দিচ্ছেন তখন ৬ মাসের বেতন বাকি। দলের একজন বিদেশি ফুটবলারও পুরো বেতন পাননি। অন্তত সাতজন ভারতীয় ফুটবলারের পুরো বেতন দিতে পারেনি হায়দরাবাদ। আর সমস্যাটা শুরু হয়ে গেল ঠিক তখন থেকেই। প্রথমে কোচ মানোলো মার্কেজ ফিফায় অভিযোগ ঠুকলেন হায়দরাবাদের ম্যানেজমেন্টের বিরুদ্ধে। ফিফার হস্তক্ষেপের পর ছয় মাসের মধ্যে দু’মাসের বেতন পেলেন মানোলো। এফসি গোয়ার কোচকে বাকি চারমাসের বেতন এখনও পরিশোধ করেনি হায়দরাদ। বেতন না পেয়ে ভিক্টর ছাড়া বাকি সব বিদেশি ফুটবলার শুধু দলই ছাড়েননি, হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে ফিফায় অভিযোগও করেছেন। এর সঙ্গে ভারতীয় ফুটবলারদের বেতন সমস্যাও রয়েছে।
[আরও পড়ুন: পাঁচ ম্যাচ বাকি থাকতেই সেরি আ চ্যাম্পিয়ন! মিলান ডার্বিতে জিতে ইটালি সেরা ইন্টার]
গত মরশুমের থেকেও এই মরশুমে হায়দরাবাদের আর্থিক সমস্যা আরও প্রবল। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, ভারতীয় ফুটবলাররা প্রায় ৬ মাসের বেতন পাননি। ‘বেতন চাই’ বলে মরশুমের মাঝপথেই আইএসএলের ম্যাচ চলাকালীন হায়দরাবাদ এফসির গ্যালারিতে বড় করে ব্যানার দেখা গিয়েছে। তাতেও চিঁড়ে ভেজেনি ম্যানেজমেন্টের। বিদেশি ফুটবলারদের বেতনও বাকি রেখে দেওয়ায় সেই ভিক্টর ছাড়া বাকি বিদেশিরা মরশুম শেষ হওয়ার আগেই দল ছেড়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। তবে হায়দরাবাদ ছাড়ার আগে ফিফাতে অভিযোগও করেছেন। ভারতীয় ফুটবলাররাও পিছিয়ে নেই। তাদের হয়ে সওয়াল করছে ফুটবল প্লেয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন।
[আরও পড়ুন: আইপিএলে স্বপ্নের দৌড়, অবসর ভেঙে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ফিরবেন নারিন?]
বেতন না পাওয়া প্রত্যেক ভারতীয় ফুটবলারের হয়ে ফিফাকে অভিযোগ জানিয়েছে এফপিএআই। ফলে ফিফা রীতিমতো নড়েচড়ে বসেছে। দু’বছর একই কাণ্ড করার জন্য ফিফা রীতিমতো চড়া সুরে ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনকে জানিয়েছে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। তারই পদক্ষেপ হিসেবে ফেডারেশনের ডিসিপ্লিনারি কমিটি হায়দরাবাদকে জানিয়ে দিয়েছে, সামনের জুন-আগস্ট ট্রান্সফার উইন্ডোই নয়, পরের বছরেও জানুযারি মাসের উইন্ডোতে কোনও ফুটবলারকে সই করাতে পারবে না। জানানো হয়, কোচ-ফুটবলারদের বকেয়া বেতন মিটিয়ে দিলেই ট্রান্সফার উইন্ডোর নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে এরকমটা নয়। বকেয়া টাকা দেওয়ার পর সব ফুটবলারদের থেকে নো অবজেকশন সার্টিফিকেট নিয়ে তা জমা দিতে হবে ফেডারেশনে। তাহলেই ট্রান্সফার উইন্ডোর নিষেধাজ্ঞা উঠবে। এখানেই মূল সমস্যা। নতুন মরশুমের দল গড়বে কি, ফুটবলারদের বকেয়া মেটাতে গিয়ে যে পরিমাণ টাকা খরচ করতে হবে, তার উপর নতুন মরশুমে দল গড়তে গেলে অ্যাকাডেমির জুনিয়র ফুটবলারদের নিয়ে দল গড়া ছাড়া উপায় নেই হায়দরাবাদের।