আকাশ মিশ্র: বায়োপিক তৈরি করার ব্য়াপারে কয়েকটি নিয়ম মেনে চলতে হয়। মূলত, পরিচালকের একটা দায়িত্ব থাকে, যার জীবন কাহিনি নিয়ে ছবিটি তৈরি হচ্ছে, তাঁর জীবনের প্রত্যেকটি দিক তুলে ধরা। এমনকী, পরিচালককে ধরেই নিতে হয় দর্শক কিন্তু বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নয় কিংবা তাঁদের খুবই সামান্য ধারণা রয়েছে। তাহলেই হয়তো কারও জীবন কাহিনিকে সঠিক অর্থে পর্দায় তুলে ধরা যায়। সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত শুভেন্দুরাজ ঘোষের 'ম্যায় মুলায়ম সিং যাদব' যেন এই নিয়মগুলোকে খুব সচেতনভাবে এড়িয়ে গেলেন। বিতর্কের ভয়ে?
দেশের রাজনীতিকে প্রেক্ষাপট করে ছবি। যার বেশিটাই ইন্দিরা গান্ধীর জারি করা জরুরি অবস্থা। সিনেমার শুরুও সেই পর্যায় থেকেই। আর সেই ঘটনার মাঝেই পরিচালক পিঁয়াজের খোসার মতো অল্প অল্প করে মুলায়ম সিং যাদবের জীবনের গল্পকে সামনে আনলেন। তবে তা একেবারেই বলিউডি ছবির 'অ্য়ারিং ইয়ং ম্যান' তথা নায়কের উত্থানের মতো করে। অনেক সময়ই মনে হবে এই ছবি তথ্যচিত্র, কিন্তু ছবি এগোতেই মনে হবে, নাহ এটা আসলে ফিকশন। পরিচালক শুভেন্দুরাজ ফিকশন ও ননফিকশনের মিশেল বানিয়েছেন। ঠিক যেখানে হয়তো মুলায়মের রাজনৈতিক চিন্তনকে স্পষ্ট করে দেখানো উচিত ছিল, সেখানেই তা রেখেছেন অস্পষ্ট। মনেই হচ্ছিল রাজনৈতিক বিতর্ক এড়াতেই এমন সচেতন ছিলেন পরিচালক।
এক সাধারণ কৃষক পরিবারের ছেলে মুলায়ম, স্বপ্ন দেখতেন বড় কুস্তিগীর হওয়ার। একের পর এক প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হতে হতেই, সেই যুবক কুস্তির আখড়া ছেড়ে প্রবেশ করেন বৃহৎ রাজনৈতিক আখড়ায়। যেখানে লড়াইটা বুদ্ধির, আর মেধার।
[আরও পড়ুন: খোপায় পলাশ, কপালে চন্দন, ‘বহুরূপী’ লুকে বাজিমাত কৌশানীর, পুজোর বক্স অফিস কাঁপাবে ‘ঝিমলি’]
সাতের দশকে ভারতীয় রাজনীতির ব্যাধি হয়ে দেখা দিয়েছিল রাজনীতিতে নেপোটিজম, বিশেষ করে বংশপরম্পরায় নেতৃত্ব। ঠিক সেই সময়ই রাজনীতিতে মুলায়মের মতো দাপুটে নেতার আবির্ভাব। পেশায় স্কুল শিক্ষক মুলায়ম, উত্তরপ্রদেশের জাতপাতের রাজনীতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে, নারীদের সমানাধিকারের কথা বলে মানুষের বিশ্বাস, ভরসা, ভালোবাসা অর্জন করে নেন। এই মুলায়ম সিংহ যাদবের হাত ধরেই তৈরি হয় সমাজবাদী পার্টি। এই সবই ছবিতে এসেছে। তবে তা যেন শুধুই কোলাজ ও জাম্প কাটে স্থান পেয়েছে।
তবে হ্য়াঁ, এই ছবি অভিনয়ের ছবি। মুলায়ম চরিত্রে অমিত শেঠি বেশ ভালো। মুলায়নের মায়ের চরিত্রে আলাদা করে নজর কাড়েন জারিনা ওয়াহব। নজর কেড়েছেন সানা আমিন শেখ, মুকেশ তিওয়ারি, রণজয় বিষ্ণু। তবে এই ছবির সম্পাদনায় আরও একটু যত্ন থাকা উচিত ছিল। হেসেখেলে বহু দৃশ্য বাদ দিলে ছবি সঠিক অর্থে দানা বাঁধতে পারত। শেষমেশ বলা যায়, যাঁরা রাজনৈতিক ড্রামা দেখতে পছন্দ করেন, তাঁরা ছবিটা দেখতেই পারেন।