বিদিশা চট্টোপাধ্যায়: বাংলাদেশে ঝড় তোলার পর কলকাতায় এসে পড়ল ‘তুফান’। এই ঝড়ের গতিবেগ একরকম থাকছে না। বাড়ছে ক্রমশ। তাই এ দেশে দর্শকদের মনে ও বক্স অফিসে কেমন প্রভাব ফেলবে সেই খতিয়ান আগে থেকে নির্ধারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। বাংলাদেশের সুপারস্টার শাকিব খানের ২৫০তম ছবি বলে কথা। পরিচালনায় রায়হান রাফি।
নয়ের দশকে ‘শান্ত’ এবং অশান্ত– এই দুই যুবকের গল্প হলেও ‘তুফান’ ছবিটি মূলত ওই অশান্ত যুবকেরই গল্প। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন এই ছবিতে একটা নয়, শাকিব খানের দুই অবতার। অশান্তজন হল নৃশংস এক গ্যাংস্টার। যার ডিকশনারিতে সহমর্মিতা শব্দটা নেই। অন্যদিকে ‘শান্ত’ ছেলেটি অভিনেতা হতে চায়, কিন্তু কপালে জুনিয়র আর্টিস্ট ছাড়া রোল জোটে না। ভাগ্যের ফেরে পেয়ে যায় গ্যাংস্টারের লাইফটাইম চরিত্র এবং সেই ছবির মাস্টারমাইন্ড গ্যাংস্টার ‘তুফান’ নিজেই। তার নিজের সঙ্গে চেহারার সাদৃশ্য আছে এমন ব্যক্তিকে তুফান নিজের ফায়দার জন্য ব্যবহার করবে এ আর নতুন কী। ১৯৭৮ সালের অমিতাভ বচ্চন অভিনীত সুপারহিট ছবি ‘ডন’-এর প্রসঙ্গ মনে আসবেই। সেই সঙ্গে মনে আসবে ২০২৩-এর ছবি ‘অ্যানিমাল’-এর কথাও।
শাকিব খানের লুক হুবহু ‘অ্যানিমাল’-এর রণবীর যেন। শুধু লুক নয় এই ছবির গভীরে রয়েছে ‘অ্যানিমাল’-এর নৃশংসতা, অক্লান্ত হিংসার বীজ। ইন্টারেস্টিংলি ‘ডন’ এবং ‘অ্যানিমাল’-এও ছিল নায়ক বা খলনায়কের ডাবল রোল। এই ছবিতেও তাই। এবং ৪৫ বছরের ব্যবধানে এই দুই হিন্দি ছবিরই প্রধান চরিত্রের নাম ছিল ‘বিজয়’। মজার ব্যাপার পরিচালক রায়হান তাঁর পিরিয়ড গ্যাংস্টার ছবির অনুপ্রেরণা হিসেবে যেমন ১৯৭৮-এর ‘ডন’ থেকে ধার করে, ‘তুফান’-এর গল্পের কাঠামো তৈরি করেছেন কিন্তু তিনি জানেন সালটা এখন ২০২৪। দর্শকের মন বদলেছে। হিংসার চেহারাও এখন আরও বেশি কদর্য, আরও বেশি নিষ্ঠুর, আরও বেশি রক্তাক্ত! তাই ‘তুফান’-এর গল্পের শরীর ‘ডন’-এর হলেও, তার মনে রয়েছে ‘অ্যানিমাল’। আসলে ‘অ্যানিমাল’ রণবীরের লুক যেন প্রতীকী, শয়তানের ক্লোন। পরিচালক সেই চেহারাই দিতে চেয়েছেন অভিনেতা শাকিব খানকে। এবং শাকিব তাঁর স্টাইলে, শরীরী ভাষায় হয়ে উঠেছেন সমসময়ের অকৃত্রিম হিংসার প্রতীক। হল ভর্তি দর্শক গুলি ছুটলে হাততালি দিচ্ছে, রক্তপাত হলে উল্লাসধ্বনি প্রকাশ করছে। দর্শকের এই পাল্সটাই ধরতে চেয়েছেন পরিচালক এবং তার যোগ্য সঙ্গত দিয়েছেন শাকিব খান।
[আরও পড়ুন: ‘টিম ইন্ডিয়ার জন্য গর্বে বুক ফুলে যাচ্ছে’, জয় শাহকে শুভেচ্ছা আবেগপ্রবণ শাহরুখের]
ছবির প্রথমার্ধে ‘শান্ত’র এন্ট্রি। সে ভালো মানুষ। অভিনেতা হতে চেয়ে তার স্ট্রাগল দেখি আমরা। কস্টিউম ডিজাইনার জুলির (অভিনয়ে মাসুমা রহমান নাবিলা) সঙ্গে প্রেমও হয়। সুপারস্টার নায়িকা ‘সূচনা’র (অভিনয়ে মিমি চক্রবর্তী) আগমন হওয়া মাত্রই আসল শাকিবের সূচনা হয়। তারপরেই ছবির মেজাজ এবং সুর বদলে যায়। সরি, সুর তো নয় কেবল গুলির শব্দ। একই ছবিতে দুই ফ্লেভার। শাকিব এই দুটো ভূমিকাতেই সমান তালে ফ্রেমের পর ফ্রেম জুড়ে রয়েছেন। ছবির শুরুটা একটু ধীর গতির হলেও, বিশ্বাস করুন, পিকচার আসলে শুরু হয় তুফানের এন্ট্রির পর। গল্পের ডিটেলে যাচ্ছি না। যে সরকার এই গ্যাংস্টার তুফানের সাহায্য নিয়েছিল সেই সরকার তাকে শেষ করে দিতে তৎপর। কাট, এন্ট্রি আরেক শো-স্টপারের। চঞ্চল চৌধুরি। তিনি এখানে অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার ‘আক্রম’। শাকিবের ‘তুফান’-এর পাশে দুর্দান্ত কনট্রাস্ট তৈরি করে অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরির ধূর্ত ‘আক্রম’। শাকিব খান এবং চঞ্চল চৌধুরির ডুয়েল দেখার মতো।
এই ছবি পুরুষ প্রধান। তবু সেখানে নিজস্ব ছাপ রেখেছেন অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী এবং মাসুমা রহমান নাবিলা। চিত্রনাট্যের যতটুকু সাহায্য পেয়েছেন, নিজের স্পেস ছিনিয়ে নিয়েছেন মিমি এবং মাসুমা। মিমি যে এই ছবির ‘উড়া ধূরা’ ফ্যাক্টর সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। এবং মাসুমার উপস্থিতি হল রিলিফের মতো। তুফানের কৌশলী হিসেবে লোকনাথ দে চমৎকার। তুফানের সঙ্গে তাঁর প্রথম দেখা হওয়ার দৃশ্য উপভোগ্য। শাকিবের সঙ্গে লোকনাথ ছাড়াও যোগ্য সঙ্গত দিয়েছেন মিশা সওদাগর, গাজী রাকায়েত, সুমন আনওয়ার ও ফজলুর রহমান বাবু। চিত্রনাট্যে এই অভিনেতাদের আরও বেশি জায়গা দেওয়া উচিত ছিল। গল্পে যুক্তি তক্কো না থাকলেও এন্টারটেনমেন্ট আছে। সেটাই বক্স অফিসে বাজি লড়বে। ছবির দৈর্ঘ্য একটু কম হলেও ক্ষতি হত না। যে ‘শান্ত’কে দিয়ে ছবি শুরু হয়েছিল, তার অন্তর্ধানের পর কারও কোনও মাথাব্যথা রইল না সেও এই তুফানকে জায়গা করে দেওয়ার জন্যই।
প্রীতম হাসান এবং দেবশ্রী অন্তরার গাওয়া ‘লাগে উড়া ধূরা’ গানটা ছবির শেষে বাড়তি পাওনা। তবে পাওনা আরও আছে। চঞ্চল হয়ে সিট ছেড়ে উঠে পড়লেই মিস। কারণ শেষ দৃশ্যে চঞ্চল চৌধুরি এবং শাকিব খানের এন্ড গেম-এ রয়েছে সিক্যুয়েলের সূচনা! আপনি যদি 'বাহুবলী' এবং 'অ্যানিমাল' দেখার জন্য পেক্ষাগৃহে ভিড় করতে পারেন তাহলে তুফান ও আপনাকে দেখতে হবে । কারণ এই সব ছবির নিরিখে এই বাংলা অ্যাকশন থ্রিলার প্যাকেজিং-এ আধুনিক এবং পাল্লা দেওয়ার ক্ষমতা রাখে ।
\
[আরও পড়ুন: ‘কষ্ট করলেই কেষ্ট মেলে’, পা ফুলে ঢোল সায়ন্তিকার! আচমকাই কী হল বিধায়ক-নায়িকার?]