অনির্বাণ বিশ্বাস: বিধ্বংসী আগুনের ব্যাপ্তি হোক বা জরাজীর্ণ বাড়ি ভেঙে সাধারণ মানুষের চাপা পড়ার ঘটনা৷ উদ্ধারকাজ করতে গিয়ে অনেক সময়ই সমস্যার মুখে পড়তে হয় দমকলকর্মীদের৷ এবার তাই কলকাতা পুলিশের মতো দুর্দান্তের মতো ইউএভি বা ড্রোন ক্যামেরা দফতরের কাজে অন্তর্ভুক্ত করা যায় কি না তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করলেন দমকল কর্তারা৷ দমকলমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “দমকলের বিভিন্ন্ ক্ষেত্রে আধুনিকীকরণের কাজ চলছে৷ টেকনিক্যাল দিক খতিয়ে দেখে যদি দফতরের কাজের সুবিধা হয় তা হলে নেওয়া যেতেই পারে৷ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে৷”
বড়বাজারের নন্দরাম মার্কেট হোক কিংবা পার্ক স্ট্রিটের স্টিফেনস কোর্টের অগ্নিকাণ্ড৷ শহরের বড় বড় আগুন নেভানোর কাজ করতে গিয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে দমকল দফতরকে৷ সম্প্রতি জেশপ কারখানার আগুন নেভাতে গিয়ে কোথা থেকে আগুন লেগেছে বা তার উৎসস্থল কী তা খুঁজে পেতেই বেশ বেগ পেতে হয় দমকল বিভাগকে৷ কিন্তু দুর্দান্তের মতো যদি কোনও ড্রোন ক্যামেরা দমকলের হাতে থাকত তাহলে তার মাধ্যমেই উপর থেকে আগুনের ব্যাপ্তি সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া গেলে অনেক সুবিধা হত বলে মনে করছেন দমকল আধিকারিকরা৷ একদিকে যেমন আগুনকে অ্যারেস্ট করতে সুবিধা হবে তেমনই পরবর্তী পদক্ষেপের পরিকল্পনাও সেরে ফেলা সম্ভব হবে দ্রূত৷ তাতে বিষয় সম্পত্তির ক্ষতি এড়িয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার কাজে বাড়তি সুবিধা পাবেন দমকলকর্মীরা৷ দমকলকর্মীরাও মনে করছেন সাধারণ ড্রোন যে উচ্চতায় উঠে ছবি পাঠায় তাতে আগুনের হলকা বা তাপ পৌঁছতে পারবে না৷ ফলে ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়েই কোনও ঝঞ্ঝাট ছাড়াই গোটা এলাকার ছবি বুঝতে পারবেন শীর্ষ আধিকারিকরা৷
এরই পাশাপাশি গত বছর শহরের জরাজীর্ণ বাড়ি ভেঙে পড়ে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে৷ কিন্ত ড্রোন থাকতে উদ্ধার কাজ চালানোর ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা মিলতে পারে৷ ধ্বংসস্তূপের ভিতরের পরিস্থিতি থেকে কেউ আটকে রয়েছে কি না তাও বাইরে বসেই জানতে পারবেন শীর্ষ আধিকারিকরা৷ আগুন নেভানোর কাজে ভারতে সে ভাবে ড্রোন ক্যামেরার ব্যবহার শুরু না হলেও বিদেশে ড্রোনের ব্যবহার হয় প্রায় সর্বত্র৷ আর ড্রোনের সৌজন্যেই আগুন নেভানোর কাজ থেকে উদ্ধারকাজে গিয়ে প্রাণের হদিশ পাওয়ার মতো ভূরিভূরি উদাহরণ রয়েছে৷
কী ধরনের সুবিধা হয় এই ড্রোন ক্যামেরার ব্যবহারে? দমকল আধিকারিকদের মতে কোনও আগুনের ব্যাপ্তি ছবি আগুনের কাছে না গিয়েও বোঝা সম্ভব৷ কোনও প্রান্ত থেকে আগুন লেগেছে এবং হাওয়ার সাহায্য নিয়ে কোনও দিকে তা অগ্রসর হচ্ছে তাও বোঝা যেতে পারে৷ সেই মতো আশপাশের বাসিন্দা সরিয়ে নেওয়া যেতে পারে৷ কোনও বহুতলের ক্ষেত্রে ছাদে কেউ আটকে রয়েছে কি না বা তাঁকে কীভাবে উদ্ধার করা হবে সেই পরিকল্পনাও করা সম্ভব ড্রোনের সাহায্যে৷ আগুনের পাশাপাশি শহরের কোনও জরাজীর্ণ বাড়ি বা ভূমিকম্প ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির ভিতর কী অবস্থা তাও ড্রোনের নজরে সহজেই বুঝতে পারবেন উদ্ধারকারীরা৷ দমকল কর্তাদের তথ্য অনুযায়ী জরাজীর্ণ বাড়ির ভিতরের কি অবস্থা তা অনেক সময় বাইরে থেকে বোঝা যায় না৷ প্রাণের ঝুঁকি নিয়েই অনেক সময় জরাজীর্ণ বাড়ির বাকি অংশ ভাঙার কাজ করতে হয়৷ ড্রোন হাতে এসে সেই কাজ অনেকটা একই সঙ্গে ঝড় বা বন্যার মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ক্ষেত্রেও ড্রোনের সাহায্য সূদুরপ্রসারী হতে পারে বলে মনে করছেন দমকল আধিকারিকরা৷ দেশে এই মুহূর্তে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, ভারতীয় সেনার উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা এই ড্রোন রয়েছে৷ তবে বহুমূল্য ড্রোনের কেনার বিষয়টি চিন্তা ভাবনার স্তরে থাকবেও বেসরকারি বিপর্যয়ের সময় ড্রোন ভাড়া নেওয়া যায় কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে৷
The post আগুন মোকাবিলায় ড্রোন নামাবে দমকল appeared first on Sangbad Pratidin.