অর্ণব আইচ: ৪২০। প্রতারণার অভিযোগে কারও দিকে আঙুল উঠলে উল্লেখ করা হত এই নম্বরটি। কিন্তু এবার থেকে আর ‘৪২০’ নম্বরটিরই কোনও মূল্য নেই। বরং একই উদ্দেশ্য কাউকে ৪২০-র বদলে ৩১৮ বলে ডাকলেও বোধহয় ভুল হবে না। কারণ, ভারতীয় দণ্ডবিধিতে ৪২০ ধারাটি ছিল প্রতারণার। কিন্তু নতুন আইন ভারতীয় ন্যায় সংহিতায় প্রতারণার ধারা ৩১৮।
আর কলকাতা পুলিশের ইতিহাসে এই ৩১৮ নম্বরটিই একটি অধ্যায় নিয়ে এল। কারণ, ভারতীয় ন্যায় সংহিতায় প্রথম মামলাটি প্রতারণা ও জালিয়াতির, যেগুলো এই নতুন আইনের ৩১৮ ও ৩৩৬ ধারায়। রবিবার রাত বারোটা পার হওয়ার পরই ১ জুলাই দক্ষিণ কলকাতার বাঁশদ্রোনি থানায় দায়ের হয়েছে এই মামলাটি। যদিও এদিন কলকাতার আদালতগুলোতে যা মামলাগুলো উঠেছে, তা মূলত পুরনো আইন ভারতীয় দণ্ডবিধিতেই। কারণ, এই মামলাগুলো দায়ের হয়েছে ৩০ জুনের মধ্যে। লালবাজারের এক কর্তা জানান, এদিন সকাল থেকে কলকাতা পুলিশ এলাকার ১০টি ডিভিশনের প্রায় ৮০টি থানায় বিভিন্ন মামলা দায়ের হতে থাকে। সেগুলো ভারতীয় ন্যায় সংহিতা বা বিএনএস-এর আওতায়। যদিও কয়েকটি থানায় কোনও মামলাই দায়ের হয়নি। লালবাজারের এক কর্তার মতে, বিএনএস-এর প্রথম দিনে কলকাতা পুলিশ এলাকায় মোট মামলার সংখ্যা প্রায় দুশো।
[আরও পড়ুন: মুদি দোকানের CCTV-তে ‘অপহরণ’-এর ফুটেজ! হস্টেলে গণধোলাই কাণ্ডে ধৃতদের মোবাইল পরীক্ষা]
এদিনও নতুন আইনে সাইবার মামলা ও আরও কিছু বিশেষ মামলা নিয়ে কলকাতা পুলিশের অনলাইন ক্লাস নেন আইন বিশেষজ্ঞরা। এই অনলাইন ক্লাসে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ কমিশনার থেকে শুরু করে লালবাজারের প্রত্যেক পুলিশকর্তা ও থানার ওসিরা। যদিও থানার আধিকারিকরা জানান, তাঁরা এখনও নতুন আইন বা বিএনএস-এ সড়গড় হননি। তাই সারাক্ষণই থানার সেরেস্তা থেকে শুরু করে পুলিশ আধিকারিকদের সামনে ছিল ন্যায় সংহিতার বই। প্রত্যেককেই আইনটি ভালো করে বুঝতে বারবার বই বা মোবাইল খুলে অনলাইনে আইনের ধারা দেখতে হয়েছে।
রবিবার রাতে বাঁশদ্রোনি থানায় এসে এক মহিলা অভিযোগ জানান যে, অভিযুক্তরা নিজেদের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের আধিকারিক পরিচয় দিয়ে ভুয়া ফিক্সড ডিপোজিট শংসাপত্র তাঁকে জমা দিয়েছিল। তার জন্য ভুয়ো সইও করেন ওই শংসাপত্রে। এভাবে কয়েক দফায় অভিযুক্তরা ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা তুলে নিয়ে পালিয়ে যায়। পুলিশ প্রাথমিকভাবে এই ঘটনাটি খতিয়ে দেখে। কিন্তু এই মামলা দায়ের করতে গিয়ে দেখা যায়, রাত বারোটা পেরিয়ে গিয়ে ১ জুলাই হয়ে গিয়েছে। তাই নতুন ধারায় প্রতারণা, জালিয়াতির মামলা দায়ের করা হয়। যদিও পুরনো কোনও ঘটনার অভিযোগ দায়ের করতে এলে এখনও ভারতীয় দণ্ডবিধিতে মামলা দায়ের হতে পারে। আবার ভারতীয় দণ্ডবিধিতে যে মামলাগুলো চলছে, সেগুলো একইভাবে চলবে। শুধু এদিন থেকে নতুন মামলাগুলোই নতুন আইন মেনে শুরু হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।