সুদীপ রায়চৌধুরি: কথায় বলে ‘মেঘ না চাইতেই জল’!
কিন্তু যদি মেলে জলাশয়?
তাও আবার এক-আধটা নয়, একলপ্তে পাঁচটা৷ সব মিলিয়ে আয়তন ১০০.৭৪ হেক্টর অর্থাৎ সাড়ে চারশো বিঘের উপর৷ গোটাটাই সম্পূর্ণ বিনামূল্যে৷
যা হওয়ার, তাই হয়েছে৷ খুশির বান ডেকেছে এখন রাজ্য মৎস্য উন্নয়ন নিগমে৷ আর তারপরই বুক ঠুকে রাজ্যের মাছবাজারে অন্ধ্র-ওডিশার দাদাগিরি বন্ধ করতে কোমর বাঁধছেন নিগম কর্তারা৷
সম্প্রতি হিডকো-র পক্ষ থেকে নিউ টাউনের বিভিন্ন এলাকায় মোট ৫টি বড় মাপের জলাশয় মাছচাষের জন্য তুলে দেওয়া হয়েছে রাজ্য মৎস্য উন্নয়ন নিগমের হাতে৷ নিগম-সূত্রে খবর, এই পাঁচটি জলাশয়ে ভেটকি ও চিতলের মতো বড় মাছের চাষ করার কথা ভাবা হয়েছে৷ পাশাপাশি বড় রুই-কাতলা, বাজারে যা ‘কাটা পোনা’ নামে পরিচিত, ভাবা হচ্ছে তার কথাও৷ এতদিন বাংলার মাছবাজারে এই ভেটকি-চিতল ও কাটা পোনা জোগান দিয়ে আসছে অন্ধ্রপ্রদেশ ও ওড়িশা৷ যে কারণে বন্ধ বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে এই দুই রাজ্যের ‘সাপ্লাই লাইন’ বিঘ্নিত হলে বাঙালির পাতে হাহাকার শুরু হয়৷ অতীতে বিভিন্ন সময় ট্রাক ধর্মঘট বা সাম্প্রতিককালে ‘হুদহুদ’ ও ‘নীলম’-এর মতো সামুদ্রিক ঘুর্ণিঝড়ে়র অব্যহিত পরেই যে অভিজ্ঞতা আম বাঙালির৷ এই দুর্ভোগ থেকে বঙ্গবাসীকে নিস্তার দিতে অনেকদিন ধরেই বড় মাছের ক্ষেত্রে রাজ্যকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার কথা ভাবছেন মৎস্য দফতরের কর্তারা৷ এখন হিডকোর কাছ থেকে ৪৫৩.৩৩ বিঘের জলাশয় পেয়ে যাওয়ায় সেই মনোবাসনার বাস্তবায়নে তোড়জোড় শুরু হয়েছে মত্স্য উন্নয়ন নিগমে৷
সম্প্রতি এক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছিলেন, প্রত্যেক দফতরের যার যা কাজ, সেটা সেই দফতরই করবে৷ এক দফতরের নির্দিষ্ট কাজের ক্ষেত্রে অন্য কোনও দফতর পা রাখতে পারবে না৷ মুখ্যমন্ত্রীর সেই নির্দেশের প্রেক্ষিতে সরকারের সমস্ত দফতরকে চিঠি দিয়েছিলেন মৎস্য দফতরের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব সুমন্ত্র চৌধুরি৷ চিঠির বক্তব্য ছিল, যেহেতু মাছ চাষ করা মৎস্য দফতরের কাজ, তাই রাজ্য সরকারের বিভিন্ন্ দফতরের হাতে থাক জলাশয়গুলি মাছচাষের জন্য মৎস্য দফতরকেই হস্তান্তর করা হোক৷ মৎস্য সচিবের সেই আর্জির প্রেক্ষিতেই নিজেদের হাতে থাকা পাঁচটি জলাশয় হস্তান্তর করার সিান্ত হিডকোর৷ হিডকোর পক্ষ থেকে নিউ টাউনের যে পাঁচ জলাশয় তুলে দেওয়া হচ্ছে, তার মধ্যে দু’টি রীতিমতো বড়, ৩০ হেক্টর বা ১৩৫ বিঘা করে৷ প্রথমটি জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের পানীয় জল প্রকল্পের আটটি পুকুর সমন্বিত জলাশয়৷ দ্বিতীয়টি নিউটাউনের কঠিন বর্জ্য নিষ্কাশন প্রকল্পের জলাশয়৷ এছাড়াও ১৭ হেক্টর বা সাসোড়ে ৭৬ এবিঘার ‘দিলের ভেড়ি’ ও নবাবপুরের ইকো আরবান ভিলেজের ১৫ হেক্টর বা সাড়ে ৬৭ বিঘার জলাশয় দু’টি৷ পঞ্চমটি ঠাকুরডোবার ৮.৭৪ হেক্টরের জলাশয়, যা এলাকায় বিসর্জনের ঘাট হিসাবে পরিচিত৷ নিগম-সূত্রে খবর, চলতি সপ্তাহেই জলাশয়গুলির পরিবেশ-পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে আধিকারিকরা যাচ্ছেন৷ তার পরই ঠিক করা হবে কোথায় কোন মাছের চাষ করা হবে৷
রাজ্য মৎস্য উন্নয়ন নিগমের এমডি সৌম্যজিত্ দাস জানাচেছন, “দীর্ঘ দিন ধরে আমাদের রাজ্যে মাছের চারা উৎপাদনে জোর দেওয়া হয়ে এসেছে৷ আমাদের কাছ থেকে সেই চারা মাছ কিনে অন্ধ্রপ্রদেশ নিজেদের পুকুরে চাষ করে বড় করে দশ গুণ দামে আবার আমাদেরকেই বিক্রি করে আসছে৷ ভেটকি বা চিতলের মতো দামি মাছের ক্ষেত্রেও অন্য রাজ্যের মুখাপেক্ষী থাকতে হয় আমাদের৷ এই ছবিটা আমরা পাল্টাতে চাইছি৷ আমরা চাইছি নিজেদের মাছ নিজেরাই উৎপাদন করতে৷ হিডকোর কাছ থেকে পাঁচটা বড় জলাশয় পেয়ে যাওয়ায় সেই পরিকল্পনা এবার কাজে লাগাতে চাইছি৷” তাঁর কথায়, ইচ্ছে আছে একটা জলাশয়ে গলদা চিংড়ির চাষ করার৷ কিন্তু সবকিছুই চূড়ান্ত হবে জলাশয়গুলি আমরা নিজের চোখে দেখে আসার পর৷”
The post অন্ধ্রের দাদাগিরি ভাঙতে বড় মাছ চাষে নামছে রাজ্য appeared first on Sangbad Pratidin.