সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: ইলিশ! নাম শুনলেই আমবাঙালির জিভে জল। সেই কবে ভোজনরসিক বাঙালির খাদ্যতালিকায় বিশেষ জায়গা করে নিয়েছিল সমুদ্রের এই রুপোলি শস্য। হবে নাই বা কেন? ভাজা, ভাপা, ঝালে-ঝোলে এই ইলিশই যে হরেক স্বাদের!
বাঙালির সেই রসনাতৃপ্তিরই কাউন্টডাউন শুরু এবার। আর মাত্রই ক’টা দিনের অপেক্ষা। তারপরই মৎস্যজীবীদের দল বেরিয়ে পড়বে ইলিশ শিকারে। সমুদ্রযাত্রায়। সাজোসাজো রব এখন জেলেপাড়ায়। মৎস্য দপ্তরের আশা, এবার বর্ষার মরশুমে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে সমুদ্র থেকে মোহনার মিষ্টি জলে ডিম পাড়তে ঝাঁকে ঝাঁকে ঢুকবে ইলিশ। ইলিশে ছেয়ে যাবে রাজ্যের বিভিন্ন বাজার। গত মরশুমের অতৃপ্ত স্বাদ পূরণ হবে এবার।
[আরও পড়ুন: ‘পরিযায়ীদের আমিনিয়ার বিরিয়ানি দেব?’ শতাব্দীর পর ফের বেফাঁস মন্তব্য তৃণমূল বিধায়কের]
মাছের প্রজনন বাড়াতে ১৫ এপ্রিল থেকে ১৪ জুন ফি বছর মাছ ধরায় বলবৎ রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। লকডাউনের জেরে এবার আবার ২৪ মার্চ থেকেই বন্ধ নদী ও সমু্দ্রে মাছশিকার। ফলে মৎস্যজীবী পরিবারগুলিতে ঘনিয়ে এসেছিল চরম অনটন। মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা আমফান। গত মরশুমে ইলিশের আকাল ছিল নদী, সমুদ্রে। খারাপ আবহাওয়া ও দুর্ঘটনার কারণে মৎস্যজীবীদের অনেকেই বেরোতে পারেননি ইলিশ শিকারে। তবে এবার নাকি খরা কাটিয়ে প্রচুর ইলিশ উঠবে জালে।
রাজ্য মৎস্য দপ্তরের পর্যবেক্ষণ, মূল্যায়ন, ক্রয়বিক্রয় ও পরিসংখ্যান (MEMS) বিভাগের তথ্য অনুযায়ী গতবছর রাজ্যে ইলিশের উৎপাদন ছিল মাত্র ৫ হাজার মেট্রিকটন। যেখানে মরশুমে ইলিশের গড় উৎপাদনের পরিমাণ ১৪—১৫ হাজার মেট্রিকটন। ২০১৮ তে ইলিশ উৎপাদন হয় ১৮ হাজার মেট্রিক টনের কাছাকাছি। ইলিশপ্রিয় বাঙালিকে আশ্বস্ত করে রাজ্য মৎস্যবিভাগের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, আবহাওয়া ও পরিবেশ অনুকূল থাকলে এবার রাজ্যে ইলিশের উৎপাদন পৌঁছতে পারে ১৮-২০ হাজার মেট্রিকটন পর্যন্ত।
[আরও পড়ুন: উদ্বেগের মাঝেও স্বস্তি, ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে কমেছে সংক্রমণের হার]
মৎস্য দপ্তরের এই সুখবরে শুধু ভোজনরসিক বাঙালিই নন, নতুন আশায় বুক বেঁধেছেন উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি ও মুর্শিদাবাদের প্রায় দেড় থেকে দু’লক্ষ মানুষ, যাঁদের রোজগার শুধুই ইলিশ নির্ভর। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে নানা মেরামতির পর তাই নৌকা ও ট্রলারে পড়েছে রঙের পোঁচ। ইলিশের জাল বোনার কাজও ইতিমধ্যেই শেষ। রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে প্রায় ১৫ হাজার নৌকা, ভুটভুটি ও ট্রলার নিয়ে ১৫ জুন মৎস্যজীবিরা বের হবেন ইলিশশিকারে। গভীর সমুদ্র থেকে ফিরে ইলিশবোঝাই ট্রলার একে একে ভিড়বে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার কাকদ্বীপ, নামখানা, ফ্রেজারগঞ্জ, নিশ্চিন্তপুর, রায়দিঘি, ডায়মন্ড হারবার ও পূর্ব মেদিনীপুরের দিঘা, শংকরপুর, খেজুরি এবং পেটুয়াঘাট মৎস্যবন্দরে। নৌকা ও ভুটভুটিতে চেপে মুর্শিদাবাদের ফারাক্কা, হাওড়ার শ্যামপুরে রূপনারায়ণ নদীতে, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ক্যানিং, রায়চকের নদীতেও চলবে ইলিশ শিকার।
ওয়েস্টবেঙ্গল ইউনাইটেড ফিশারমেন অ্যাসোসিয়েশনের সহকারী সম্পাদক বিজন মাইতির আশা, সবমিলিয়ে এবার ইলিশের উৎপাদন ২০ হাজার মেট্রিক টনের ওপরেও পৌঁছাতে পারে। তাঁর মতে, লকডাউন আর মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা মিলিয়ে দীর্ঘদিন নদী ও সমুদ্রে ভুটভুটি, ট্রলার এমনকি জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় জলে দূষণের মাত্রা অনেকটাই কম। জলযান না থাকায় নষ্ট হয়নি ইলিশের প্রিয় খাদ্য ভাসমান প্ল্যাঙ্কটনও। তাই ইলিশের ঝাঁক আসবেই। কাকদ্বীপের মৎস্যজীবি প্রফুল্ল দাস, ভাস্কর দেবনাথরাও জানান, জলে দূষণ না থাকায় এবার ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ সাগর থেকে মোহনার স্বচ্ছ মিষ্টি জলে ঢুকবে ডিম পাড়তে। হয়ত এবার একটু সুখের মুখ দেখবেন তাঁরা।
এদিকে, লকডাউন পর্ব মিটিয়ে ১৫ জুনই খুলে যাচ্ছে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরের পাইকারি মাছবাজার। আড়তমালিকদের আশা, ইলিশ ব্যবসা এবার রমরমিয়েই চলবে। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার সহ মৎস্য অধিকর্তা (মেরিন) জয়ন্ত কুমার প্রধান আশাবাদী এ মরশুমে কেটে যাবে গতবারের ইলিশের খরা। তবে ইলিশ ধরতে বেরোনোর আগে মৎস্যজীবিদের সতর্ক করে তিনি জানিয়েছেন, কোনওমতেই ২৩ সেন্টিমিটারের কম দৈর্ঘ্যের ইলিশ ধরা যাবে না। ব্যবহার করতে হবে ৯০ মিলিমিটারের বেশি ফাঁসের ইলিশের জাল।
The post ইলিশ শিকারে এ মাসেই সমুদ্রযাত্রায় পাড়ি মৎস্যজীবীদের, রুপোলি শস্যের খরা কাটার আশা appeared first on Sangbad Pratidin.