সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: মাসদুয়েকের অপেক্ষার অবসান। দোরগোড়ায় ইলিশের মরশুম। গভীর সমুদ্রে পাড়ি মাছমারাদের দলের। ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা পেরিয়ে শুক্রবার থেকে নদী-সমুদ্রে ফের শুরু হল ইলিশ শিকার।
বঙ্গোপসাগরে ইলিশের প্রজনন বাড়াতে ইলিশ ধরার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়সীমায় বলবৎ থাকে সরকারি আইন। ১৪ এপ্রিল-১৫ জুন-এই দুমাস সমুদ্রে, নদীতে মাছ ধরা বন্ধের উপর রয়েছে সরকারি নিষেধাজ্ঞা। সেই সময়কাল শেষ হতে বাকি আর মাত্র কয়েকটা ঘণ্টা। মৎস্যজীবীদের চোখেমুখে তাই খুশির ঝিলিক। নতুন আশায় বুক বেঁধে সমুদ্রযাত্রার প্রস্তুতিপর্ব তাঁদের প্রায় সারা। রুপোলি শস্যের টানে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার উপকূলীয় ঘাটে ঘাটে ইতিমধ্যেই একে একে ট্রলার এসে ভিড়ছে। বিভিন্ন জেলার নানা প্রান্ত থেকে ঘাটে হাজির হয়েছেন মৎস্যজীবীরাও।
চূড়ান্ত ব্যস্ততা এখন কাকদ্বীপ, নামখানা, ডায়মন্ড হারবার, ফ্রেজারগঞ্জ, সাগর, বকখালি, রায়দিঘির ঘাটে ঘাটে। ট্রলারে তোলা হচ্ছে জ্বালানি তেল, বরফ, নির্দিষ্ট মাপের ইলিশ ধরার জাল, পানীয় জল, খাবার-সহ প্রয়োজনীয় আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র। গভীর সমুদ্রে মৎস্যজীবীদের জীবন বাঁচাতে ট্রলারে লাইফ জ্যাকেট ঠিকঠাক রয়েছে কি না, ট্রলারের পরিকাঠামো আশাপ্রদ কি না সেসবও শেষবারের মতো খতিয়ে দেখে নিয়েছেন ট্রলার মালিক ও ট্রলারের নাবিকরা। ট্রলার আরোহী মৎস্যজীবীদের মঙ্গলকামনায় সেরে ফেলা হয়েছে পুজোপাঠও। সমুদ্রযাত্রার যাবতীয় আয়োজন শেষে এখন শুধুই যাত্রা শুরুর প্রহর গোনার পালা।
[আরও পড়ুন: মায়ের গয়না ‘লুঠ করে’ নতুন বাইক! বেপরোয়া গতিতে চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মৃত্যু যুবকের]
পাথরপ্রতিমার মৎস্যজীবী রঞ্জন মিস্ত্রি কিংবা সানকিজাহানের গোবিন্দ দাসরা জানিয়েছেন, ‘‘ট্রলারে জাল প্রস্তুত। বছরে এই দুমাস খুব কষ্টে দিন কাটে। সংসার প্রায় চলে না বললেই হয়। তাই মাছ ধরার মরশুম শুরু হতে চলায় আশায় রয়েছি।’’কাকদ্বীপের অক্ষয়নগরের বাসিন্দা মৎস্যজীবী সহদেব দাস কিংবা হারউড পয়েন্ট কোস্টাল থানার মৎস্যজীবী সুভাষ দাসরা জানান, ‘‘জীবন বাজি রেখে গভীর সমুদ্রে ইলিশ ধরতে বেরোচ্ছি। সকলের মঙ্গল কামনায় ট্রলারে পুজো করেছি। আশায় আছি, ট্রলারভর্তি ইলিশ নিয়ে ফিরব, হাসি ফুটবে সংসারে পরিবার-পরিজনদের মুখে।’’
ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনাইটেড ফিশারম্যান অ্যাসোসিয়েশনের সহকারী সম্পাদক বিজন মাইতি বলেন, ‘‘দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ৫ হাজারের বেশি ছোট-বড় ট্রলার বর্ষার মরশুমে গভীর সমুদ্রে ইলিশ ধরতে বের হয়। পুবালি হাওয়া আর ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টিতে ইলিশের ঝাঁক আসে সাগর মোহনায়। ইলিশ আসার সেই অনুকূল আবহাওয়া এখনও তৈরি হয়নি। তবুও দুমাস পর সমুদ্রে ইলিশ ধরার ক্ষেত্রে সরকারি নিষেধাজ্ঞা উঠতে চলায় প্রথম ইলিশ মরশুমে অন্তত কিছু ইলিশ যদি জালবন্দি করা যায় সেই আশাতেই রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূলবর্তী এলাকার মৎস্যজীবী মহল্লা।’’