shono
Advertisement

জিআই তকমায় উজ্জ্বল কালোনুনিয়া চাল থেকে কড়িয়াল শাড়ি, বাংলার মধু-টাঙ্গাইল-গরদকেও স্বীকৃতি

খুব শীঘ্রই কেন্দ্রের জিআই কর্তৃপক্ষ রাজ্যের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগকে চিঠি দিয়ে এই সুখবর জানাবে।
Posted: 10:06 AM Jan 04, 2024Updated: 10:06 AM Jan 04, 2024

সুমিত বিশ্বাস: পুণের সংস্থাকে হারিয়ে সুন্দরবনের মধু-র জিআই স্বত্ব বা জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশনস পেল বাংলা। সেই সঙ্গে বাংলার আরও চারটি সম্পদকে জিআই স্বত্ব দেওয়া হয়েছে। গরদ, কড়িয়াল, টাঙ্গাইল শাড়ি ও উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ির সুগন্ধি কালোনুনিয়া চাল। কেন্দ্র সরকারের জিআই পোর্টালের স্টেটাসে বুধবার থেকেই রেজিস্টার্ড দেখা যাচ্ছে। ফলে শংসাপত্র পেতে এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। খুব শীঘ্রই এই মর্মে কেন্দ্রের জিআই কর্তৃপক্ষ রাজ্যের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগকে চিঠি দিয়ে এই সুখবর জানাবে।

Advertisement

একসঙ্গে বাংলার পাঁচটি সম্পদ জিআই স্বত্ব পাওয়াকে সাফল্য হিসাবেই দেখছে রাজ্যের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগ। বিশেষ করে সুন্দরবনের মধু-র জিআই স্বত্ব-র জন্য যেভাবে পুণের একটি সংস্থা আবেদন করে ওই প্রাকৃতিক মধুর একচেটিয়া ব্যবসা করতে চেয়েছিল। সেই জায়গায় বাংলা ওই তকমা অর্জন করায় বনদপ্তরের আওতাধীন পশ্চিমবঙ্গ বন উন্নয়ন নিগম এই সাফল্যকে রীতিমতো গর্ব হিসাবে দেখছে। কারণ, পশ্চিমবঙ্গ বন উন্নয়ন নিগমের তত্ত্বাবধানেই সুন্দরবনের মউলিরা ওই মধু সংগ্রহ করেন। ওই নিগম তা প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে বাজারে এনেছে দীর্ঘকাল আগে। যা ‘মৌবন’ নামে পরিচিত।

ওই মধু এখন বন উন্নয়ন নিগমের বিভিন্ন কটেজ ও তাদের বিভাগীয় অফিসের পাশাপাশি আলিপুর, গড়চুমুক, পুরুলিয়ার সুরুলিয়া মিনি জু, শহর পুরুলিয়ার সুভাষ উদ্যান, সজনেখালির মহিলা স্বনির্ভর দলের বিপণি-সহ রাজ্য জুড়ে প্রায় ৫০টি জায়গায় পাওয়া যাচ্ছে। গত বছর ৩১ আগস্ট-ই ভারত সরকারের জিআই জার্নালে সুন্দরবনের মধু প্রকাশিত হয়। ২০২১ সালের ১২ জুলাই সুন্দরবনের মধু-র জিআই স্বত্ব-র জন্য আবেদন করা হয়। পশ্চিমবঙ্গ বন উন্নয়ন নিগম রাজ্যের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের কাছে আবেদন করার পরেই ওই বিভাগ কেন্দ্রের জিআই কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানায়। যদিও পুণের ওই সংস্থা ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে আবেদন করে। এই বিষয়টি নজরে আসতেই রাজ্যের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের তরফে লিখিত অভিযোগ জানানো হয় চেন্নাইয়ের জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশনস কর্তৃপক্ষকে।

[আরও পড়ুন: ‘দলের ব্যাপারটা দলকে বুঝে নিতে দিন’, এবার অর্জুনকে তোপ কুণাল ঘোষের]

নানা নথি ও প্রমাণপত্র-সহ সুন্দরবনের মউলিরা অভিযোগ জানান রাজ্যের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দপ্তরের আওতায় থাকা পেটেন্ট ইনফরমেশন সেন্টারে। তার পরেই এই অভিযোগ জিআই কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরে রাজ্যের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগ। সেই সঙ্গে পুণের ওই বেসরকারি সংস্থার আবেদনের বিরোধিতাও করে।
২০২২ সালে এই সুন্দরবনের মধু বিক্রি করে পশ্চিমবঙ্গ বন উন্নয়ন নিগম ৫০ লক্ষ টাকা আয় করে। ২০২৩ সালে যা এক কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে। ২৭৩টি যৌথ বন পরিচালন কমিটির প্রায় হাজার দুয়েক মউলি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সুন্দরবনের জঙ্গল থেকে এই খাঁটি মধু সংগ্রহ করেন। ২০২২ সালে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ১৬ টন মধু সংগ্রহ করলেও গত বছর অর্থাৎ ২০২৩-এ ৪০ টন মধু সংগ্রহ করেছেন। এই কাজ করে ২০২৩ সালে তাঁরা পশ্চিমবঙ্গ বন উন্নয়ন নিগমের কাছ থেকে এক কোটি ১১ লক্ষ টাকা পান বলে জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ বন উন্নয়ন নিগম।

জিআই স্বত্ব পাওয়া উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ির কালোনুনিয়া চালকে ‘প্রিন্স অফ রাইস’ বলা হয়। ধানের রং কালো হলেও চাল কিন্তু একেবারে ধবধবে সাদা। বর্তমানে জলপাইগুড়ি সদর ছাড়াও হলদিবাড়ি, নাগরাকাটা, ধূপগুড়ি, রাজগঞ্জ, ময়নাগুড়িতে এই ধানের চাষ হয়। রকমারি পোলাও রান্নায় কালোনুনিয়ার জুড়ি মেলা ভার। বিঘাপ্রতি অন্য জাতের ধান যেখানে ১৫ থেকে সর্বোচ্চ ২০ মণ উৎপন্ন হয় সেখানে এ জাতের ফলন হয় সর্বোচ্চ আট মণ পর্যন্ত। অন্যান্য ধানে রাসায়নিক সার ব্যবহার করে ফলন বৃদ্ধি করা হয়। অন্যদিকে এই ধানের গুণমান রক্ষার জন্য রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সার ব্যবহার করা হয়। প্রকৃতিবান্ধব চাল হিসাবেই এর খ‌্যাতি। জলপাইগুড়ি কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের কর্তা বিপ্লব দাস বলেন, ‘‘কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ারেরও কিছু জায়গায় এর চাষ হয়। পরম্পরা মেনে কিছু চাষি এই ধান চাষ করেন। আমরা এই ধানের গুণমান বাড়াতে গবেষণাও করছি। রাজ‌্য কৃষিদপ্তর এর জিআই পেতে পদক্ষেপ করেছে।’’

সেই সঙ্গে কড়িয়াল সিল্ক শাড়ি মুর্শিদাবাদের মির্জাপুরেই শুধু রয়েছে। যা বিশ্ববিখ্যাত। তবে এই শাড়ি তৈরি করার শিল্পী ক্রমশই কমে আসছে। বাংলাদেশও এই শাড়ি তৈরি করে। টাঙ্গাইল ও গরদ শাড়িরও সুনাম রয়েছে বাংলা ছাড়িয়ে ভিন রাজ্যেও। এখন বিশ্ববাংলার বিভিন্ন স্টলেও রাখা হচ্ছে এইসব দামি শাড়ি। বিদেশেও যা সমাদৃত। বিশ্ববাংলার বিপণনের সঙ্গে যুক্ত এক কর্তা বলেন, ‘‘৫০ হাজার টাকা দামেও আমরা গরদ বিক্রি করেছি। টাঙ্গাইলের চাহিদা তো তুঙ্গে। মূলত হাতে বোনা কাপড়ের কারণেই এত দাম। এর জিআই পাওয়া মানে শিল্পীদের স্বীকৃতি এবং নিশ্চিন্ত আগামী।’’ মুর্শিদাবাদে নবাবি আমল থেকেই বিভিন্ন শাড়ির খ‌্যাতি। কড়িয়াল শাড়ি জিআই পাচ্ছে শুনে সেখানকার তাঁত শিল্পীরা খুশি। বাংলাদেশের কড়িয়ালের অবশ‌্য জগৎজোড়া নাম বলে জানিয়ে সেখানকার শাহ নওয়াজ নামে এক তাঁত শিল্পী তথা ব‌্যবসায়ী বলেছেন, ‘‘এবার আমাদেরও বিশ্বে কদর বাড়বে। রপ্তানিতে সুবিধা হবে জিআই ট‌্যাগ থাকলে।”

[আরও পড়ুন: বাগনানে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা, বেপরোয়া লরির ধাক্কায় মৃত সাব ইন্সপেক্টর ও হোমগার্ড]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement