shono
Advertisement

Breaking News

স্রেফ ভারতীয় হওয়ার জন্য মেলেনি নোবেল! জেনে নিন এই কৃতীদের সাফল্যের কাহিনি

সত্যিই কি ভারতে থাকলে নোবেল পাওয়া কঠিন? The post স্রেফ ভারতীয় হওয়ার জন্য মেলেনি নোবেল! জেনে নিন এই কৃতীদের সাফল্যের কাহিনি appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 04:47 PM Jan 27, 2020Updated: 04:50 PM Jan 27, 2020

শুভজিৎ মণ্ডল: প্রতিভার অভাব কোনওদিনই ছিল না এদেশে। কখনও পরিকাঠামোর অভাব, কখনও সুযোগ-সুবিধার অভাব, আবার কখনও স্রেফ সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন ভারতীয় প্রতিভাকে বিশ্বের মঞ্চে স্বীকৃতি পেতে দেয়নি। সদ্য নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় রবিবার বলছিলেন, ভারতে থাকলে নাকি তিনি নোবেল পেতেন না। অভিজিৎবাবুর এই মন্তব্যের পর অনেকেই তাঁকে তেড়েফুঁড়ে আক্রমণ শানিয়েছেন। কিন্তু, একটু ভাল করে ভেবে দেখলে বোঝা যাবে, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ নেহাৎ ভুল কিছু বলেননি। এমন অনেকেই আছেন যাঁরা হয়তো স্রেফ এই পোড়া দেশে জন্মগ্রহণ করার জন্য, বিশ্বের দরবারে সেরার স্বীকৃতি পাননি। ইউরোপের কোনও দেশে জন্মালে বা কর্মক্ষেত্র মার্কিন মুলুকে হলে হয়তো, তাঁদের নোবেল পাওয়া কেউ আটকাতে পারত না। আজ জেনে নেওয়া যাক, এমনই কিছু মানুষের গল্প।

Advertisement

আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু (Jagdish Chandra Bose): বিজ্ঞানচর্চায় সেই আদিমকাল থেকেই বিশ্বের অনেক দেশের থেকে এগিয়ে ভারত। চরক-শুশ্রুতের যুগ থেকে শুরু করে আব্দুল কালাম পর্যন্ত। কৃতী বিজ্ঞানীরা নিজেদের আবিষ্কারের মাধ্যমে আমাদের গর্বিত করে আসছেন। এই তালিকায় সর্বাগ্রে উচ্চারিত হবে জগদীশচন্দ্র বসুর নাম। একাধারে পদার্থবিদ, উদ্ভিদবিদ, জীববিজ্ঞানী এবং প্রথম কল্পবিজ্ঞান রচয়িতা আচার্য বসু। উদ্ভিদের প্রাণের অস্তিত্বের প্রমাণ, ক্রেসকোগ্রাফ যন্ত্রের মতো আবিষ্কার উদ্ভিদবিজ্ঞানে যুগান্তকারী। সর্বোপরি তাঁর বেতার তরঙ্গ নিয়ে গবেষণা, গোটা বিশ্বকে নতুন দিশা দিয়েছে। ১৮৯৮ সালে বসু নিজের সৃষ্ট অণুতরঙ্গ ভিত্তিক বেতার সংকেত প্রেরক ও গ্রাহক যন্ত্রের আবিষ্কার করেছিলেন। যাঁর নাম দেন মার্কারি কোহেরার। যন্ত্রটি কলকাতা বসেই তিনি নির্মাণ করেছিলেন। যন্ত্রটিতে যে প্রযুক্তি ব্যবহার করেছিলেন তার নাম সলিড স্টেট ডায়োড। ১৮৯৯ সালে বিভিন্ন জায়গায় প্রদর্শিত হয় তাঁর এই যন্ত্রটি। কিন্তু, বিশ্বের দরবারে তা স্বীকৃতি পায়নি। বছর দুই পরে ইউরোপে বসে মার্কনি এই একই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বেতার তরঙ্গ সফলভাবে পাঠান। জগদীশচন্দ্র বসুর প্রযুক্তি অবিকল নকল করেই মার্কনি রেডিও আবিষ্কার করেন। এবং স্বীকৃতিও পান। কথিত আছে, এক বন্ধু মারফৎ জগদীশচন্দ্র বসুর আবিষ্কারের কথা জানতে পারেন মার্কনি। তারপরই বসুর তত্ত্ব নকল করে বানিয়ে ফেলেন রেডিও তরঙ্গ। এই আবিষ্কারের জন্যই নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয় মার্কনিতে। বঞ্চিতই থেকে যান বোস।


সত্যেন্দ্রনাথ বসু (Satyendra Nath Bose): কোয়ান্টাম মেকানিকস বা গাণিতিক পদার্থবিদ্যা। এই গবেষণাক্ষেত্রে প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্ব সত্যেন্দ্রনাথ বসু। ১৯২০ সালে স্যার আলবার্ট আইনস্টাইনের সঙ্গে যৌথ গবেষণায় প্রকাশিত হয় তাঁর বিখ্যাত বোস-আইনস্টাইন পরিসংখ্যান। যা আজও পদার্থবিজ্ঞানের এক যুগান্তকারী অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়। একই সময়ে পিটার হিগসের সঙ্গে কৃষ্ণগহ্বর নিয়ে যুগান্তকারী গবেষণা করেন তিনি। আবিষ্কার করেন ঈশ্বর কণা বা হিগস-বোসন কণা। দুই বিজ্ঞানীর নাম অনুসারেই কণাটির এমন নামকরণ করা হয়। ১৯৬০ সালে এই গবেষণার কথা প্রকাশ্যে আনেন হিগস। গোটা বিশ্বে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা পান তিনি। হিগস এবং আইনস্টাইন দু’জনেই বিশ্ববন্দিত বিজ্ঞানী। কিন্তু, উপেক্ষিতই থেকে যান সত্যেন্দ্রনাথ বোস।

ডঃ উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী (Upendranath Brahmachari): একসময় ভারত-সহ গোটা বিশ্বের ত্রাস ছিল কালাজ্বর। সেই মারক ব্যাধির প্রতিষেধক আবিষ্কার করেন এক বাঙালি বিজ্ঞানী। ডঃ উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী। তাঁর যুগান্তকারী আবিষ্কার হাজার হাজার মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছে। অথচ, নোবেল পুরস্কারের মঞ্চে তিনি উপেক্ষিতই থেকে গিয়েছেন। ১৯২৯ সালে প্রথমবার নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পান। ১৯৪২ সালে বিশ্বের পাঁচজন স্বনামধন্য বিজ্ঞানী মনোনয়ন দেন ডঃ উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারীকে। কিন্তু, এবারেও অল্পের জন্য নোবেল থেকে বঞ্চিত হন তিনি।


আর কে নারায়ণ (R K Narayan): রবীন্দ্রনাথের পর ভারতীয় লেখক হিসেবে আরকে নারায়ণ সাহিত্যে নোবেল পাওয়ার সবচেয়ে কাছে পৌঁছে যান। সমসাময়িক সমাজ নিয়ে তাঁর কাজ এবং ইংরেজি সাহিত্যে তাঁর দক্ষতা আজও বিশ্ববন্দিত। মালগুড়ি ডে’জ, দ্য ব্যাচেলার অব আর্টস, দ্য গাইড নারায়ণের অমর সৃষ্টি। একাধিকবার নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়নও পান তিনি। বিখ্যাত ইংরেজ সাহিত্যিক জেফ্রে আর্চার নারায়ণকে ‘জিনিয়াস’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, “ওঁর অবশ্যই নোবেল পাওয়া উচিত ছিল।” হয়তো, ইউরোপে জন্মগ্রহণ করেননি বলেই উপেক্ষিত থেকে গেলেন নারায়ণ।


মহত্মা গান্ধী (Mahatma Gandhi): শান্তি-অহিংসা-সত্যাগ্রহ। মহত্মা গান্ধীর সম্পর্কে বোধ করি নতুন করে কিছু বলার নেই। গান্ধী সম্পর্কে আইনস্টাইনের বিখ্যাত সেই উক্তি, “কয়েক যুগ কেটে যাবে, তবু মানুষের পক্ষে বিশ্বাস করা কঠিন হবে যে, এমন একজন মানুষ রক্ত-মাংসের শরীরে সত্যিই এসেছিলেন, চলাফেরা করেছিলেন মাটির পৃথিবীতে।” কিন্তু, এত বড় শান্তির বাণী প্রচারক নোবেল কেন পেলেন না? বার পাঁচেক মনোনয়নও পেয়েছিলেন গান্ধীজি। প্রতিবারই কোনও না কোনও অজুহাতে তাঁকে বঞ্চিত করা হয়। নোবেল কমিটি নাকি ঠিকই করতে পারেননি, তিনি রাজনীতিবিদ নাকি সমাজকর্মী!


এঁরা ছাড়াও মেঘনাদ সাহা, হোমি জাহাঙ্গির ভাবা, আব্দুল কালাম আজাদ, বিভুতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, মুন্সী প্রেমচন্দের মতো ব্যক্তিত্বদের নাম উল্লেখ করা যায় এই তালিকায়।

The post স্রেফ ভারতীয় হওয়ার জন্য মেলেনি নোবেল! জেনে নিন এই কৃতীদের সাফল্যের কাহিনি appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement