রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: দলীয় পতাকা পরিবর্তন ও সংবিধান সংশোধন করে এবার ভাঙনের মুখে ফরওয়ার্ড ব্লক (All India Forward Bloc)। দলের পতাকা থেকে কাস্তে-হাতুড়ি প্রতীক বাদ দেওয়া হয়েছে একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়ে। অভিযোগ, বিপক্ষে বেশি মত থাকা সত্ত্বেও সেটা না শুনে কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে পাশ করিয়ে নেওয়া হয়েছে। প্রতিবাদে ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে কার্যত বিদ্রোহ ঘোষণা করে নতুন মঞ্চ গঠন করলেন দলের প্রাক্তন বিধায়ক যুব নেতা ভিক্টর ওরফে আলি ইমরান রামজ। এই নতুন মঞ্চের নাম দেওয়া হয়েছে আজাদ হিন্দ মঞ্চ।
ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায়, কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত বিশ্বাসের বিরুদ্ধে কার্যত ক্ষোভ প্রকাশ করে সোমবার আজাদ হিন্দ মঞ্চের আনুষ্ঠানিক প্রকাশ হয়। আলি ইমরান ছাড়াও এদিন উপস্থিত ছিলেন ফরওয়ার্ড ব্লকের সদ্য বহিষ্কৃত রাজ্য নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। পতাকার প্রতীক পরিবর্তন ইস্যুতে প্রশ্ন তোলায় সুদীপকে ইতিমধ্যেই বহিষ্কার করেছে ফরওয়ার্ড ব্লক। আলি ইমরান রামজ-এর দাবি, এই মুহূর্তে তাঁদের সঙ্গে ফরওয়ার্ড ব্লকের সাড়ে চার হাজার সদস্য রয়েছে। আগামিকাল, দলের প্রতিষ্ঠা দিবসে কর্মীরা যাতে সেই পুরোনো কাস্তে-হাতুড়ি প্রতীক দেওয়া পতাকা নিয়েই কর্মসূচি করেন সেই ডাকও এদিন দেওয়া হয়েছে। আলি ইমরান জানিয়েছেন, “পতাকা থেকে কাস্তে-হাতুড়ি সরিয়ে দিয়ে বামপন্থী লড়াই থেকে সরে গিয়ে ডানপন্থার দিকে যেতে চাইছেন দলের বর্তমান রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায়। ফরওয়ার্ড ব্লকের পুরোনো পতাকা নিয়েই আমরা লড়াই করব। দলের বিরুদ্ধে নই। আমরা নীতিগত বিরোধিতা করছি। অগণতান্ত্রিক কাজ করছেন দলের নেতারা।”
[আরও পড়ুন: আতঙ্কের মাঝেই সামান্য স্বস্তি! গত ২৪ ঘণ্টায় খানিকটা নিম্নমুখী রাজ্যের কোভিড গ্রাফ]
দলের একাংশের বিদ্রোহীদের এই আলাদা মঞ্চ গঠন করা নিয়ে রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “পতাকার প্রতীক পরিবর্তন পার্টি কাউন্সিলে গৃহীত সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্ত আমি বা রাজ্য পার্টি গ্রহণ করেনি। পার্টি করতে গেলে এই সিদ্ধান্ত মেনে চলতে হবে। না মানলে পার্টি থেকে বহিষ্কার করা হবে। সে যত বড় নেতাই হোন না কেন।” তাহলে কি প্রাক্তন বিধায়ক ইমরানের বিরুদ্ধে এবার ব্যবস্থা নেবে দল? নরেনবাবুর জবাব, “আমরা সব দেখেছি। ২৭ জুন সম্পদকমণ্ডলীর বৈঠক রয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত নিয়ে শোকজ, তারপর সাসপেন্ড ও শেষে বহিষ্কার করা হবে।”
আজাদ হিন্দ মঞ্চের বক্তব্য, গত এপ্রিলে কাউন্সিল সভায় ‘সুভাষবাদ’ নামে একটি মতবাদ গৃহীত হয়। কিন্তু এখন বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রকে ভুলে নাম দেওয়া হচ্ছে ‘সুভাষবাদ’। পাশাপাশি মঞ্চের আরও বক্তব্য, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, কেরলে ফরওয়ার্ড ব্লকের পতাকায় আগেও কাস্তে-হাতুড়ি ছিল না। তখন বাংলার নেতারা বলতেন ওটা ঠিক নয়। আর এখন সেটা ঠিক হয়ে গেল। অশোক ঘোষ বেঁচে থাকতে তো এই চিন্তাভাবনা আসেনি। দলে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র সংকটের পথে। নেতৃত্ব উপ দলীয় কার্যকলাপে লিপ্ত বলে অভিযোগ তুলেছেন সদ্য বহিষ্কৃত ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়।