চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: বাঙালি মানেই শিল্পপ্রেমী, সৃষ্টিশীল। ইদুর দৌড়ের যুগে সেই আবেগ আর প্রতিভা ইদানিং যেন কিছুটা সুপ্ত। হাতে সময় পেলে অবশ্য জেন এক্স সাহিত্যচর্চায় মন দিয়ে থাকেন। বাঙালির চিরকালীন সেই আবেগকে উসকে দিতেই আসানসোলের বার্নপুরের নববিকাশ ক্লাব আয়োজন করল অণুগল্প প্রতিযোগিতার। এই বন্দিদশায় কাজকর্মের চাপ নেই। তাই এ সময়ে একটু আধটু গল্প লেখায় মন দেওয়া যেতেই পারে, বলছেন উদ্যোক্তারা।
আয়োজকদের মতে, এই বন্দিদশায় সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখ রেখে, সেলফি তুলে বা স্রেফ ল্যাদ খেয়েই কেটে যাচ্ছে সময়। বাঙালির মধ্যেকার সুপ্ত সৃষ্টিশীলতাকে জাগিয়ে তুলতে তাই অণুগল্প প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হল। বলা ভাল, করোনা আবহে “ফ্লাশ ফিকশন মান্থ” পালিত হবে শহরজুড়ে। ৫০ শব্দের অণুগল্প লিখে পাঠিয়ে দিতে হবে হোয়াটসঅ্যাপে। সেই গল্পকে সুন্দর করে সাজিয়ে তুলে ধরা হবে ফেসবুক ও অন্য সোশ্যাল মিডিয়ার পেজে। কার গল্প কতখানি মন কাড়ল নেটিজেনদের, তার ভিত্তিতে প্রতিযোগিতার ফলাফল নির্ধারিত হবে। সেই ফল ঘোষণা করে প্রতিযোগীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে পুরস্কার।
[আরও পড়ুন: আরও এক সিঙ্গলস্ক্রিনের অকালমৃত্যু, বন্ধ হয়ে গেল ঐতিহ্যবাহী রক্সি]
ক্লাবের সম্পাদ দেবাশিস তালুকদারের কথায়, “গত বছরও এই সময় আমরা অণুগল্প প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিলাম। পয়লা বৈশাখ প্রতিযোগিতার ফল ঘোষণা করে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়েছিল। এবছর করোনা ভাইরাস সংক্রমণ আবহে আমরা চিন্তিত ছিলাম, প্রতিযোগিতা করা যাবে কিনা। লকডাউন ঘোষণার পর আমাদের মনে হল ঘরবন্দি বাঙালির সাহিত্যপ্রেম উসকে দিতে এর থেকে ভাল সময় আর হয় না।” যাঁরা বাড়িতে শুধু ফেসবুক পেজ দেখেন, টিকটক দেখেন বা সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা ধরনের মিম দেখে সময় কাটাচ্ছেন, তাঁরা অণুগল্প প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ নিলে অন্যরকম একটা অভিজ্ঞতা হবে বলে মত তাঁর।
[আরও পড়ুন: প্রয়াত খ্যাতনামা শিল্পী সতীশ গুজরাল, শোকের ছায়া সংস্কৃতিজগতে]
উদ্যোক্তাদের মতে, আধুনিক বাংলা সাহিত্যে অণুগল্পের পথিকৃৎ যে বনফুল, এই খবর অনেকে জানেন না। ১৮৯৯ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত তিনি এই পদ্ধতিতে গল্প রচনা করেছেন। তাঁর বিখ্যাত অণুগল্প – নিমগাছ। সেই ধারাকে জনপ্রিয় করতে অণুগল্পের প্রতিযোগিতায় আয়োজন করা হয় ও বেশ সাড়া পাওয়া যায়। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটবে না বলেই আশা তাঁদের।আয়োজকদের আরেকজন, রূপক সরকার বলেন, “গতবারে একশোটিরও বেশি গল্প জমা পড়েছিল। যার মধ্যে আমরা পঞ্চাশটি গল্প প্রকাশ করতে পেরেছিলাম। মানুষের উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো”। তিনি আশাপ্রকাশ করেন যে এবার অনেক বেশি গল্প জমা পড়বে।
The post ঘরবন্দি বাঙালি মন দিচ্ছে সাহিত্যচর্চায়, উৎসাহ জোগাচ্ছে অণুগল্প প্রতিযোগিতা appeared first on Sangbad Pratidin.