সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ২০১৮। অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা সংসদে। লোকসভায় দাঁড়িয়ে প্রায় ৪০ মিনিটের দমদার ভাষণ দিয়ে গেলেন রাহুল গান্ধী। রাজনৈতিক মহলে তখন অঙ্ক কষা শুরু হয়ে গিয়েছে, রাহুলের এই ক্ষুরধার ভাষণের জবাব এবার কীভাবে দেবেন মোদি? ঠিক তখনই এক কাণ্ড করে ফেললেন কংগ্রেস (Congress) সাংসদ। সোজা উঠে গেলেন নিজের আসন থেকে। উলটো দিকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে (Narendra Modi)।
সেখানেই শেষ নয়, নিজের আসনে ফিরে এসে মুচকি হাসি শুরু করলেন। একটু পর দেখা গেল নিজের দলের সাংসদদের লক্ষ্য করে চোখ টিপলেন। যেন যুদ্ধজয় করে এসেছেন। ব্যাস, তাঁর ক্ষুরধার ভাষণের সব আলো শুষে নিয়ে গেল সেই চোখ টেপা আর মোদিকে (Narendra Modi) জড়িয়ে ধরা। চোখ টেপা নিয়ে প্রচুর ‘মিম’, রসিকতা হল সোশ্যাল মিডিয়াজুড়ে। পরে প্রধানমন্ত্রী ভাষণ দিতে এসে রাহুলের ভালবাসার প্রকাশকে স্রেফ ‘গলায় ঝুলে পড়া’ বলে দেগে দিলেন। মোদি বললেন, “এই সংসদে এসে আমি অনেক কিছু শিখেছি। এবার জড়িয়ে ধরা আর গলায় ঝুলে পড়ার মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারলাম।”
[আরও পড়ুন: রাজ্যের সব স্কুলে কি বাধ্যতামূলক হচ্ছে বাংলা? স্পষ্ট করলেন মুখ্যমন্ত্রী]
কাট টু ২০২৩। আবারও অনাস্থা প্রস্তাব। আবারও রাহুল গান্ধীর ক্ষুরধার আক্রমণ। মোদি সরকার কীভাবে মণিপুরে ভারতমাতাকে হত্যা করছে, তা নিয়ে যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা। মহাভারতের উদাহরণ তুলে মোদির ‘ঘামান্ডি’ কটাক্ষের জবাব। রামায়ণের উদাহরণ তুলে প্রধানমন্ত্রীকে রাবণের সঙ্গে তুলনা। একেবারে চাঙ্গা বিপক্ষ বেঞ্চ। প্রত্যাবর্তনের দিন সংসদ একেবারে কাঁপিয়ে দিলেন কংগ্রেস সাংসদ। কিন্তু তারপর কী করলেন? আবার সেই ‘ছেলেমানুষি’। রাহুল নাকি ট্রেজারি বেঞ্চের দিকে ‘ফ্লাইং কিস’ ছুঁড়েছেন। অভিযোগ করেছেন স্মৃতি ইরানি। যদিও বিজেপিরই (BJP) মহিলা সাংসদ হেমা মালিনী বলছেন, তিনি এমন কিছু দেখতে পাননি। বিপক্ষের কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছেন, রাহুল স্রেফ বিপক্ষের সাংসদদের ভালবাসা দেখিয়েছেন। যে ভালবাসার ভাষা ওরা বোঝেন না। স্মৃতি ইরানিরা সেসব মানতে নারাজ। তাঁরা সোজা বলছেন, কংগ্রেস নেতা আসলে নারিবিদ্বেষী।
[আরও পড়ুন: ‘পারলে বিজেপির টিকিটে ভোটে জিতে আসুন’, ‘দালাল’ রাজ্যপালকে চ্যালেঞ্জ মুখ্যমন্ত্রীর]
এখন কথা হল, রাহুল নিজের ‘মহব্বত’ দেখাতেই ওই ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে থাকুন, কিংবা অন্য কোনও উদ্দেশে, বা আদৌ ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে থাকুন বা ওই ধরনের অন্য কোনও অঙ্গভঙ্গি করে থাকুন, তাঁর কি আরও একটু সতর্ক হওয়া উচিত ছিল না? বিশেষ করে যখন বিজেপির গোটা ‘মেশিনারি’ স্রেফ তাঁকে ‘পাপ্পু’ বানানোর জন্য সবসময় মুখিয়ে, তাঁদের হাতে এভাবে সামান্যতম অস্ত্র তুলে দেওয়াটা কি ছেলেমানুষি নয়? অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, রাহুল যখনই এমন ‘ফাউল’ করেছেন, বিজেপি তখনই সেই ‘ফ্রি-কিক’ থেকে গোল করেছে। তা সত্ত্বেও স্রেফ অসচেতনতায় কীভাবে এই ‘অস্ত্র’ তুলে দিতে পারেন কংগ্রেসের পয়লা নম্বর নেতা? পুরনো ভুল থেকে কি শিক্ষা নেওয়া উচিত ছিল না তাঁর? ভাষণে তিনি যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি তুলে ধরেছিলেন, দিনের শেষে তার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্ব পেয়ে গেল ফ্লাইং কিস? কার্যত গুরুত্বহীন তাঁর ইন্ডিয়ার সঙ্গে ভারতকে জুড়ে দেওয়ার চেষ্টা। এভাবে কি নিজেকেই লঘু করে দিলেন না রাহুল?