কল্যাণ চন্দ্র, বহরমপুর: চোখ যে ছানাবড়া! সত্যিই। মুর্শিদাবাদের মানুষের কাছে আজ চোখ ছানাবড়া করার দিনই বটে। দীর্ঘ আন্দোলন, আবেদনের পর তাদের ছানাবড়া জিআই তকমা পেল বলে কথা। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে গুরুত্ব বাড়ল মুর্শিদাবাদের এই মিষ্টির। ব্যবসায়ীদের মতে, প্রত্যেক বছর মুর্শিদাবাদ জেলায় যে বিপুল সংখ্যক বিদেশি পর্যটক আসেন, তাঁরাও এই মিষ্টির কথা জানতে পারবেন। বিশ্ববাজারে আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে মুর্শিদাবাদের ছানাবড়া। তবে শুধু ছানাবড়া নয়, নলেনগুড়ের সন্দেশ, বারুইপুরের পেয়ারা, কামারপুকুরের সাদা বোঁদে, রাঁধুনি পাগল চাল, বিষ্ণুপুরের মতিচুরের লাড্ডু, মালদহের সিল্কও একই সঙ্গে জিআই-এর স্বীকৃতি পেয়েছে বলে খবর।
বহু বছর আগে বহরমপুর নিবাসী মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দী ব্রিটিশদের জন্য নিজের বাড়িতে একটি ‘পার্টি’ দিয়েছিলেন। সেসময় জনৈক পটল ওস্তাদকে তিনি দায়িত্ব দেন এমন একটি মিষ্টি তৈরি করার জন্য, যা খেয়ে ব্রিটিশ কর্তারা তারিফ করবেন। বলা হয়, সেই সময়ই নাকি পটল ওস্তাদ এই মিষ্টি আবিষ্কার করেন। তাঁর হাতের তৈরি মিষ্টি খেয়ে মহারাজা নন্দকুমারের তারিফ করেছিলেন ব্রিটিশরা। ছানাকে ঘিয়ের সঙ্গে ভেজে ওই মিষ্টি বানানো হয় বলেই নামকরণ হয়েছে ছানাবড়া। হয়তো গোরা সাহেবদের চোখও ছানাবড়া হয়েছিল এই মিষ্টি চেখে। বহরমপুরের গোরাবাজারের মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী সৌমজিৎ সাহা বলেন, "পটল ওস্তাদ প্রথম ছানাবড়া তৈরি করেছিলেন। ধীরে ধীরে তা বিখ্যাত হয়। ছানাবড়াকে জিআই দেওয়ার জন্য দীর্ঘদিনের দাবি ছিল বহরমপুরের মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীদের। অবশেষে সেই তকমা পেয়ে যাওয়াই ভীষণ খুশি তাঁরা।"
গোরাবাজারের মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী বৈশালী বিজয় সাহা বলেন, ‘‘বাইরের লোকজন এসে ছানাবড়াকে কালোজাম বলতেন। সেই কারণে বহরমপুরের মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীরা ছানাবড়াকে স্বীকৃতি দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন। বাবা ও কাকা ছানাবড়া মিষ্টিকে জিআই তালিকাভুক্ত করতে প্রথম লড়াই শুরু করেছিলেন। আজ সেই লড়াই সম্পূর্ণ হল।’’ অন্যদিকে বহরমপুরের মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী অরুণ দাস বলেন, ‘‘প্রণব মুখোপাধ্যায়, রাহুল গান্ধী তো মুর্শিদাবাদে এসে ছানাবড়া খেয়ে গিয়েছেন।’’ অন্য মিষ্টি তৈরির থেকে ছানাবড়া তৈরির জন্য একজন কারিগরের অনেক বেশি সময় লাগে। ছানাকে চিনির সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে গোলাকৃতি করে তারপর তাকে ঘি অথবা ডালডাতে ভাজা হয়। এরপর সেটিকে মিষ্টির রসে ভিজিয়ে রাখতে হয়। ছানাবড়া তৈরির এই পদ্ধতিটি শুনতে সোজা লাগে। কিন্তু এই মিষ্টি তৈরির জটিল প্রক্রিয়ার জন্য এখন খুব কম সংখ্যক কারিগর এই মিষ্টি তৈরিতে পারদর্শী। অল্প আঁচে একটি কড়াইতে ১২০টির মতো ছানাবড়া একসঙ্গে তৈরি করতে প্রায় আড়াই থেকে তিন ঘন্টা সময় লাগে।"
কিন্তু জিআই কী এবং এতে লাভটাই বা কী হয়। আসলে এতে যে কোনও পণ্য, তার অস্তিত্ব ও নিজস্বতা ধরে রাখতে পারে। বিপণনের ক্ষেত্রে বিশ্ববাজার ধরার সহায়ক হয়ে ওঠে। জিআই বা জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন পাওয়া মানে কোনও পণ্য তার আদি উৎপাদন ক্ষেত্রের স্বীকৃতি পায়। ফলে একই পণ্য অন্য কোনও এলাকা, রাজ্য বা দেশ তার নিজস্ব বলে দাবি করতে পারে না।