দুলাল দে, মস্কো: প্রথম ম্যাচ ড্র করে আর্জেন্টিনার উপর পৃথিবী জোড়া চাপের আবহ তৈরি হয়েছে। এমন ঘটলে যে কোনও বড় টিমের মাথা খারাপ হওয়ারই কথা। প্রথম চাপটা সংবাদমাধ্যমের। আর্জেন্টিনার ঘাড়ে উপরি চাপ হয়ে দাঁড়িয়েছেন স্বয়ং মারাদোনা।এই চাপ গোটা আর্জেন্টিনা টিম বা কোচ সাম্পাওলি ভাগবাঁটোয়ারা করেননি।চাপের সমবণ্টন হয়নি। চার ভাগ চাপের তিন ভাগ একা সামলাচ্ছেন মেসি। মারাদোনার টার্গেট মেসি নয়। কোচ সাম্পাওলি। ‘ব্যর্থ হলে দেশে ফিরতে পারবেন না সাম্পাওলি।’ তাঁর এই মন্তব্যর পর আর্জেন্টিনা জুড়ে জমাট আক্রমণ শুরু হয়েছে কোচকে ঘিরে। ১৭ হাজার মাইল দূরে ব্রুনেৎসি থাকলেও সেই আঁচ টেরও পাচ্ছেন সাম্পাওলি। তাই মেসির সঙ্গে আলোচনা করে দু’টি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। প্রথমত, ক্ষিপ্ত আর্জেন্টিনা সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সম্পর্কটা ঠিক রাখা। দ্বিতীয়ত, ক্রোয়েশিয়া ম্যাচের আগে দলের খোলনলচে বদলে ফেলা। কিন্তু তাতেও সংবাদমাধ্যমের আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেন কোথায়! আর্জেন্টাইন মিডিয়া প্রশ্ন তুলেছে, এতদিন ধরে দলটাকে নিয়ে কী করলেন কোচ? ঠিকঠাক প্রথম একাদশ বেছে নেওয়া গেল না কেন? এমন হাল কেন যে প্রথম ম্যাচের পরই বেশ কয়েকজন ফুটবলারকে বদলাতে হবে?
[রাশিয়ার বিরুদ্ধে নামছেন সালাহকে নামিয়ে অল-আউট যেতে চাইছে মিশর]
পরিবর্তনের প্রথম নাম ডি’মারিয়া! পরের ম্যাচে তাঁকে বাইরে রেখে মাঠে নামার ভাবনা মেসিদের। শুধু তিনি নন, তালিকায় আরও কয়েকজনের নাম আছে। ‘ফাদার্স ডে’ ধুমধামের সঙ্গে পালন হয় আর্জেন্টিনায়। শনিবার পয়েন্ট হারিয়ে দলের মনোবল ভেঙে পড়েছিল। এই সময়ে সাম্পাওলি সঠিক চাল চাললেন! তিনি প্রস্তাব দেন, ফাদার্স ডে-তে ফুটবলাররা যে যাঁর সন্তানদের বেসক্যাম্পে ডাকতে পারবেন। কেননা, আগের দিনই স্পার্টাক স্টেডিয়ামে অনেক ফুটবলারের পরিবার এসেছিল ম্যাচ দেখতে। রবিবারই আগুয়েরো নিয়ে এলেন তাঁর ছেলেকে। ডি মারিয়ার স্ত্রী অ্যাঞ্জেল বেসক্যাম্পে এলেন তাঁর দুই মেয়ে মিয়া আর পিয়াকে নিয়ে। কিন্তু কোথাও নেই মেসি, মাসচারেনোরা। মেসি বেসক্যাম্পে তাঁর ২২১ নম্বর রুম থেকে বেরলেন না।
[কেন সাইক্লোনে উড়ে গেল তিউনিশিয়া, জয় দিয়ে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু ইংল্যান্ডের]
সারাদিনে মাত্র একটা সময়েই তাঁকে দেখা গিয়েছে সাম্পাওলির সঙ্গে কথা বলতে। তখনই ঠিক হয় ক্রোয়েশিয়া ম্যাচে দলের রদবদল। প্রথম ম্যাচে আইসল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম একাদশ ঠিক করতে গিয়ে রাইট ব্যাক পজিশন নিয়ে চাপে ছিলেন সাম্পাওলি। কাকে খেলাবেন? আলোচনায় ঠিক হয়, এডুয়ার্ডো সালভিওর নাম। কিন্তু প্রথম ম্যাচের পর সাম্পাওলির মনে হয়েছে, সালভিওকে খেলানোর সিদ্ধান্তটা ভুল। তাই ক্রোয়েশিয়া ম্যাচে দলে আসছেন গ্যাব্রিয়েল মারকাদো। যাঁকে এদিন প্র্যাকটিসের আগে সাংবাদিক সম্মেলনে পাঠানো হল। কিন্তু প্র্যাকটিসে মেসির সেই গম্ভীর ভাব। চুপচাপ। আগের মতোই।
[বিশ্বকাপে দুর্দান্ত দৌড় শুরু কালো ঘোড়ার, লুকাকুর জোড়া গোলে হার পানামার]
তবে শুধু রাইট ব্যাক নয়, মিডফিল্ডের বদল নিয়েও ভাবছেন আর্জেন্টাইন কোচ। আগের দিন মাসচারেনোর সঙ্গে সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে খেলেছেন, লুকাস বিগলিয়া। ক্রোয়েশিয়া ম্যাচে সাম্পাওলি ভাবছেন বাইরে রাখবেন বিগলিয়াকে। আইসল্যান্ড ম্যাচে সেন্ট্রাল মিডফিল্ড থেকে সেরকমভাবে বল পাননি মেসি। তাই কোচ ভাবছেন ক্রোয়েশিয়া ম্যাচে সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে আনবেন মাসচারেনোর সঙ্গী। দলে আসছেন জিওভান্নি লো সেলসো। কিন্তু ডি’মারিয়ার বদলে ক্রোয়েশিয়া ম্যাচে মাঠে নামা ঠিক হবে কিনা, সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না আর্জেন্টিনা থিঙ্ক ট্যাঙ্ক। কারন নামটা ডি’মারিয়া। আর্জেন্টাইনরা এখনও মনে করেন, চার বছর আগে মারাকানা স্টেডিয়ামে ডি’মারিয়া থাকলে মেসিকে এভাবে নিঃস্ব হাতে ফিরতে হত না। কিন্তু ডি’মারিয়াকে দলে রাখার সাহস পাচ্ছেন না তিনি। সেই জায়গায় ভাবছেন ক্রিশ্চিয়ানো পাভোনকে। মারকাদোর মতো তাঁকেও এদিন মিডিয়ার সামনে ঠেলে দিলেন কোচ।
The post চাপের মুখে দলে পরিবর্তনের ভাবনা সাম্পাওলির, বাদ যেতে পারেন নামী তারকারা appeared first on Sangbad Pratidin.