shono
Advertisement

Breaking News

FIFA World Cup 2034

রোনাল্ডোকে দিয়েই শুরু বিশ্বকাপের অঙ্ক, সৌদির নজর ফুটবল ছাপিয়ে বাজার অর্থনীতিতে

কাতার বিশ্বকাপের উদাহরণকে সামনে রেখেই 'ইমেজ' তৈরির কাজে সৌদি ব্যবহার করতে পারে ফুটবলকে।
Published By: Arpan DasPosted: 07:13 PM Dec 12, 2024Updated: 07:13 PM Dec 12, 2024

অর্পণ দাস: শুরুটা হয়েছিল ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে দিয়ে। ২০২২-র ডিসেম্বরের শেষ লগ্নে ফুটবল বিশ্বকে চমকে দিয়ে সৌদি আরবের ক্লাব আল নাসেরে সই করেন পর্তুগিজ কিংবদন্তি। তারপর একে একে সৌদির পথ ধরেছেন করিম বেঞ্জিমা, নেইমার, সাদিও মানের মতো তারকারা। আর রোনাল্ডোর সৌদিযাত্রার দুবছরের মধ্যেই ফিফার বিরাট ঘোষণা। ২০৩৪-র বিশ্বকাপ আয়োজিত হবে সৌদি আরবে। জল্পনা ছিলই, ইতিমধ্যে প্রতিবাদও শুরু হয়ে গিয়েছে ফিফার সিদ্ধান্ত নিয়ে। কিন্তু বহু অঙ্ক কষে পা ফেলেছে সৌদি। যার মধ্যে জড়িয়ে রয়েছে রাজনীতি, অর্থনীতি, পর্যটন, মানবাধিকারের মতো প্রসঙ্গ। আর সৌদির অঙ্কের প্রথম ধাপ ছিল রোনাল্ডোকে সই করানো।

Advertisement

কীভাবে? ফিরে যাওয়া যাক ২০২২-র কাতার বিশ্বকাপে। বিতর্ক আর বিতর্ক, প্রাথমিকভাবে এটাই ছিল আয়োজকদের সঙ্গী। শ্রমিক মৃত্যু, নারী স্বাধীনতা, মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো বিষয়ে জর্জরিত ছিল কাতার। যখন কাতারের নাম আয়োজক হিসেবে ঘোষিত হয়, তখন ফিফা প্রেসিডেন্ট ছিলেন সেপ ব্লাটার। মনে পড়তে পারে তাঁর উদ্দেশে টাকা উড়িয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়েছিল। জার্মানির মতো দল ম্যাচ খেলার আগে ছবি তুলেছিল মুখে হাত রেখে। আর আজ? কাতারের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে বিশ্বকাপের প্রসঙ্গ। মহানাটকীয় ফাইনালের কথা কে ভুলতে পারে? অর্থাৎ বিশ্বের দরবারে কাতারের কলঙ্কের অভিঘাত কমে এসেছে ফুটবলের সৌজন্যে।

তার কিছুদিন পরেই রোনাল্ডোকে সই করিয়ে চমক দেয় আল নাসের। তিনি সই করেছিলেন ভারতীয় মুদ্রায় ১৮৩৮ কোটি টাকার চুক্তিতে। সেটা ছিল ট্রেলার মাত্র। তার পর বহু তারকার ইউরোপ ছেড়ে মহাপ্রস্থান। এসপিএল হাত বাড়িয়েছিল এমবাপে, মেসির জন্যও। বয়স হলে ফুটবলাররা ইউরোপ ছেড়ে অন্য মহাদেশে খেলতে যান ঠিকই। তাতে খেলা ও প্রত্যাশা, উভয় চাপই কম থাকে। আবার লুকা মদ্রিচরা ৩৯ বছর বয়সেও ইউরোপ কাঁপাচ্ছেন। সেখানে রোনাল্ডোকে সই করানোর আগে কজন নাম জানতেন সৌদি প্রো লিগের? আর আজ সেখানে কলকাতার বাজারেও বিকোয় আল নাসের, আল হিলালের জার্সি। রেভেনিউয়ের হিসেব যাই বলুক না কেন, রোনাল্ডোদের সৌজন্যে সৌদি প্রো লিগের জনপ্রিয়তা যথেষ্ট।

অবশ্য এই 'নবজাগরণ'-এর আগে ইটালিয়ান বা স্প্যানিশ সুপার কাপের ফাইনাল আয়োজন করেছে সৌদি। ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো এর আগে মাঝেমধ্যে উপস্থিত হয়েছেন মরুদেশে। অবশেষে সৌদির রাজতন্ত্র নিয়ন্ত্রিত সংস্থা পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড লিগের চারটি প্রধান ক্লাবের ৭৫% শতাংশ মালিকানা কিনে নেয়। তাতে ঠিক হয়, প্রতিটা দল ইউরোপের অন্তত চারজন জনপ্রিয় ফুটবলার কিনবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে আসবে তুলনায় কম জনপ্রিয় ফুটবলার। এই পুরো পরিকল্পনায় যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমনের উৎসাহ সবচেয়ে বেশি। তিনি এই পিআইএফ-এর চেয়ারম্যানও বটে। অনুমান, প্রোজেক্ট ২০৩০-র মধ্যে এই লিগের আয় দাঁড়াবে ২.৫ বিলিয়ন ডলার। হয়তো ইউরোপের কাছে তা কিছুই নয়। তবে যে নজর কাড়ার, সেটা ইতিমধ্যেই কেড়ে নিয়েছে সৌদি প্রো লিগ। এমনকী রোনাল্ডোও একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, বিশ্বের সেরা পাঁচটি লিগের মধ্যে পড়ে এই লিগ। যাঁর এককথায় বিশ্বখ্যাত পানীয়র বাজারদর পড়ে যেতে পারে, তাঁর এই কথার গুরুত্ব কীভাবে অস্বীকার করবে ফুটবলবিশ্ব। আর ফিফার ঘোষণার পরদিনই তিনি বলে দিলেন, ২০৩৪-র বিশ্বকাপ সর্বশ্রেষ্ঠ হতে চলেছে।

ঠিক এই মাহেন্দ্রক্ষণেরই তো অপেক্ষা ছিল। ২০২৬-র বিশ্বকাপ হবে আমেরিকা-কানাডায়। ২০৩০-এর বিশ্বকাপ হবে মোট ৬টি দেশে। কারণ সেবছর ফুটবল বিশ্বকাপের শতবার্ষিকী পালিত হবে। স্পেন, পর্তুগাল এবং মরক্কোর পাশাপাশি দক্ষিণ আমেরিকার তিনটি দেশে খেলা হবে মেগা টুর্নামেন্টের ম্যাচ। সেসব নিয়ে আলোচনা কোথায়? যত কাণ্ড সৌদি নিয়েই। ফুটবল দুনিয়ায় নিজেদের নাম প্রতিষ্ঠার কাজ করে ফেলেছে। এবার হাত বাড়িয়েছে আরও বড় লক্ষ্যে। ফুটবল সংক্রান্ত আরও একটি বিষয় আছে। বিনা পরিকাঠামোয় কাতারে বিশ্বকাপ আয়োজন নিয়ে বিতর্ক ছিল। সেখানে সৌদি বলতেই পারে, তারা তো 'কৌলিন্য' অর্জন করে বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব ছিনিয়ে নিয়েছে।

কিন্তু ঘটনা শুধু ফুটবলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। মানবাধিকার লঙ্ঘন, নারী স্বাধীনতার বিরোধিতা, বাকস্বাধীনতার অভাব, সৌদির বিরুদ্ধেও অভিযোগ কম নেই। কাতারে বিশ্বকাপের সময় মদ্যপান নিয়ে যে অভিযোগ ছিল, তা এখানেও প্রযোজ্য। তাছাড়া ২০৩৪ সালের বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য একমাত্র মধ্য়প্রাচ্যের এই দেশটির তরফেই বিড করা হয়েছিল। সেই কাতারই তো উদাহরণ দেখিয়ে দিয়েছে। ফুটবলকে সামনে রেখেই কলঙ্কমোচনের পথে হাটতে চাইবে সৌদি। তাছাড়া বিদেশি পুঁজি আগমনের পথও খুলে রাখার সম্ভাবনা তৈরি হবে।

একটা জিনিস তো স্পষ্ট, খনিজ তেলের আয় চিরকাল সম্বল হতে পারে না। সেখানে বিকল্প রয়েছে গ্রিন এনার্জি। ২০৩০-এর মধ্যে পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তি অন্তত ৫০ শতাংশ বাড়াতে চায় তারা। আর শুধু তেল নয়, বিশ্বের শক্তি আদানপ্রদানেও 'নেতা' হয়ে উঠতে চায় তারা। ইতিমধ্যেই নিয়ে এসেছে গ্রিন ইনিশিয়েটিভ। বিশ্বকাপকে সামনে রেখে যদি বিদেশি পুঁজি তাতে হাত বাড়ায়, দিনের শেষে লাভ তো সৌদিরই। অতএব, অনেক অঙ্ক কষেই পা ফেলেছে তারা। আর সেই অঙ্কের হিসেব যে মিলেছে, তা তো ইনফান্তিনোর বিশ্বকাপ ঘোষণা থেকেই পরিষ্কার। আর ফুটবলবিশ্বে সমাদর? তার জন্য তো রোনাল্ডোরা রইলেনই। আপাতত হিসেব মিলেছে। এবার দেখার, সমীকরণের বিপরীতে প্রতিবাদের কোন অঙ্ক অপেক্ষা করে থাকে সৌদি আরবের জন্য।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • শুরুটা হয়েছিল ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে দিয়ে। ২০২২-র ডিসেম্বরে ফুটবল বিশ্বকে চমকে দিয়ে সৌদি আরবের ক্লাব আল নাসেরে সই করেন পর্তুগিজ কিংবদন্তি।
  • ২০৩৪-র বিশ্বকাপ আয়োজিত হবে সৌদি আরবে। জল্পনা ছিলই, ইতিমধ্যে প্রতিবাদও শুরু হয়ে গিয়েছে ফিফার সিদ্ধান্ত নিয়ে।
  • যার মধ্যে জড়িয়ে রয়েছে রাজনীতি, অর্থনীতি, পর্যটন, মানবাধিকারের মতো প্রসঙ্গ। আর সৌদির অঙ্কের প্রথম ধাপ ছিল রোনাল্ডোকে সই করানো।
Advertisement