দুলাল দে: গত মরশুম পর্যন্ত দলের ফুটবলারদের ফিজিকাল ট্রেনিংয়ের ব্যাপারটা কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাত নিজেই দেখতেন। এই মরশুমে তিনি নিজে পছন্দ করে নিয়ে এসেছেন কার্লোস জিমেনেজকে। কারণ যাই হোক, এই মরশুমে ইস্টবেঙ্গল খেলা দেখে ফুটবলারদের ফিটনেস এবং চোট-আঘাত নিয়ে নানারকম প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। আর সেই সব প্রশ্নের মুখে স্বাভাবিকভাবে পড়তে হচ্ছে কুয়াদ্রাতকেই। তিনি নিজেই যেহেতু নিয়ে এসেছেন, তাই দলের ফিটনেস সংক্রান্ত ব্যাপারে কার্লোস জিমেনেজের আগে ঢালের মতো দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন। এদিন সাংবাদিক সম্মেলনেও বললেন, “জিমেনেজ পেশাদার ট্রেনার। কী করতে হবে ভালভাবে জানে। ওর কাজে এখনও পর্যন্ত অখুশি হওয়ার মতো কিছু হয়নি।”
তবে তাঁকে নিয়ে এই মুহূর্তে শুধুই গ্যালারি নয়। ক্লাবের অন্দরেও কথা বার্তা শুরু হয়ে গিয়েছে। তিনি ঠিক করুন আর ভুল, ঘটনা হচ্ছে, শুক্রবার ঘরের মাঠে আইএসএলের ম্যাচে এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে চোটের জন্য পাওয়া যাবে না দিয়ামান্তাকস, রাকিপ, নিশু কুমারকে। পাওয়া যাবে না ক্রেসপোকেও। অবশ্য চোট নয়, তিনি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক সম্মেলন শেষে যুবভারতীর প্র্যাকটিস গ্রাউন্ডে কুয়াদ্রাত যখন দল নিয়ে নামলেন, মাঠে বাইরে বসে রইলেন ক্রেসপো, নিশু, দিয়ামান্তাকসরা। এতজন ফুটবলার মাঠে বাইরে থাকায়, শুক্রবারের ম্যাচে স্বাভাবিকভাবেই দলে কিছু পরিবর্তন আনবেন ইস্টবেঙ্গল কোচ। প্রথম যে দুটো ম্যাচ, বেঙ্গালুরু আর কেরালার বিরুদ্ধে লাল-হলুদ হেরেছে, সেই দুটো ম্যাচেই ৪-২-৩-১ সিস্টেমে খেলেছেন কুয়াদ্রাত। এদিন প্র্যাকটিসেও যা জানা গেল, তাতে এফসি গোয়ার বিরুদ্ধেও একই ফর্মেশনে খেলার কথা। তাতে ক্রেসপোর জায়গায় দলে আসতে পারেন হিজাজি মাহের। রাকিপের জায়গায় প্রথম দলে সুযোগ পেতে পারেন প্রভাত লাকড়া নাহলে গুরসিমরত সিং গিল। আর চোটের জন্য দিয়ামান্তাকস যেহেতু শুক্রবার খেলতে পারবেন না, সেই জায়গায় ফিরছেন ক্লেটন সিলভা।
গত চারটে আইএসএলে ব্যর্থতার পর এই মরশুমে বেশ ভাল দল তৈরি করেছেন ইস্টবেঙ্গল কর্তারা। স্বাভাবিক ভাবেই সমর্থকদের প্রত্যাশাও বেড়েছে। টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে সমর্থক, সবাই আশা করছেন এইবার অন্তত প্লে-অফে খেলার সুযোগ আসবে। কিন্তু প্রথম দুটো ম্যাচেই হারের মুখ দেখায় রীতিমতো অসন্তোষের মুখে কার্লেস কুয়াদ্রাত। টিম ম্যানেজমেন্ট যদিও এখনও পর্যন্ত ভারসাই রাখছেন কোচের উপর। তবে তাঁকে ঘিরে যে একটা ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে তা ভালভাবেই জানেন ইস্টবেঙ্গল কোচ। এবং সেই ক্ষোভ আর সমালোচনার কথা তিনিও ভালভাবে জানেন। আর সেই সমালোচনাকে অযৌক্তিকও মনে করছেন না। বললেন, “সাফল্য না পেলে বিশ্বের সব জায়গাতেই সমালোচনা হয়। এটা নতুন কিছু নয়। এত ভালো ভালো ফুটবলার এই মরশুমে সই করানো হয়েছে।”
সাংবাদিক সম্মেলনে এসেছিলেন মাদিহ তালালকে সঙ্গে নিয়ে। পাশে বসা তালালকে দেখিয়ে কুয়াদ্রাত বলেন, “এই যে এত ভালো ভালো ফুটবলার এই মরশুমে সই করানো হয়েছে, ভালো কিছুর জন্য সবার প্রত্যাশা তো থাকবেই। কিন্তু এটাও মাথায় রাখতে ভুলবেন না, আনোয়ার কিন্তু আগের ম্যাচেই প্রথম নামল। নতুন জার্সিতে হেক্টরের সবে দ্বিতীয় ম্যাচ। শুরুর দিকে সমস্যা তো হবেই। সময়ের সঙ্গে ঠিক হয়ে যাবে। তবুও বলছি, এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে পুরো পয়েন্ট পাওয়ার জন্য ছেলেরা ঝাঁপাবে।”
শুধু আইএসএল নয়। ডুরান্ড কাপ, এসিএল ২ ধরে পর পর চারটে ম্যাচে হেরে বসে আছে লাল-হলুদ। ফলে শুক্রবারের ম্যাচে একটা চাপ তো থাকবেই। তার উপর তথ্য বলছে, গত দুই মরশুমে এফসি গোয়ার কাছে চারবারই হেরেছে ইস্টবেঙ্গল। ফলে কুয়াদ্রাত যতই বলুন, ম্যাচটা জেতার জন্য সবাই ঝাঁপাবে। পরিস্থিতি ততটা সহজ নয়। তার উপর প্রতিপক্ষ দলের কোচের নাম মানোলো মার্কুয়েজ, ভারতীয় দলের কোচ। ইস্টবেঙ্গল কোচ বললেন, “পরিস্থিতি নিয়ে আমরা একটা স্ট্রাগলের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি, তাড়াতাড়ি সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারব।” কুয়াদ্রাতকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল গোলকিপার দেবজিৎ মজুমদারের প্রথম একদশে খেলার সুযোগ নিয়ে। কারণ, শেষ ম্যাচে খুব একটা ভাল পারফরম্যান্স দেখাননি গোলকিপার প্রভসুখন গিল। কুয়াদ্রাত সোজাসুজি উত্তর না দিয়ে দেবজিতের সুযোগ পাওয়ার প্রসঙ্গে বললেন, “পরিস্থিতি বুঝে ম্যাচের আগে সিদ্ধান্ত নেব।”
আজ আইএসএলে
ইস্টবেঙ্গল বনাম এফসি গোয়া সন্ধে ৭.৩০, যুবভারতী
স্পোর্টস ১৮ নেটওয়ার্ক