সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কথায় বলে, 'বাবার জমিদারি নাকি?' গা-জোয়ারি করে দখল করলে তো সেরকমই বোঝায়। এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে ইস্টবেঙ্গল যে ক্লাবের মুখোমুখি, তা যেন 'বাবার জমিদারি'ই! তুর্কমেনিস্তানের ক্লাব আর্কাদাগের কীর্তিকলাপ জানলে চোখ কপালে উঠবেই।
ঘটনাটা খোলসা করে বলা যাক। শুক্রবার ভুটানের থিম্পুতে নেজমেহকে হারিয়ে এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে ইস্টবেঙ্গল। সেখানে তাদের প্রতিপক্ষ এফকে আর্কাদাগ। ২০২৩ সালেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ক্লাবটি। সে দেশের ইয়োকারি লিগায় চ্যাম্পিয়নও হয়েছে তারা। প্রতিষ্ঠার এক বছরের মধ্যেই এত বড় সাফল্য। লিগের সব ম্যাচ জিতেছে। গোল করেছে ৮৩টি। হজম করেছে মাত্র ১৭টি। আর চলতি বছরে গোলপার্থক্য ১২৬-১৯। ফের চ্যাম্পিয়ন হয় তারা।
এত ভালো পারফরম্যান্সের মধ্যেও খোঁচা মারতে পারে কয়েকটি জটিল প্রশ্ন। যেরকম ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা কে? তাঁর নাম গুরবাঙ্গুলি বের্দিমুহামেদৌ। তাঁর আরও একটা পরিচয়ও আছে। তিনি ছিলেন তুর্কমেনিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট। ২০২২ থেকে ছেলে সের্দার বের্দিমুহামেদৌ বসেছেন বাবার পদে। তাতে কী? দেশের প্রেসিডেন্ট তো ফুটবল ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা হতেই পারেন!
না, আরও কিছু কীর্তি রয়েছে। আর্কাদাগ শহরটাই গুরবাঙ্গুলির তৈরি। স্বাভাবিকভাবে একটা ফুটবল ক্লাবও দরকার। নামও দিলেন তিনি। ঘোড়ার ছবি দিয়ে ক্লাবের লোগো তৈরি করলেন। শোনা যায়, প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের ঘোড়সওয়ারির প্রতি ভালোবাসারই প্রমাণ সেটা। ২০২৩ মরশুমের শুরুতে দলবদলের বাজারে ঝড় তুলে দিল আর্কাদাগ। তুর্কমেনিস্তান জাতীয় দলের ১৪ জন প্লেয়ার চলে এলেন এই ক্লাবে। তার মধ্যে দলের অধিনায়ক আছেন, সেরা স্ট্রাইকার আছেন। মোদ্দা কথা, গোটা জাতীয় দলই নেমে পড়ল আর্কাদাগের হয়ে। কীভাবে সেটা সম্ভব হল, সে বিষয়ে অনুমান করা শক্ত কিছু নয়।
এখানেই শেষ নয়। যতক্ষণ না পছন্দসই প্লেয়ারকে দলে নেওয়া হচ্ছে, ততদিন ট্রান্সফার উইন্ডো বন্ধ হবে না তুর্কমেনিস্তানে। রেফারিং নিয়েও বিপক্ষের ক্ষোভ কম নয়। যেমন সাগাদামের বিরুদ্ধে ৩-২ গোলে আর্কাদাগ যে ম্যাচ জিতেছিল, সেই ম্যাচের শেষ মুহূর্তেও রেফারির থেকে তারা সাহায্য পেয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। তবে জাতীয় দলের প্রাক্তন কোচ আলিসের নিকিম্বায়েভ বলছেন, এই নিয়ে প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলবে না। ১০০০০ দর্শকাসনের স্টেডিয়াম সব ম্যাচেই ভর্তি থাকবে। সকলে একই জার্সি পরে হাজির। নিকিম্বায়েভের বক্তব্য, এরা সমর্থক নয়। এরা মূলত আদেশ পালন করতে আসেন।
তার জন্য অনেকে দায়ী করেন তুর্কমেনিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে। তুলনা করা হয় উত্তর কোরিয়ার 'একনায়কতন্ত্রে'র সঙ্গেও। আর শুধু আর্কাদাগ নয়, তুর্কমেনিস্তানের ফুটবল ক্লাবেও এই ট্র্যাডিশন বহুদিন ধরেই চলে আসছে। ২০১৩ সালে আস্তানা ফুটবল ক্লাব তৈরি করেছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট। বুনাইওদকোর ফুটবল ক্লাবের ঘটনাও অনেকটা একই রকম। গত বছর থেকে সেই তালিকাকে 'সমৃদ্ধ' করেছে আর্কাদাগ। ২০২৫-র মার্চ মাসে দ্বিতীয় লেগ খেলতে তুর্কমেনিস্তানেই যাওয়ার কথা ইস্টবেঙ্গলের। সেখানে যে বিভিন্ন ধরনের কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে, সেকথা বলাই বাহুল্য।