জার্মানি-২ ডেনমার্ক-০
(হাভার্টজ-পেনাল্টি, মুসিয়ালা)
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: জার্মানি-ডেনমার্ক ম্যাচে ঘটনার ঘনঘটা। গোল বাতিল, বৃষ্টি, বজ্রপাত, ম্যাচ বন্ধ হওয়া, হৃদয় ভাঙার কাহিনি শেষে হাজার ওয়াটের আলো জ্বালল জামাল মুসিয়ালারা। ড্যানিশ ডিনামাইটদের মাটি ধরিয়ে জার্মানি পেয়ে গেল কোয়ার্টার ফাইনালের টিকিট।
শনিবারের রাতটা অভিশপ্ত হয়েই থাকবে ডেনমার্কের অ্যান্ডারসনের কাছে। এদিন তিনি হতে পারতেন নায়ক।সতীর্থদের কাঁধে চেপে মাঠ ছাড়তেই পারতেন।জার্মানির ইউরো স্বপ্ন চুরমার করে দিয়ে ডেনমার্ককে পৌঁছে দিতে পারতেন কোয়ার্টার ফাইনালেও। দিনান্তে অ্যান্ডারসনের জন্য থাকছে না পাপড়ি বিছানো রাস্তা। বরং কাঁটা বিছানো পথের পথিক তিনি। ভাগ্য বিড়ম্বিত অ্যান্ডারসন। গোল করলেন। এগিয়ে দিলেন ডেনমার্ককে। কিন্তু ভার প্রযুক্তিতে দেখা গেল অ্যান্ডারসন অফসাইড পজিশন থেকে গোল করেছেন। বাতিল হয়ে গেল সেই গোল।
ফুটবল অনেকটা জীবনেরই মতো। এই মেঘ তো এই রৌদ্র। অ্যান্ডারসনের গোল বাতিল হওয়ার মিনিট তিনেকের মধ্যেই ভাগ্যও বদলে গেল ডেনমার্কের। পেনাল্টি বক্সের ভিতরে হ্যান্ডবল করে বসলেন অ্যান্ডারসন। রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাজান। পেনাল্টি থেকে হাভার্টজ এগিয়ে দেন জার্মানিকে। মুহূর্তের মধ্যে বদলে গেল খেলার চালচিত্র। ঘড়ির কাঁটা বলছে ৫৩ মিনিট হয়েছে খেলা।
[আরও পড়ুন: মৃত্যুমুখ থেকে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন, পন্থ বোঝালেন, ‘এভাবেও ফিরে আসা যায়’]
জাদু দেখিয়ে মুসিয়ালার গোল।
ডেনমার্ক প্রথম গোল হজম করার ১৫ মিনিটের মধ্যেই দ্বিতীয় গোল করে জার্মানি। এবার মুসিয়ালা। ফের অ্যান্ডারসন কাঠগড়ায়। তাঁকে গতিতে পরাস্ত করে মুসিয়ালা ডেনমার্কের গোটা ডিফেন্সকে সম্মোহীত করে গোল করে আসেন। জার্মানির মতো দল দুগোলে এগিয়ে গেলে প্রতিপক্ষের ম্যাচে ফেরা কঠিন হয়ে পড়ে। ম্যাচটা এখানেই শেষ হয়ে যায়। ডেনমার্ক আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।
অথচ ড্যানিশ ডিনামাইটরা কিন্তু একটা সময় নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে জার্মানির উপরে আধিপত্য বিস্তার করার চেষ্টা করেছিল। ভাগ্য তাঁদের সহায় ছিল না বলতেই হবে। কারণ ডেনমার্ক জ্বলে উঠে জার্মানিকে যখন চেপে ধরার চেষ্টা করছে, ঠিক সেই সময়ে আকাশ ভেঙে শুরু হয় বৃষ্টি। সেই সঙ্গে বিদ্যুৎ চমক। খেলা বন্ধ থাকে কুড়ি মিনিট। বিরতির সময়ে খেলার ফলাফল ছিল গোলশূন্য। কোনও দলই গোল করতে পারেনি।দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচ থেকে সরে যেতে থাকে ডেনমার্ক। নব্বই মিনিটের শেষে স্কোরলাইন বলছে, জার্মানি ২ ডেনমার্ক ০। নাগলসমানের ছেলেরা আরও গোল করলেও অবাক হওয়ার কিছু ছিল না। শেষের দিকে ডেনমার্কের ডিফেন্স নিয়ে ছেলেখেলা করে একাধিক গোলের সুযোগ তৈরি করেছিল জার্মানি। কিন্তু ঠোঁট আর পেয়ালার মধ্যে ব্যবধান থেকে গেল এক্ষেত্রেও।
লেরয় সানে এবং হাভার্টজ পোস্টের বাইরে বল মারেন। পরিবর্ত হিসেবে নামা অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার ফ্লোরিয়ান রিৎজ ৯১ মিনিটে ডেনমার্কের জালে বল পাঠালেও অফসাইডের কারণে তা বাতিল করে দেওয়া হয়।
ঘরের মাঠে জার্মানিকে কিন্তু অপ্রতিরোধ্যই দেখাচ্ছে।
চোখধাঁধানো শুরু করেছিল জার্মানি। শুরুতেই গোল করেন শ্লটারবেক। কিন্তু তাঁর সতীর্থ কিমিচের বোধহয় সেই সময়ে বুদ্ধিনাশ হয়। ডেনমার্কের পেনাল্টি বক্সের ভিতরে ড্যানিশ ডিফেন্ডারকে ফাউল করে বসেন কিমিচ। রেফারি শ্লটারবেকের গোল বাতিল করে দেন। তার পরে ডেনমার্কের গোল লক্ষ্য করে গোলাগুলি বর্ষণ করলেও গোল করতে পারেনি জার্মানি। ধীরে ধীরে ডেনমার্ক নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে পালটা আক্রমণের খেলা শুরু করেছিল। ঠিক সেই সময়ে মন্দ আবহাওয়ার জন্য খেলা বন্ধ রাখতে হয় রেফারি মাইকেল অলিভারকে। ম্যাচ শুরু হলে হারানো ছন্দ আর ফিরে পায়নি ডেনমার্ক। জার্মানি পৌঁছে গেল কোয়ার্টার ফাইনালে। শেষ আটের লড়াইয়ে জার্মানির প্রতিপক্ষ স্পেন ও জর্জিয়া ম্যাচের বিজয়ী দল।
এদিকে ইউরো থেকে এদিন বিদায় নিল গতবারের চ্যাম্পিয়ন ইটালি। সুইজারল্যান্ডের কাছে এদিন ২-০ গোলে হার মানে গতবারের চ্যাম্পিয়নরা।