সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তিনি রত্নগর্ভা। তাঁর ছেলের ঘরে সাত-সাতটা ব্যালন ডি’অর। গত প্রায় দু’দশক ফুটবলকে নিজের ‘দাস’ করে রেখেছেন। যে মাঠে, যে টুর্নামেন্টে নেমেছেন, তার সর্বশ্রেষ্ঠ ট্রফি শোভা পায় সেই মায়ের ছেলের ড্রয়িংরুমে। অথচ সব থেকেও অধরা মাধুরী একটাই ট্রফি। সেই সোনার পরীর পোস্টাল অ্যাড্রেসে বুয়েনস আইরেসের ঠিকানা খোদাই করার এবারই শেষ সুযোগ। এই একটা মাত্র ট্রফি এখনও জিততে না পারায় তামাম দুনিয়ার সমালোচকদের বিষাক্ত বাণে তাঁর ছেলেকে বিদ্ধ হতে হয়েছে বারবার। কাতার বিশ্বকাপের (Qatar World Cup) গ্রুপ পর্যায়ের শেষ ম্যাচে নামার আগে তাই তাঁর গলায় ভেসে এল ছেলে নিয়ে কষ্টের কথা। যন্ত্রণার কথা। বিশাল প্রাসাদের ঠান্ডা ঘরের নরম বিছানায় শুয়েও রাতের পর রাত ঘুমোতে না পারার কথা।
[আরও পড়ুন: FIFA WC 2022: উরুগুয়ের বিরুদ্ধে গোল ব্রুনো নাকি রোনাল্ডোর? নিশ্চিত করল ফিফা]
তিনি-সেলিয়া মারিয়া কুকসিটিনি। তিনি-লিওনেল মেসির (Lionel Messi) মা। মেসির জীবন ঠিক যেন একটি মুদ্রার দু’টো দিক। যার একদিকে তিনি ফুটবল ঈশ্বর। ভিনগ্রহের ফুটবলার। সেরার সেরা। অন্যদিকে বিশ্বজয়ী না হতে পারায় তিনি ট্র্যাজিক হিরো। সাফল্যের মাউন্ট এভারেস্টে থেকেও যা আগুনে বারবার পুড়তে হয়েছে এলএমটেনকে। ফুটবল জীবনের সায়াহ্নে এসে তাই আরও একবার মেসির মাকে বলতে শোনা গেল, “ও কত কষ্ট করেছে, তা আমি বলে বোঝাতে পারব না। একটা ম্যাচ জিততে, নিজের পারফরম্যান্সকে আরও উন্নত করতে নিজেকে কীভাবে নিংড়ে দিয়েছে তা বলতে গেলে আমায় সাহিত্যিক হতে হয়। আমি বিশ্বাস করি, ঈশ্বর এতটা নিষ্ঠুর হতে পারেন না। বিশ্বাস করি, এবার অন্তত লিও সেরা হবে। বিশ্বাস করি, এবার অন্তত লিওকে ন্যায়বিচার দেবেন ঈশ্বর।”
তাঁর ছেলের গোলে এগিয়ে গিয়ে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করেছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু সেদিন মাঠ ছাড়তে হয়েছিল শূন্য হাতে। সুযোগ পেয়েই নিজেদের নখে-দাঁতে শান দিয়ে নিয়েছিলেন মেসি-সমালোচকরা। হতাশার প্রশান্ত মহাসাগরে ডুবে গিয়েছিলেন লিও। তারপর থেকে নাকি বারবার যিশুর কাছে মাথা নিচু করেছিলেন সেলিয়া। লাগাতার প্রার্থনা করেছেন গত কয়েকদিন।
অবশেষে মেক্সিকোর বিরুদ্ধে সাফল্য। সেলিয়ার বিশ্বাস ওচোয়াদের বিরুদ্ধে ওই জয়টাই হতে চলেছে মেসিদের টার্নিং পয়েন্ট। “অমন টাফ ফার্স্ট হাফের পর, যে খেলাটা সেদিন খেলল আমার ছেলেরা ওটাই মোমেন্টাম দিয়ে দেবে। আমরা পোল্যান্ডকে হারাবই। গ্রুপ শীর্ষে থেকে নকআউটে যাব। শেষটাও করব এইভাবেই,” বলে দিলেন রত্নগর্ভা। সত্যি হোক তাঁর এই ভবিষ্যৎবাণী। বিশ্বজুড়ে এই স্বপ্নে দিন গুনছেন কোটি কোটি ফুটবলপ্রেমী। মেসিপ্রেমী। হয়তো বা বহু মেসি-বিদ্বেষীও!