চেন্নাইয়িন-৩ মোহনবাগান-২
(মারে, এডওয়ার্ডস, ইরফান) (কাউকো, পেত্রাতোস -পেনাল্টি)
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: চেন্নাই কাঁটায় বিদ্ধ মোহনবাগান (Mohun Bagan)। আন্তোনিও লোপেজ হাবাস দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অপ্রতিরোধ্য দেখাচ্ছিল সবুজ-মেরুনকে। যা ধরেছেন স্প্যানিশ কোচ, তাতেই সোনা ফলিয়েছেন।
রবিবাসরীয় যুবভারতীতে মোহনবাগানের ডাগ আউটে হাবাস ছিলেন না অসুস্থতার জন্য। জ্বর হওয়ায় তাঁর জায়গায় ম্যানুয়েল পেরেজের হাতে ছিল দলের রিমোট কন্ট্রোল। কিন্তু অভিজ্ঞতার তো একটা দাম রয়েছে। হাবাসের ম্যাচ রিডিং খুব ভালো। কিন্তু তাঁর না থাকা ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দিল। এগিয়ে থেকেও মোহনবাগান শেষমেশ ম্যাচ হারল ৩-২ গোলে। মোহনবাগানের প্রাক্তনী দেবজিৎ মজুমদারের গ্লাভসে বন্দি হল সবুজ-মেরুন শিবির। শেষের দিকে মোহনবাগান যখন মরণকামড় দিচ্ছে, তখন দেবজিৎ মসিহা হয়ে ধরা দিলেন। সাদিকুর বিষাক্ত হেড থামালেন। শুভাশিষের হেডও বাঁচালেন। গুরুত্বপূর্ণ তিন পয়েন্ট এনে দিলেন বঙ্গসন্তান।
[আরও পড়ুন: কয়েক মাসেই শাহিন আফ্রিদিতে মোহভঙ্গ, পাকিস্তানের অধিনায়ক পদে ফিরলেন বাবর]
ডাগ আউটে হাবাসের না থাকা যদি হারের একটা কারণ হয়, তাহলে দীর্ঘ বিরতির পর নামাও একটা ফ্যাক্টর। ১৩ মার্চ কোচিতে কেরালা ব্লাস্টার্সকে রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে মাটি ধরিয়েছিল মোহনবাগান। তার পরে আজ রবিবার নামে সবুজ-মেরুন। মাঝের এই বিরতিতে ছন্দ নষ্ট হয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক।
চেন্নাইয়িনকে আজ হারালে লিগ তালিকায় এক নম্বর স্থানে পৌঁছে যেত মোহনবাগান। কিন্তু যুবভারতীতে ম্যাচ হেরে যাওয়ায় দ্বিতীয় স্থানেই থাকলেন পেত্রাতোসরা। মুম্বই এক নম্বরেই থেকে গেল।
এদিন মোহনবাগান শুরুতে চেন্নাইয়ের পেনাল্টি বক্সে বেশ কয়েকবার আক্রমণ তুলে এনেছিল। সেই আক্রমণে কাঁপতে শুরু করে চেন্নাই। লিস্টন কোলাসো পেনাল্টি বক্স থেকে চেন্নাই গোলকিপার দেবজিতের বুকে মারেন। ঠিকঠাক শট রাখতে পারলে লিস্টনই এগিয়ে দিতেন মোহনবাগানকে।
মোহনবাগান অবশ্য এগিয়ে যায় ২৯ মিনিটে। ছবির মতো সুন্দর গোল। মাঝমাঠ থেকে খেলা তৈরি করলেন বহু যুদ্ধের সৈনিক পেত্রাতোস। অজি তারকার কাছ থেকে বাঁ প্রান্তে দাঁড়ানো লিস্টন কোলাসো বল পান। তার পরে পায়ের কাজে চেন্নাই বক্সে কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়ে জনি কাউকোকে বল বাড়ান লিস্টন। হঠাৎই পেনাল্টি বক্সে যেন উদয় হলেন কাউকো। তাঁকে কেউ মার্ক করেননি। গোল করে মোহনবাগানকে এগিয়ে দিলেন কাউকো।
গ্যালারিতে দেখা যায় বিশাল কাইথের কাট আউট।
মোহনবাগান রং ছড়াতে শুরু করে তার পর। কিন্তু সেই মোহনবাগানের খেলাই ফিকে হয়ে গেল দ্বিতীয়ার্ধে। কোথায় সেই উইং প্লে। চেন্নাই মরিয়া হয়ে ওঠে। আক্রমণের ঝাঁজ বাড়াতে থাকে তারা। পরিবর্ত হিসেবে নামা বারাকপুরের রহিম আলি প্রায় গোল করে ফেলেছিলেন। তাঁর বাঁ পায়ের পুশ মোহনবাগানের পোস্টে প্রতিহত হয়। ৭২ মিনিটে সমতা ফেরায় চেন্নাইয়িন। মোহনবাগান রক্ষণকে বোকা বানিয়ে মারে বিশাল কাইথকে পরাস্ত করেন। এর ঠিক আট মিনিট পরেই এগিয়ে যায় চেন্নাই। ক্রিভেলারো কর্নার থেকে বল ভাসিয়েছিলেন। রায়ান এডওয়ার্ডস আকাশচুম্বী স্পট জাম্প থেকে হেডে ২-১ করে যান। মোহনবাগানের পেনাল্টি বক্সে তাঁকে কেউ মার্কিং করেননি। সেই সুযোগে তিনি হেডে বিষ ঢালেন।
পিছিয়ে পড়েও হাল ছাড়েনি মোহনবাগান। এই দলটার এটাই সৌন্দর্য। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যায়। মরিয়া লড়াই ফলও পেল। বক্সের মধ্যে সাদিকুকে ফেলে দেন অঙ্কিত। পেনাল্টি স্পট থেকে গোললাইন, পৃথিবীর রহস্যময় সরণি। পেত্রাতোস এসব জায়গা থেকে গোল নষ্ট করেন না। ঠান্ডা মাথায় চেন্নাইয়ের জালে বল জড়িয়ে তিনি সমতা ফেরান।
এর পরেই কাহানিতে টুইস্ট। খেলা শুরুর আগে বিশাল কাইথের বড় কাট আউট দেখা যায় গ্যালারিতে। দুরন্ত কিছু সেভও করেন মোহনবাগান গোলরক্ষক। কিন্তু দিনটা তাঁর ছিল না। আগে থেকেই হয়তো চেন্নাইয়ের জয়ের চিত্রনাট্য লেখা হয়ে গিয়েছিল। না হলে সুপার সাব ইরফান অতিরিক্ত সময়ে আগুয়ান বিশাল কাইথকে মাটি ধরিয়ে ৩-২-এ এগিয়ে দেন চেন্নাইকে।
ওখানেই জয়ের গন্ধ পেয়ে যায় ওয়েন কোলের ছেলেরা। তার পরেও মোহনবাগান মরিয়া হয়ে আক্রমণ করে যাচ্ছিল। কিন্তু চেন্নাইয়ের বারের নীচে যে ছিলেন খর্বকায় দেবজিৎ। তাঁর ছায়া দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়ে দেখা গেল। সাদিকুর বিষাক্ত ছোবল বাঁচালেন। শেষ মুহূর্তে শুভাশিসকেও নিরস্ত করলেন। যুবভারতী ছাড়লেন হাজার ওয়াটের আলো ছড়িয়ে।
এদিন জিতলে মুম্বইকে ছাপিয়ে ফার্স্ট বয় হতেই পারত মোহনবাগান। কিন্তু ম্যাচ হেরে সেই দুনম্বরেই থেকে গেলেন পেত্রাতোসরা। তবে সাপ লুডোর খেলা আইএসএল। দিল্লি অবশ্য এখনও অনেক দূর। অনেক ওঠাপড়া বাকি আছে।
[আরও পড়ুন: বাংলা শিখছেন হিলি, শাড়ি-চুড়ির বাঙালি সাজে মজে অজি অধিনায়ক]