সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ৯০ মিনিটের মরণপণ লড়াই। জিতলে ইতিহাসের পাতায়, হারলে একরাশ ব্যর্থতা নিয়ে তাকিয়ে থাকা সফলদের দিকে। কিন্তু ফুটবল বোধহয় শুধু এটুকু নয়। তার বাইরেও গল্প তৈরি হয়। প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত। ফিরে যেতে হয় ছয় বছর আগের একটা দিনে। হাড়ের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হয়েছিল নয় বছরের এক ফুটফুটে মেয়ে। তার নাম জানা (Xana)। আর পিএসজি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতার পর মিউনিখে ফিরল তার স্মৃতি। স্টেডিয়াম জুড়ে তার নামে টিফো। প্যারিসের ট্রফিজয়ের অনুষ্ঠানে এক ব্যক্তির কালো শার্টে জানার ছবি। তিনি পিএসজি কোচ লুইস এনরিকে। তাঁর আরেকটা পরিচয়, তিনি জানার বাবা।
২০১৫ সালের কথা। সেবার বার্সেলোনাকে ট্রেবল জিতিয়েছিলেন এনরিকে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে জুভেন্টাসকে হারানোর পর ছোট্ট জানা নেমে এসেছিল মাঠে। হাতে তার বার্সেলোনার পতাকা। পিছনে হাসিমুখে ছুটে আসছেন এনরিকে। মেয়ের সঙ্গে হাত মিলিয়ে মাঠে পুঁতে দিয়েছিলেন পতাকা। স্মৃতি সততই সুখের। চার বছর পর মারণরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হয় জানা। কিন্তু আজও প্রতিদিন, প্রতিমুহূর্তে মেয়েকে পাশে অনুভব করেন এনরিকে। নিজের মাকে বলেছিলেন, কোনওদিন যেন জানার অভাবে না কাঁদেন। না, দশবছর পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতে তিনিও কাঁদেননি। শুধু বলেছেন, "ও সবসময় আমার হৃদয়ে থাকে।"
হৃদয়ে রেখে দিয়েছেন পিএসজি সমর্থকরাও। স্টেডিয়াম জুড়ে উড়ল জানার জন্য টিফো। সেখানে ৮ নম্বর জার্সি পরে দাঁড়িয়ে আছে জানা। আর পিএসজি'র পতাকা পুঁতে দিচ্ছেন এনরিকে। সব সত্যি! জানা সশরীরে না থেকেও আছে। ট্রফিজয়ের সেলিব্রেশনে কালো শার্ট পরে এসেছিলেন এনরিকে। সেখানে এক বাবা ও এক মেয়ের অবয়র। দুজনে একসঙ্গে প্যারিসের নীল-সাদা-লাল পতাকা পুঁতছেন। জানা নিশ্চয়ই সব দেখছে!
ও, আরও একজন আছেন। তাঁর গল্প আবার মা-ছেলের গল্প। তাঁর নাম উইলিয়াম পাচো। পিএসজি'র এই ডিফেন্ডারের অভিষেক ঘটে ২০১৯ সালে। সুযোগ পাবেন শুনে কেঁদে ফেলেছিলেন তাঁর মা। আর ম্যাচ খেলে উঠে জানতে পারেন মা প্রয়াত। আজও সেই যন্ত্রণা বুকে আঁকড়ে মাঠে নামেন। আর সেটাকেই করে তোলেন নিজের শক্তি।
শেষবেলায় বলা যাক খিভিচা কাভারাস্কেলিয়ার গল্প। জর্জিয়ার এই তরুণ উইঙ্গার এই মরশুমের মাঝপথে পিএসজি'তে এসেছেন। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতে এক দীর্ঘ পথচলার গল্প লিখলেন। তারপর ইনস্টাগ্রামে একটি স্টোরি দেন। সেখানে কার্টুনে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর ছবি। নীচে লেখা ২০১৩। তার ঠিক একবছর আগে ফুটবল অ্যাকাডেমিতে ঢোকেন জর্জিয়ার ফুটবলার। আর সেই অ্যাকাডেমির উদ্বোধনে কে এসেছিলেন জানেন? ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো স্বয়ং।
