জর্জিয়া-২ পর্তুগাল- ০
(কাভারাস্কেইয়া,মিকাওতাদজে-পেনাল্টি)
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ইউরোতে (Uefa Euro 2024) অঘটন! এছাড়া আর কীইবা বলা যায়!
যে পর্তুগাল প্রথম দুম্যাচ জিতে মেঘের উপর দিয়ে হাঁটছিল, তাদের দৌড় থেমে গেল অখ্যাত, অনামী জর্জিয়ার কাছে।বুধরাত জর্জিয়ার কাছে উদযাপনের।পর্তুগালের মতো শক্তিধর দলকে মাটি ধরিয়ে ইউরোর নকআউটের ছাড়পত্র জোগাড় করে ফেলল তারা। নব্বই মিনিটের শেষে গ্যালারি উত্তাল। আবেগে জর্জিয়ার সমর্থকদের চোখে জল। এমন একটা রাতের অপেক্ষাতেই বুঝি এতদিন ছিল জর্জিয়া। জার্মানিতে রূপকথা লিখে গেল জর্জিয়া।
ইউরো খেলতে আসা দলগুলোর মধ্যে র্যাঙ্কিংয়ে সবচেয়ে পিছিয়ে ছিল জর্জিয়াই। নব্বই মিনিটের শেষে তাদের লাল জার্সি আরও উজ্জ্বল। জর্জিয়ার কাভারাস্কেইয়া আলো ছড়িয়ে গেলেন সবুজ গালচেতে। সেই আলোয় ঝলসে গেলেন রোনাল্ডো, পর্তুগাল।
নতুন মারাদোনা বলে পরিচিত তিনি। তিন দশক পরে নাপোলিকে লিগ খেতাব দেওয়ার অন্যতম নায়কও বটে। গোলের পরে কাভারাস্কেইয়া।
‘কাভারাদোনা’ বলে আদর করে ডাকা হয় কাভারাস্কেইয়াকে। নাপোলিকে তিন দশক পর লিগ খেতাব দেওয়ার অন্যতম নায়কও তিনি। তাঁর ঝলসানো দৌড় একাধিক বার পর্তুগালের রক্ষণে হাঙরের হাঁ তৈরি করেছে। রোনাল্ডোর সঙ্গে সঙ্গে এদিনের রাতটা ভুলে যেতে চাইবেন তাঁর সতীর্থ আন্তোনিও সিলভাও। তাঁরই মহাভুলে পর্তুগাল দুগোল হজম করল। প্রথম হারের স্বাদ পেতে হল। অপরাজিত থেকে পরের রাউন্ডে যাওয়া হল না পর্তুগালের।
[আরও পড়ুন: ‘গায়ানায় অ্যাডভান্টেজ ইংল্যান্ড’, সেমিযুদ্ধের আগে ‘বিন্দাস’ স্বীকারোক্তি রোহিতের]
প্রথম দুম্যাচ জিতে আগেই অবশ্য নকআউটের পাসপোর্ট জোগাড় করে ফেলেছিল রবার্তো মার্টিনেজের পর্তুগাল। তৃতীয় ম্যাচটা রোনাল্ডোদের কাছে ছিল নিয়মরক্ষার।প্রথম এগারোয় আটটা পরিবর্তন আনেন কোচ মার্টিনেজ। রোনাল্ডো, পালিনহা আর গোলকিপার দিয়েগো কোস্তা ছাড়া ল্যাজা-মুড়ো সব বদলে দিয়েছিলেন মার্টিনেজ।
মেজাজ হারিয়ে হলুদ কার্ড দেখার সেই মুহূর্ত। রাতটা ভুলে যেতে চাইবেন রোনাল্ডো।
পুরোদস্তুর দল বদলে দিলে যা হয়! নো নেটওয়ার্ক জোনে বুঝি চলে গেল পর্তুগাল। গোটা ম্যাচে ভুগতে হল তাদের। তুরস্কের বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচে যে বোঝাপড়া দেখা গিয়েছিল, তা উধাও জর্জিয়ার বিরুদ্ধে। তার উপরে খেলার দ্বিতীয় মিনিটেই আচম্বিতে গোল হজম করে পর্তুগাল একপ্রকার দিশাহারা হয়ে যায়।
মাঝমাঠে আন্তোনিও সিলভার ভুল পাস থেকে বল ধরে মিকাওতাদজে আগুন ধরানো দৌড় শুরু করেন। দুরন্ত গতির সেই কাউন্টার অ্যাটাক সামলাতে পারল না পর্তুগাল। অভিজ্ঞ পেপে নেই রক্ষণে। তাঁর অভাব অনুভূত হল। পর্তুগালের রক্ষণ ততক্ষণে কেঁপে গিয়েছে। মিকাওতাদজের কাছ থেকে বল পেয়ে কাভারাস্কেইয়া এগিয়ে দেন জর্জিয়াকে।
ওই গোল বড় ধাক্কা দিয়ে গেল পর্তুগালকে। গোল হজম করে গোল শোধের মরিয়া চেষ্টা শুরু করে পর্তুগাল। কিন্তু ফাঁকা জায়গা পেলে তো গোল হবে! জর্জিয়ার দীর্ঘদেহী ফুটবলাররা নিজেদের পেনাল্টি বক্সের সামনে গোলকধাঁধা তৈরি করলেন। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোও সেই গোলকধাঁধায় হারিয়ে গেলেন। অসহায় দেখাল তাঁকে। জর্জিয়ার ব্যূহ ভেদ করতে পারলেন না সিআর সেভেনও। বহুযুদ্ধের সৈনিক মেজাজ হারালেন।
পেনাল্টি থেকে গোলের পরে মিকাওতাদজে।
প্রশ্ন উঠতে পারে পর্তুগালকে কি বঞ্চিত করা হল না? পেনাল্টি কি পেতে পারত না রোনাল্ডোরা? বক্সের ভিতরে মহাতারকাকে জার্সি ধরে টেনে ফেলে দেওয়া হল। অথচ তা দৃষ্টি এড়িয়ে গেল রেফারির! ক্ষুব্ধ রোনাল্ডো প্রতিক্রিয়া দেখালেন। নিজের জার্সি তুলে ধরে বোঝাতে চাইলেন, তাঁকে টানাহ্যাঁচড়া করে ফেলে দেওয়া হয়েছে। কে শোনে কার কথা! রেফারি তুরন্ত হলুদ কার্ড বের করলেন। রোনাল্ডো সইতে পারেন না সেই অসম্মান!
[আরও পড়ুন: মমতার সঙ্গে সাক্ষাতের পর দিল্লিতে শাহী দরবারে অনন্ত মহারাজ, তুঙ্গে জল্পনা]
তাঁর তূণের সব অস্ত্র ভোঁতা হয়ে যাচ্ছে। বিখ্যাত স্টেপ ওভার করে তরতরিয়ে দৌড়বেন, সেই জায়গাও পেলেন না তিনি। তার উপরে প্রায় তিরিশ মিটার দূর থেকে তাঁর ভয়ংকর ফ্রি কিকও বাঁচিয়ে দিলেন জর্জিয়ার গোলকিপার।একবার তাঁর বাঁ পায়ের শট দুর্দান্ত ব্লক করলেন জর্জিয়ার ডিফেন্ডার। অভিশপ্ত রাত যে নায়ক হতে দেবে না তাঁকে, তার দেওয়াললিখন আগেই বুঝি পড়া হয়ে গিয়েছিল!
বিরতির পরে অন্য এক পর্তুগালকে দেখার আশায় ছিলেন ভক্ত-অনুরাগীরা। হাফটাইমের পরই রোনাল্ডোর শট পোস্টের উপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। কাভারাস্কেইয়াও সুযোগ নষ্ট করেন। তার পরই আন্তোনিও সিলভার ভুল। পেনাল্টি বক্সের ভিতরে জর্জিয়ার লোশোভিলিকে ফাউল করলে পেনাল্টি পায় জর্জিয়া। পেনাল্টি থেকে গোল করতে ভুল করেননি মিকাওতাদজে।
৬৫ মিনিটে তুলে নেওয়া হয় রোনাল্ডোকে। তিনটি ম্যাচ খেলা হয়ে গেল। অথচ গোলের দেখা নেই। জর্জিয়ার বিরুদ্ধে আবার হলুদ কার্ডও দেখলেন। রোনাল্ডো-শো অবশ্য এখনও শেষ হয়নি। নকআউটে অন্য এক রোনাল্ডোকে দেখা যাবে বলেই আশায় ভক্ত-অনুরাগীরা।
সবার নজরে রোনাল্ডো।
এদিকে ম্যাচ হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় পর্তুগাল মরণকামড় দেয়। জর্জিয়া আবার কাউন্টার অ্যাটাক নির্ভর খেলার উপরে জোর দিতে শুরু করে। বেশ কয়েকবার পর্তুগালের পেনাল্টি বক্সে 'ত্রাহি ত্রাহি রব' ওঠে। ভাগ্য ভালো বলতে হবে পর্তুগালের। জর্জিয়ার সেই সব আক্রমণ থেকে আর গোল হজম করতে হয়নি তাদের। নইলে স্কোরলাইন আরও হৃষ্টপুষ্ট হত।
গ্রুপের অন্য ম্যাচে তুরস্ক ২-১ গোলে হারায় চেক প্রজাতন্ত্রকে। এই গ্রুপ থেকে পর্তুগাল, তুরস্ক ও জর্জিয়া নক আউট পর্বে গেল। শেষ যোলোয় পর্তুগালের সামনে স্লোভেনিয়া। অন্যদিকে স্পেন-চ্যালেঞ্জের জন্য তৈরি হতে হবে জর্জিয়াকে।