অভিরূপ দাস: ১০৪ বছরের পুরনো নিয়ম ভাঙলো ভারত সেবাশ্রম সংঘ (Bharat Sevashram Sangha)। শুধুমাত্র করোনা (Corona Virus) রোগীদের জন্য। ১৯১৭ সালে আচার্য শ্রীমত স্বামী প্রণবানন্দজি মহারাজ প্রতিষ্ঠিত এই আশ্রমে আমিষ খাবারের প্রবেশ নিষেধ। প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ পর্যন্ত কোনওদিন একটুকরো মাছ, মাংস কিংবা ডিম ঢোকেনি সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা আশ্রমের কোনও শাখায়। কিন্তু এবার সেই আশ্রমেই তৈরি হচ্ছে ডিম সেদ্ধ, মুরগির স্যুপ। স্বামীজিরা বলছেন, এটা কোভিড (COVID-19) রোগীদের জন্য।
গড়িয়া ভারত সেবাশ্রম সংঘে খুলেছে কোভিড হাসপাতাল (Covid Hospital)। সেখানকার রোগীদের জন্য এই প্রথম ১০৪ বছরের নিয়ম ভেঙে আশ্রমের ভিতর আমিষ খাবার পরিবেশন করার ছাড়পত্র দিলেন স্বামীজিরা। মানুষের সেবার ব্রতী হয়ে প্রথা ভাঙল ভারত সেবাশ্রম। আশ্রমের এই সিদ্ধান্তকে যুগান্তকারী বলছেন চিকিৎসকরা। করোনা রোগীদের জন্য প্রোটিন যুক্ত খাবার দরকার। শরীরে কোষের গঠনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান প্রোটিন। আর দুর্বল শরীরে শক্তির জোগান দিতেও প্রোটিনের চাহিদা এ সময়ে বেশি। তাই রোজ কিছুটা পরিমাণ প্রোটিন রাখতেই হবে খাদ্যতালিকায়। ফলে ডিম, মাংস, মাছ, ডাল, পনির, সয়াবিনের মতো খাবার খুবই প্রয়োজন। ভারত সেবাশ্রম সংঘের স্বামীজিরা বলছেন, ধর্মীয় অনুশাসনের থেকে এখন বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে মানবসেবা।
[আরও পড়ুন: এবার করোনাযোদ্ধা হিসেবে টিকা পাবেন ব্যাংক কর্মীরাও, ঘোষণা রাজ্য সরকারের]
শুক্রবার গড়িয়া প্রণব নগরের ভারত সেবাশ্রম সংঘের দু’টি তলা কোভিড হাসপাতালে রূপান্তরিত হয়েছে। প্রথমে হাসপাতালে ২৫টি বেড থাকার কথা ছিল। কিন্তু মানুষের চাহিদার কথা ভেবে আরও ৫টি বেড বেড়েছে গড়িয়া ভারত সেবাশ্রম সংঘে। ৩০ বেডের এই কোভিড হাসপাতালে ২০ টি বেডে রয়েছে অক্সিজেনের সুবন্দোবস্ত। শরীরে অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৮৫ এর বেশি, অথচ নানারকম কো-মর্বিডিটির কারণে রোগীকে বাড়িতে রাখা ঝুঁকির। সর্বক্ষণের পর্যবেক্ষণ দরকার। এমন রোগীদেরই ভরতি করা হচ্ছে এই হাসপাতালে। যাঁর উদ্যোগে গড়ে উঠল এই হাসপাতাল, তিনি এই আশ্রমেরই প্রাক্তন ছাত্র রাজীব দত্ত।
হাসপাতাল খোলার খবর পেয়েই দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন রোগীরা। ইতিমধ্যেই ৩ জন রোগী ভরতি হয়ে গিয়েছেন। হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টার জন্য রয়েছেন দু’জন চিকিৎসক, চারজন নার্স এবং সেবাশ্রমের ১২ জন স্বেচ্ছাসেবক। অ্যাথেনা এডুকেশনাল অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট এর সঙ্গে সহযোগিতায় গড়ে উঠেছে এই ৩০ শয্যার কোভিড কেয়ার ফেসিলিটি।