সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ক্যুইজ বইয়ের পাতায় প্রশ্ন রয়েছে রাজ্যে লুপ্তপ্রায় জনজাতি কোনটি? উত্তরে মোটা হরফে লেখা- ‘বিরহোড়’ (Birhor Tribe)। সেই বিরহোড় জনজাতির মেয়েই এই প্রথম উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পার হল।
পুরুলিয়ার (Purulia) অযোধ্যা পাহাড়তলীর বাঘমুন্ডির ভূপতি পল্লীর বাসিন্দা জানকি শিকারি। এই বাঘমুন্ডিরই ধসকা পন্ডিত রঘুনাথ মুর্মু আবাসিক বিদ্যালয় থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেয় সে। কলা বিভাগের ছাত্রীর প্রাপ্ত নম্বর ২১৭। তার ইচ্ছে, ভবিষ্যতে শিক্ষিকা হয়ে পিছিয়ে পড়া জনজাতিগুলিকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার।
জানকির কথায়, “কেন আমরা পিছিয়ে থাকব? আমি চাই কোনও জনজাতিকে যাতে পিছিয়ে পড়া বলা না হয়। তাই শিক্ষিকা হয়ে শিক্ষার মাধ্যমে পিছিয়ে পড়ার তকমা ঘোচাব।” আর সেই লড়াইয়ের সঙ্গী হতে চান বাগমুন্ডির বিধায়ক নেপাল মাহাতো l তাঁর কথায়, “এই লড়াকু মেয়ে যাবে অনেক দূর। ওর লেখাপড়ার সমস্ত দায়িত্ব আমি নিচ্ছি। এই প্রথম বিরহোড় জনজাতির কোনও মেয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হল।”
[আরও পড়ুন: প্রতিশ্রুতি রাখল মাদ্রাসা এডুকেশন ফোরাম, লাদাখে শহিদদের নামে স্কলারশিপ পেল কৃতী ছাত্রী]
আজও এই বিজ্ঞান ও ইন্টারনেটের যুগেও এখনও সেভাবে জঙ্গল ছেড়ে বের হতে পারেনি এই বিরহোড় জনজাতি। তাই অরণ্য ঘেঁষেই তাদের বাস। জঙ্গল থেকে বনজ সম্পদ বিক্রি আর কাঠ কেটে তা হাটে-বাজারে বিক্রি করে দিন গুজরানই যেন তাদের নিয়তি! তাই হোস্টেল থেকে বাড়ি গেলে জানকিকে যেন সেই জঙ্গলেই ফিরে যেতে হত। কাঠ কেটে সংসার চালানোর জন্য বাবা-মাকে সাহায্য করতে হত তাকে। পেটের টানে এই কাজ করতে হলেও জানকি চায়, তাদের বিরহোড় জনজাতিকে সামগ্রিকভাবে সমাজের মূল স্রোতে ফেরাতে। তাই সেই লড়াই-ই চালিয়ে যাচ্ছে বিলুপ্তপ্রায় জনজাতির এই অষ্টাদশী কন্যা।
ছবি- অমিতলাল সিং দেও
[আরও পড়ুন: অভাবের সংসারে প্রজ্ঞাই ছিল আশা, ‘জঙ্গি’ মেয়ের কীর্তিকলাপে হতবাক পরিবার]
The post ইতিহাসে প্রথম, উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পেরল বিরহোড় কন্যা, শিক্ষার দায়িত্ব নিলেন বিধায়ক appeared first on Sangbad Pratidin.