সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: গায়েব হয়ে যাচ্ছে অরণ্য। বন দপ্তরের নজরে ‘যোগী’। ৩০ বছর ধরে তাঁর ‘দখলে’রয়েছে কাঁকসার বনকাটির সুরথ রাজার গড় জঙ্গলের মহর্ষি মেধাশ্রম। সেই এলাকা থেকেই একের পর এক বড় বড় শাল, সেগুন, মহুয়া, শিমুল গাছ পাচার হচ্ছে। ফাঁকা হচ্ছে গভীর জঙ্গল। তবুও চুপ কেন সেই যোগীনাথ ব্রহ্মানন্দগিরি? তবে কী তাঁরই মদতে গায়েব হয়ে যাচ্ছে অরণ্য? যোগীকে নোটিস দিয়েছে বন দপ্তর।
কথিত আছে, বহুকাল আগে বীরভূমের সুপুরের রাজা সুরথ যুদ্ধে পরাজিত হয়ে তাঁর ঘনিষ্ঠ সমাধি বৈশ্যকে নিয়ে কাঁকসার গড় জঙ্গলের মাঝে আশ্রয় নেন। মেধা মুনির নির্দেশে শুরু করেন বসন্তকালে দুর্গাপুজো। তখন বাঘ, সিংহের ভয়ে গভীর জঙ্গলে পা মাড়াতে ভয় পেতেন সকলেই। এখন সেই রাজপাট নেই, আর বাঘ, সিংহও নেই। সেই সুরথ রাজার গড় ৩০ বছর ধরে দখলে রয়েছে যোগীরাজ ব্রহ্মানন্দগিরি নামের এক সাধুর। জঙ্গলের মাঝে কয়েক একর জমি জুড়ে রয়েছে তাঁর মহর্ষি মেধাশ্রম নামে আশ্রম। সেখানে মা দুর্গার নিত্যপুজোও হয়। বিশেষ বিশেষ রীতিতেও চলে পুজোপাঠ। বহু মানুষের সমাগমও হয়। কয়েকবছর ধরে সেখানেই করা হচ্ছে পাকা নির্মাণও। তার আশপাশেই দেখা যাচ্ছে বহু বড় বড় গাছ পড়ে রয়েছে কাটা অবস্থায়। আশ্রমের পিছনেই কাটা অবস্থায় পড়ে একটি বড় শিমুল গাছও। আবার জঙ্গলে তাকালেই দেখা যাচ্ছে গোড়া আছে কিন্তু গাছ নেই।
[আরও পড়ুন: দুর্ঘটনা না অন্তর্ঘাত? হলং কাণ্ডের সত্যি জানতে তদন্ত কমিটি]
এই এলাকা বর্তমানে সবাই চেনে ‘যোগী বাবার’ গড় হিসাবে। তাহলে সেই গড় থেকে কীভাবে কাটা হচ্ছে বড় বড় গাছ? রাতে পাচারই বা কী করে হচ্ছে, উঠছে সেই প্রশ্নও। বন দপ্তরের উদাসীনতা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। বন দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, তাদের নজরে আসতেই মুচিপাড়া বন দপ্তরের কর্মীরা ওই এলাকায় পৌঁছন। যখন তাঁকে এই ভাবে বন দপ্তরের জমি দখল করতে নিষেধ করা হয় তখন বন দপ্তরের কর্মীদের সঙ্গে বচসায় জড়ান যোগী বাবা স্বয়ং। তার পরেই যোগীরাজ ব্রহ্মানন্দ গিরিকে একটি নোটিস দেওয়া হয়। সেই নোটিসে উল্লেখ রয়েছে, এই বনভূমি দখল বন সংরক্ষণ আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে। দ্রুত দখল মুক্ত করা না হলে কড়া আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই বিষয়ে যোগীরাজ ব্রহ্মানন্দগিরী বলেন ‘‘আমি ১৯৯০ সাল থেকে এখানে রয়েছি। জঙ্গলকে সাজিয়ে তুলেছি। হরিণ, ময়ূর এবং বন্য জীবজন্তুদের তৃষ্ণা নিবারণের লক্ষ্যে একাধিক জলাশয় খনন করেছি। আমরা গাছের চারা রোপণ করি প্রতিনিয়ত। কিছু গাছ কাটতে হয় পুজোর কাজের জন্য। তবে গাছ পাচার বা গাছ চুরির ঘটনা এখানে ঘটে না। অভিযোগ ঠিক নয়।’’
দুর্গাপুরের রেঞ্জার সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘একটি শিমুল গাছ কেটেছিলেন যোগীনাথ ব্রহ্মানন্দগিরি। আমাদের নজরে আসতেই সেখানে পৌঁছে যাই। তিন দিনের মধ্যে বন দপ্তরের অফিসে আসার বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিলাম। তার পরেই তিনি এসেছিলেন। উনি বলেছেন এই ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে আর ঘটবে না। তিনি নিজে গাছ লাগাব। তবুও আমাদের কড়া নজরদারি চলছে গোটা এলাকা জুড়ে।’’