সুব্রত বিশ্বাস: সুরক্ষায় জোর লাগাও। রেল বোর্ডের এই নির্দেশ এখন দেশজুড়ে পালনের অব্যর্থ চেষ্টা চালাচ্ছে রেল। অফিস থেকে বাড়িতে ফিরছেন? জানবেন, আপনার যাত্রা মোটেই সুরক্ষিত নয়। আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ব্যস্ত সময়ে গার্ডের কামরাতেই উৎসবের মেজাজে যাত্রা করছেন রেলকর্মীরা। এর ফলে যখন তখন ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। রেল কর্তাদের কথায়, একাজ চরম বেআইনিই শুধু নয়, যাত্রী জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার নামান্তর৷ হাওড়া, শিয়ালদহে ভিড়ের সময়ে এই দৃশ্য একেবারে পরিচিত। গার্ডের কামরায় আট থেকে দশজন। এখন লোকাল উইন্ড গ্লাসের যা বিন্যাস তাতে একেবারে টিভির স্ক্রিনের মধ্যে ভিড়ের দৃশ্যের মতো লাগে যাত্রীদের কাছে। গার্ডের কামরায় এত ভিড়?
[শহরে প্রতি ধাপে বাস ও মিনিবাসের ভাড়া বাড়ছে ১ টাকা করে]
অপারেশন বিভাগের কর্তারা এটাকে চূড়ান্ত অনৈতিক বলে ব্যখ্যা করে বলেন, গার্ড হলেন ‘জাজ অফ দ্য ট্রেন’। ট্রেন পরিচালনার সম্পূর্ণ দায় গার্ডের। সম্পূর্ণ ট্রেনটি নজরে রাখতে হয় তাঁকে। স্টেশন মাস্টার, কেবিনম্যান ও গেটম্যানদের সঙ্গে গার্ডের সিগন্যাল বিনিময় করতে হয়। সবুজ সংকেত গার্ড না দেখালে বিপদের অনুমান করে কেবিনম্যান। তিনি পরের স্টেশনেই ট্রেনটি দাঁড় করিয়ে দেবেন। এমন বহুবার হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। কেবিনম্যানকে সবুজ সংকেত না দেখানোয় সিগন্যাল লাল করে দেওয়ার মতো ঘটনা। মার খেয়েছে ট্রেন। প্রতি মুহূর্তে চালক ও সহকারী চালকের সঙ্গে গার্ডের যোগাযোগ রাখতে হয়। এমার্জেন্সি ব্রেকিং সিস্টেম গার্ডের কামরাতেই থাকে, ফলে চালক অস্বাভাবিক গতি বাড়ালে তা কমানোর ক্ষমতা রাখেন গার্ডই। তিনিই গতি কন্ট্রোল করেন। কিন্তু বর্তমানে চালকরা বহু সময় গার্ডের সঙ্গে যোগাযোগের করেও বিশেষ পাত্তা পান না এই কারণে বলে চালকদের ক্ষোভ। পাশাপাশি কোন স্টেশন দাঁড়াল, কতক্ষণ দাঁড়াল সব রিপোর্ট রাখতে হয় গার্ডকে। রাখেন চালকও। দুই রিপোর্ট রানিং রুমে জমা পড়ে। যা দেখে ট্রেন চলাচলের মূল্যায়ন হয়।
[মন্ত্রিসভায় বড়সড় রদবদল, দায়িত্ব কমানো হল শোভনের]
গার্ডের কামরাতে সিগন্যাল ল্যাম্প, টেলিফোন স্ট্যান্ড, পার্সেল সামগ্রী থাকে। থাকে গার্ডের বড় ব্যাগ। সেখানে এতজন এক সঙ্গে ওই কমরাতে ওঠায় গার্ডের কাজে চরম ব্যাঘাত ঘটে বলে গার্ডরাই মনে করেছেন। গার্ডদের কথায়, সহ-কর্মী থেকে রেলের সংগঠনের যুক্তরাই সাধারণত এই কামরায় চড়েন। মাঝে মধ্যে চড়েন কর্তারাও। ফলে গার্ড তাঁদের বাধা দিলে বিপদ। ভিন্ন পথে সাজার ভয়ে বাধা দিতে পারেন না। অপারেশন বিভাগের আধিকারিকরা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, গার্ডের ক্যাবে কেউই চড়তে পারেন না। মেটাল পাশ নিয় অনুমতি নিয়ে চালকের কামরাতে ওঠার সুবিধা থাকলেও গার্ডের কামরায় চড়া নৈব নৈব চ। এজন্য কঠোর আইন রয়েছে। হাওড়া আরপিএফের সিনিয়র কমান্ড্যান্ট রজনীশ ত্রিপাঠী বলেন, নিয়মিত রেড করা হবে ট্রেনগুলিতে। ক্যাবে চড়লেই গ্রেফতার করা হবে আইন মেনেই। ট্রেন চালানোর সময় গার্ডদের মনঃসংযোগ অত্যন্ত জরুরি। এজন্য তাঁদের বিশেষ প্রশিক্ষণের সঙ্গে যোগা প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। বিশ্রামের জন্য রানিংরুমে বিশেষ ব্যবস্থা। এত আয়োজন সত্ত্বেও কেন এত উদাসীনতা যাত্রীদের জীবনরক্ষায়, সে প্রশ্ন তুলেছেন যাত্রীরা।
The post গার্ড ক্যাবে যাতায়াত রেলকর্মীদের, নিরাপত্তা ইস্যুতে নীরব রেল appeared first on Sangbad Pratidin.