সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: ২০১২। ফেডারেশন কাপ।
ইস্টবেঙ্গল : ৩ — ডেম্পো : ২
২০২৪। সুপার কাপ।
ইস্টবেঙ্গল : ৩ — ওড়িশা এফসি : ২
অদ্ভুত সমাপতন। ১২ বছর আগে শিলিগুড়ির পর, এবার ভুবনেশ্বর। ফেডারেশন কাপের পর, সুপার কাপ।
এক যুগ বাদে আবার ভারতসেরা ইস্টবেঙ্গল (East Bengal)। মাঝের এই ১২ বছরকে মিলিয়ে দিয়ে গেল যে স্কোরলাইন, তা ধরিয়ে দিলেন যিনি, তাঁর নাম – ট্রেভর জেমস মর্গ্যান (Trevor James Morgan)। আর তাই কার্লেস কুয়াদ্রাত (Carles Cuadrat) সুপার কাপ (Kalinga Super Cup) হাতে তোলার পর থেকে বারবার ঘুরে ফিরে আসছে সাহেব কোচের প্রসঙ্গ।
তিস্তা নদীর পাশের শহরের পর মহানদীর শহরে যখন রূপকথা লিখলেন কয়েকজন লাল-হলুদ জার্সিধারী, তখন ৬৬২৮ কিলোমিটার দূরে সোয়ান নদীর পাশে পার্থ নামক শহরে বসে এক ৬৭ বছরের ফুটবলপ্রেমী বলছিলেন, “আশা করব এবার ইস্টবেঙ্গলে এক নতুন যুগের সূচনা হবে।”
[আরও পড়ুন: লাল-হলুদ সমর্থকদের ট্রফি উৎসর্গ করলেন কার্লেস কুয়াদ্রাত]
তাঁর আমলে দেশজুড়ে রূপকথা লিখেছে ইস্টবেঙ্গল। সব টুর্নামেন্টে দেখা গিয়েছিল লাল-হলুদ ঝড়। সোনার পাথরবাটি হয়ে থেকে গিয়েছিল শুধু আই লিগ। ইস্টবেঙ্গল তো বটেই, গড়ের মাঠে কোনও বিদেশি ফুটবলার যখনই সবুজ ক্যানভাসে আলপনা এঁকেছেন, যুগের পর যুগ তাঁকে তুলনায় বসতে হয়েছে ইরানের বোহেমিয়ান ফুটবলারের সঙ্গে। ট্রেভর পরবর্তী জমানায় ঠিক তেমনই কোনও কোচ সাফল্য পাওয়া শুরু করলেই, তাঁর তুলনা হয় মর্গ্যানের সঙ্গে। এইসব নিয়ে অবশ্য এখন আর অত ভাবেন না সাহেব কোচ।
মর্গ্যান বলছিলেন, “এই জয়টা ইস্টবেঙ্গলের জন্য খুব দরকার ছিল। গত ১২ বছর ধরে সমর্থকরা খুব যন্ত্রণা পেয়েছে। ঝড়-জল-বৃষ্টি, সাফল্য-ব্যর্থতা সবসময় থেকেছে দলের সঙ্গে। ওরাই ইস্টবেঙ্গলের আসল শক্তি। ওরা রাতে শান্তিতে ঘুমোতে যাবে। এটা ভেবে আমার খুব আনন্দ হচ্ছে।”
তাঁর আমলে ডেম্পোর বিরুদ্ধে ৩-২ ব্যবধানে জিতে ফেডারেশন কাপ ঘরে তুলেছিল লাল-হলুদ। এবারও স্কোরলাইন সেই একই। ৩-২। শুধু বদলে গিয়েছে বিপক্ষ। মর্গ্যান যোগ করলেন, “কী অদ্ভুত না? সেবারও স্কোরলাইন ছিল ৩-২। আজও তাই। আশা করি এবার ইস্টবেঙ্গলে এক নতুন যুগের সূচনা হবে।”
দীর্ঘ ১২ বছরের প্রতীক্ষার অবসান। ৯০ মিনিটের যুদ্ধে টানা ১৫ ম্যাচ অপরাজিত ওড়িশাকে তাদের ঘরে হারিয়ে ফের ভারতসেরা ইস্টবেঙ্গল। স্বভাবতই কলকাতার রাজপথে উড়বে লাল-হলুদ আবির। সেটা ভেবেই ৬৭২৭ কিলোমিটার দূরে বসে স্বস্তি পাচ্ছেন মর্গ্যান। তবে লড়াই এখানেই শেষ নয়। ৩ ফেব্রুয়ারি আইএসএলের প্রথম লেগের ডার্বি। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ফিরতি ডার্বি আগামী ১০ মার্চ। দুটি ‘বড় ম্যাচ’-এ কুয়াদ্রাতের লাল-হলুদের জয় দেখার অপেক্ষায় একদা ফেডারেশন কাপ জেতা মর্গ্যান।