অভ্রবরণ চট্টোপাধ্যায়, শিলিগুড়ি: ফুটবলে নক্ষত্রপতন। না ফেরার দেশে বিশ্বের ফুটবল সম্রাট পেলে। যাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া ক্রীড়াজগতে। এই পেলেই কসমসের হয়ে একবার কলকাতায় খেলতে এসেছিলেন। ইডেন গার্ডেনসের মাঠে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে সেই প্রদর্শনী ম্যাচ ২-২ গোলে ড্র হয়। আর ওই ম্যাচেই মোহনবাগানের হয়ে গোল করেছিলেন শ্যাম থাপা। পেলের প্রয়াণে সেই স্মৃতিতেই ডুবে দিয়েছেন ভারতের প্রাক্তন ফুটবলার।
শ্যাম থাপা (Shyam Thapa) বলেন, “খেলার শেষে বুকে জড়িয়ে পেলে বলেছিল ইউ আর ভেরি গুড প্লেয়ার। আমার মনে হচ্ছিল, ভগবান আমাকে বুকে টেনে নিয়েছে। ওই দিনটা আমৃত্যু পর্যন্ত ভুলতে চাই না।”
১৯৭৭ সাল। ইস্টবেঙ্গলে তখন দাপিয়ে খেলছেন পাহাড়ের শ্যাম থাপা। তাঁকে দলে নেওয়ার জন্য বড় অঙ্কের প্রস্তাব দেয় সবুজ-মেরুন। কিন্তু টাকার প্রলোভনে দল বদলাতে রাজি হননি তিনি। মোহনবাগান তাঁকে জানায়, পেলের সঙ্গে দলের খেলা রয়েছে। সে কথা শুনেই মোহনবাগানে সই করতে রাজি হয়ে যান শ্যাম থাপা। শুক্রবার শিলিগুড়ির হোটেলে বসে বলছিলেন, “টাকা নয়, পেলের সঙ্গে খেলার লোভ ছাড়তে পারিনি। উনি আমার কাছে ভগবান। উনাকে দেখব উনার সঙ্গে খেলব ভেবেই আমি উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম।”
[আরও পড়ুন: প্রতীক্ষার অবসান, বছরশেষে আকাশছোঁয়া মূল্যে এশিয়ার ক্লাবে সই রোনাল্ডোর]
এরপর মোহনবাগানের জার্সি গায়ে মাঠে নামেন তিনি। দলে তখনকার সেরা খেলোয়াড়দের ভিড়। প্রসুন বন্দ্যোপাধ্যায়, সুব্রত ভট্টাচার্য, গৌতম সরকার, সুভাষ ভৌমিক আরও অনেকে। তবুও লিগে পরপর ম্যাচ হারছিল সবুজ-মেরুন। দলে সেভাবে জায়গাও পাচ্ছিলেন না শ্যাম থাপা। বড় ম্যাচ হেরে আরও কোণঠাসা তাঁরা। ঠিক ওই সময় খেলতে আসে ব্রাজিলের ক্লাব কসমস। ওই দলে ছিলেন পেলে, বেকেনবাওয়ার। সে ম্যাচের কথা শুনেই টগবগ করে ফুটছিলেন বাগানের প্রতিটি খেলোয়াড়। শ্যাম থাপা বলেন, “আমরা বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে পেলের সঙ্গে খেলব। তখন বিশ্ব ফুটবলে পেলেকে সকলে ভয় পায়। তাঁর সঙ্গে খেলব তা যেন আমাদের কাছে স্বপ্ন। খেলা শুরু হল, পেলেকে ছুঁয়ে দেখলাম। ওঁর দৌড় এখনও চোখে ভাসে। ওঁরা প্রথমে গোল দিয়ে এগিয়েও যায়। কিন্তু তা শোধ করেছিলাম আমি। খুব আনন্দ হয়েছিল ওইদিন।”
তিনি আরও বলেন, “সন্ধ্যায় যখন আমরা পার্টিতে যাই, আমার সঙ্গে পেলের পরিচয় করিয়ে দেন বাগান কর্তারা। ওই সময় আমি পেলেকে বলি, আজকের ম্যাচে প্রথম গোল আমারই ছিল। তা শুনেই ইয়ার্কি মেরে বলেছিলেন, তোমার সঙ্গে হাত মেলাব না। পরে তিনি একমাত্র আমাকেই বুকে জড়িয়ে ধরে গুড প্লেয়ার বলে যান। তারপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। পেলের ছোঁয়াতে পুরো বদলে যাই। ওই বছর আইএফএ শিল্ড, ডুরান্ড ও রোভার্স কাপ জিতেছিলাম। প্রতিটি প্রতিযোগিতায় ফাইনাল ম্যাচে আমার গোল রয়েছে। তাই পেলে মারা গেলেও আমার কাছে উনি জীবিত আজীবন। উনার মতো খেলোয়াড়ের সংস্পর্শে আসতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে হয়।”