ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: কেন্দ্র সরকার ‘এক দেশ এক ভোট’ নীতি সদ্য মন্ত্রিসভায় পাস করিয়েছে। প্রায় সব বিরোধী দল এর বিরোধিতা করলেও এই প্রথম কোনও বামপন্থী দল হিসাবে তার খোলামেলা সমর্থন জানাল এ রাজ্যের ফরওয়ার্ড ব্লক। যদিও এ বিষয়ে নিজেদের অবস্থান এখনও স্পষ্ট করেনি বামফ্রন্ট। এরইমাঝে ফরওয়ার্ড ব্লক এই নীতিকে সমর্থন করায় বাম জোটের অন্দরে নতুন করে সংঘাতের সম্ভাবনা উঁকি দিতে শুরু করেছে।
বিজেপি সরকারের দাবি অনুযায়ী, একসঙ্গে লোকসভা আর বিধানসভা ভোট হলে নির্বাচনী ব্যয় অনেক কমবে। সেই লক্ষ্যেই আনা হচ্ছে এক দেশ, এক ভোট। এই পদক্ষেপকে সমর্থন জানিয়ে ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “একেবারেই সঠিক নীতি। ভারতবর্ষের মতো দেশে নির্বাচনী খরচ কমিয়ে তাকে উন্নয়নের অন্য কাজে ব্যবহার করা একেবারে সঠিক। তাছাড়া একই দিনে এক দফায় ভোট হলে ভোট শান্তিতে হবে।” আরও একটি দিক তিনি উল্লেখ করেছেন। তিনি মনে করেন, লোকসভায় আর বিধানসভায় প্রেক্ষিত বিচার করে জনতার ভিন্ন দলকে সমর্থন করার ট্রেন্ড দেখা যায়। ভোট একসঙ্গে হলে তাতেও বদল আসতে পারে। লোকসভায় যে দলকে মানুষ সমর্থন জানাবে, বিধানসভাতেও তাকেই সমর্থন জানাতে পারে। তবে এই ‘এক দেশ এক ভোট’ নীতি আদপে প্রচলন হলে তার জন্য কিছু নির্দিষ্ট নীতি কঠোরভাবে মেনে চলা জরুরি বলে জানিয়েছেন নরেনবাবু।
তবে বামফ্রন্টকে পাশ কাটিয়ে ফরওয়ার্ড ব্লকের তরফে এভাবে ‘এক দেশ, এক ভোট’ নীতি সমর্থনের ঘটনায় রাজনৈতিক মহলের অনুমান, সবকিছু ঠিক ঠাক চলছে না জোটের মধ্যে। সূত্রের খবর, আর জি কর-সহ রাজ্যের একাধিক ইস্যুতে নিজেদের নীতি ঠিক করলেও এক দেশ, এক ভোট নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্তে আসেনি বামফ্রন্ট। এই বিষয়ে তাদের অবস্থানও স্পষ্ট নয়। দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিও এর বিরোধিতায় সরব। তার মাঝে মোদি সরকারের পদক্ষেপে বামফ্রন্টের শরিক দলের সমর্থন, ফ্রন্টের অন্দরে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে। সিপিএমকে পাশ কাটিয়ে ফরওয়ার্ড ব্লকের এহেন পদক্ষেপ প্রসঙ্গে রাজনৈতিক মহলের দাবি, বর্তমানে রাজ্যে অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছে সিপিএম। এই অবস্থায় বামফ্রন্টে সিপিএমের প্রভুত্ব মানতে রাজি হচ্ছে না বাকিরা। তাই নীতিগত অবস্থান নিতে বা নীতি তৈরিতে আর সিপিএমের 'গ্রিন সিগন্যালের' দিকে তাকিয়ে থাকতে রাজি নয় তারা। যার পরিণতি, জোটে ক্রমশ স্পষ্ট হতে শুরু করেছে 'ফাটল'। ফরওয়ার্ড ব্লকের এই সিদ্ধান্ত সেটাই আরও স্পষ্ট করে দিচ্ছে।
এদিকে এক দেশ, এক ভোট একযোগে সরব হয়েছে বিরোধী শিবির। বিরোধীদের মধ্যে তৃণমূলের তরফে প্রশ্ন তুলে বলা হয়েছে। ধরা যাক, লোকসভা আর বিধানসভা ভোট একসঙ্গে হল। কিন্তু মাঝপথে কোনও রাজ্যের সরকার কোনও কারণে পড়ে গেল। বিধানসভা ভেঙে আবার ভোট হল। সেক্ষেত্রে তো তার আরও ৫ বছর মেয়াদ হবে। সেই মেয়াদের সঙ্গে আগে হয়ে যাওয়া লোকসভা ভোটের মেয়াদই তো মিলবে না। তাহলে এই নীতির সার্থকতা কোথায়? এই ধরনের ঘটনা ঘটলে সিদ্ধান্তের সমর্থনকারী ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক বলেন, তেমন কোনও ঘটনা ঘটলে সেক্ষেত্রে ওই রাজ্যের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে বাকি মেয়াদ পার করা যেতে পারে। তবে একান্ত ভোট করতে হলেই ৫ বছরের বদলে আগের ভোটের বাকি থাকা মেয়াদ পর্যন্তই নতুন গড়া সরকার চালানো যাবে, এমন নীতিও প্রণয়ন করতে হবে।
তবে নরেনবাবু মনে করেন, সরকার যদি কোনওভাবে দল বদলের জেরে ভেঙে যায়, তা রুখতে কড়া আইন দরকার। তাঁর কথায়, “দলত্যাগ বিরোধী আইনকে আরও কড়া করতে হবে। তবেই দলে ভাঙন রোধ করা সম্ভব হবে সেক্ষেত্রে। আর তার পরও যদি কেউ দল ছাড়ে তাঁকে পদ, ক্ষমতা সব ত্যাগ করে তবেই দল ছাড়তে হবে। তার পরও ন্যূনতম সময় ভোটে না দাঁড়াতে পারার মতো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা রাখতে হবে।”