নব্যেন্দু হাজরা: বর্ষাশুরু এবং শেষের সময়ই বজ্রপাতের (Lightening) সংখ্যা বাড়ে। আবহাওয়াবিদরা জানাচ্ছেন, জুন এবং সেপ্টেম্বর – এই দু’মাসে সবথেকে বেশি বাজ পড়েছে রাজ্যে। বছর কয়েক আগেও কলকাতা বা শহরতলিতে বাড়িতে বাজ পড়ার ঘটনা শোনা যেত না। কিন্তু গত কয়েকবছরে সেই সংখ্যা যেন এক ধাক্কায় অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। মৃত্যুও হয়েছে বেশ কয়েকজনের। যেমনটা দেখা গেল শনিবার দুপুরে রিজেন্ট পার্কে (Regent Park)। বাড়ির ছাদে ভিজতে গিয়ে বাজ পড়ে মৃত্যু হল বছর চব্বিশের ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া কৌশিক করের।
রাজ্যে বজ্রপাতে মৃত্যুর পরিসংখ্যান রীতিমতো চমকে দেওয়ার মতো। সম্প্রতি বিধানসভায় (Assembly) দেওয়া পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে, ২০১৮ সালে রাজ্যে বাজ পড়ে মৃত্যু হয়েছে ৩০৪ জনের, ২০১৯ সালে ২৬৫, ২০২০ সালে ২৯৫, ২০২১ সালে ২৬০, ২০২২ সালে ২২৯ এবং ২০২৩ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত ১৩৬ জনের। আবহবিদরা জানাচ্ছেন, এই মৃত্যু বেশিরভাগই হয়েছে জুন এবং সেপ্টেম্বর মাসে। কিছুটা আগস্টের শেষ দিকে। মানে অঙ্ক কষলে দেখা যাবে বজ্রপাতের কারণে ফি বছরে ৬০-৭০ দিনে এই ২৫০-৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। মানে বাজ পড়ে দিনে গড়ে চারজনের মৃত্যু হয় রাজ্যে।
[আরও পড়ুন: ধূপগুড়ি উপনির্বাচনের ৪৮ ঘণ্টা আগে জোর ধাক্কা, বিজেপিতে যোগ প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়কের]
আবহবিদদের কথায়, শহরে বজ্রপাত বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ জলবায়ু ও আবহাওয়াজনিত নেতিবাচক পরিবর্তন। পাশাপাশি যে সময় নিম্নচাপ বা বর্ষার (Rain) বৃষ্টি হয় না সেই সময়েই এই বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি হয়। বর্ষার সময়কাল এখন কমে গিয়েছে। তার বদলে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি বেড়েছে। একইসঙ্গে কংক্রিটের বাড়ি রাস্তা এবং ইমারত তৈরি ও বেশি পরিমাণে নির্মাণকাজের ফলে শহরে তাপ বা হিট বাড়ছে। এতে বায়ুপ্রবাহের পরিবর্তন ঘটছে। যা বাজ পড়াকে প্রভাবিত করছে। নগরায়নের ক্ষেত্রে উঁচু বাড়ি তৈরির জন্য বায়ুপ্রবাহের ধরনও আমূল বদলাচ্ছে। সেক্ষেত্রে এই পরিবর্তন বজ্রপাতে ইন্ধন জোগাচ্ছে। উঁচু বাড়ি তৈরির জন্য সবুজ নষ্ট হওয়ার কারণেও বজ্রপাতের ঘটনা বেড়ে চলেছে। শহুরে দূষণ মূলত নির্মাণ ও পরিবহণের জন্য দূষণের জেরে ভাসমান ধূলিকণা বেড়ে যাওয়ার প্রভাবে বজ্রপাতের ঘটনা উত্তরোত্তর বাড়ছে।
[আরও পড়ুন: লাগাতার যৌন নির্যাতনের ‘বদলা’, ‘সমকামী’ শিক্ষককে গলা কেটে খুন ১৪ বছরের কিশোরের!]
তাছাড়া, যুগ যুগ ধরে মেঘে মেঘে সংঘর্ষের ফলে আকাশে যে কয়েক লক্ষ ভোল্টের বিদ্যুৎ তৈরি হয়, তা আকাশ থেকে দ্রুত গতিতে মাটির দিকে ধেয়ে আসে। যত উঁচু বাড়ি গাছ এবং বাড়ির ছাদ পায়, সেখানে তত দ্রুত সেই বাজ আছড়ে পড়ে। এমনকী রান্নাঘরের কল এবং বাড়ির মধ্যে স্টিলের কলও বজ্রপাতের সুপরিবাহী। আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের (Alipore Weather Office) পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তা গণেশকুমার দাস বলেন, ‘‘বজ্রপাত বেড়েছে ঠিকই। বর্ষা শুরু এবং শেষের সময়ই বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির ঘটনা ঘটে। বেশি হয় জুন এবং সেপ্টম্বর মাসে।’’