দুলাল দে, দোহা: দোহায় বিশ্বকাপ খেলতে এসে ফ্রান্স শিবিরে যা কখনও দেখা যায়নি, সেটাই ঘটল মঙ্গলবার ফ্রান্স প্র্যাকটিসে। দলের অন্য ফুটবলাররা নির্দিষ্ট সময় মেনে প্র্যাকটিসে এলেও, খোদ এমবাপেই এলেন না! শনিবার গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলবে ফ্রান্স। তার আগে দলের সেরা তারকা, যিনি এই মুহূর্তে বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতার দৌড়েও আছেন, সেই এমবাপেই নেই প্র্যাকটিসে!
ইংল্যান্ড ম্যাচের প্রস্তুতিতে যখন দলের অন্য ফুটবলাররা ব্যস্ত, তখন কেন নিজেকে প্র্যাকটিস থেকে সরিয়ে নিলেন এমবাপে? তাহলে কি শেষ ম্যাচে প্রি কোয়ার্টার ফাইনালে পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলতে গিয়ে চোট পেয়েছেন ফরাসি তারকা? কেন এমবাপে প্র্যাকটিসে নেই, ফরাসি দলের পক্ষে কোনও যুতসই উত্তর না মেলায় সমস্যাটা আরও বেড়েছে। কারণ, পোল্যান্ড ম্যাচ খেলে দু’দিন বিশ্রামের পর ইংল্যান্ড ম্যাচের প্রস্তুতিতে এদিনই প্রথম প্র্যাকটিসে নামলেন ফরাসি ফুটবলাররা। আর সেখানেই দেখা গেল অনুপস্থিত এমবাপে! আর এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই দোহায় দলের প্র্যাকটিস দেখতে আসা ফরাসি সমর্থকদের মধ্যে মারাত্মক চাঞ্চল্য ছড়ায়।
[আরও পড়ুন: ‘কেউ যেন খালি পেটে না ঘুমায়, তা নিশ্চিত করতে হবে কেন্দ্রকে’, মন্তব্য সুপ্রিম কোর্টের]
এমনিতে দোহাতে এমবাপেকে কেন্দ্র করে বিতর্কের শেষ নেই। অসাধারণ পারফরম্যান্সের জন্যই তারকা ফুটবলারের বিখ্যাত ‘মুড’ নিয়ে নানা ব্যাপার ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে। কিন্তু এদিন প্র্যাকটিসে না এসে ফরাসি স্ট্রাইকার যে ধোঁয়াশা তৈরি করে দিলেন, তারপর এই আলোচনা এখন চলবেই। তার মধ্যে স্পনসরশিপ নিয়ে নতুন করে ফিফার সঙ্গেও সমস্যা বাধিয়ে ফেলেছেন তিনি। ম্যাচের সেরা হয়েও ম্যাচের পর সাংবাদিক সম্মেলনে না আসায় এমবাপের জন্য ফ্রান্স ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনকে বড় আর্থিক জরিমানা করেছিল ফিফা। তা জানতে পেরে, সেই জরিমানার টাকা নিজেই দিয়ে দেন তিনি। কিন্তু এবার এই সমস্যা মেটাবেন কী করে? এমনিতেই স্পনসরশিপ বিতর্কে এতদিন ফ্রান্স ফুটবল ফেডারেশনের সঙ্গে সমস্যা চলছিল এমবাপের। এবার সমস্যা তৈরি হয়েছে খোদ ফিফার সঙ্গে।
বিশ্বকাপ প্রস্তুতির শুরুর সময় ফ্রান্স ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের নিজস্ব স্পনসরদের প্রমোশনে যেতে রাজি হননি এমবাপে। পরিষ্কার জানিয়ে দেন, তিনি মন থেকে মেনে নিতে পারছেন না, এরকম কোনও স্পনসরের প্রমোশনে হাজির থাকবেন না তিনি। ফেডারেশনের স্পনসর বলার পরেও এমবাপেকে অনুষ্ঠানে যেতে রাজি করাননি ফেডারেশন কর্তারা। কিন্তু এবার ফিফার কর্তারা কী করবেন? বিশ্বকাপে ম্যাচের সেরার পুরস্কার দিচ্ছে একটি বিয়ার সংস্থা। ফলে ম্যাচের পর ফুটবলাররা যখন ম্যাচ সেরার পুরস্কার নিচ্ছেন, তখন ট্রফিতে সেই বিয়ার কোম্পানির লোগো থাকছে। এর পাশাপাশি সেই ট্রফি ধরে সাক্ষাৎকারও দিতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট ফুটবলারকে। যা পরে বিয়ার সংস্থাটি তাদের সোশ্যাল মিডিয়াতেও প্রকাশ করছে।
কিন্তু এমবাপের ক্ষেত্রে এসেই শুরু হয়েছে সমস্যা। এমবাপে এর কোনও নিয়মই মানতে রাজি নন। কোনও বিয়ার প্রস্তুতকারক সংস্থার প্রচার করতে তিনি একদমই রাজি নন। ফলে যখন ম্যাচের সেরার পুরস্কার গ্রহণ করছেন, ক্যামেরাম্যানদের সামনে ট্রফিটা ঘুরিয়ে ধরছেন। এতে স্পনসরের লোগোটা চলে যাচ্ছে পিছনে। ম্যাচের সেরার পুরস্কার হাতে এমবাপের যে তিনটে ছবি আপাতত দেখা গিয়েছে, তাতে কোনএটাতেই বিয়ার প্রস্তুতকারক সংস্থার লোগো দেখা যাচ্ছে না। তাছাড়া ট্রফি ধরে কোনও সাক্ষাৎকারও তিনি দিতে রাজি হচ্ছে না। ফলে বিয়ার প্রস্তুতকারক সংস্থাটি তাদের সোশ্যাল মিডিয়াতেও এমবাপের সাক্ষাৎকার পোস্ট করতে পারছে না। আর এই নিয়েই তৈরি হয়েছে সমস্যা। যা নিয়েও ফিফার কাছে রিপোর্ট করেছে ওই স্পনসর। এখন বল পুরোটাই ফিফার কোর্টে। তারমধ্যে আবার এদিন প্র্যাকটিসেও এলেন না তিনি।
[আরও পড়ুন: গরু পাচার কাণ্ড: অনুব্রত সঙ্গী সায়গল হোসেনের ৩২টি সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করল ইডি]
ফরাসি শিবির থেকে শুধু এটুকুই জানা যাচ্ছে, বিশ্বকাপের প্রস্তুতির শুরু মুহূর্তে কয়েকদিন গোড়ালিতে ব্যান্ডেজ বেঁধে প্র্যাকটিস করতে দেখা গিয়েছিল এমবাপেকে। কিন্তু তারপর থেকে কোনওরকম চোট পাননি ফরাসি তারকা। যদিও এদিন প্র্যাকটিস শুরুর আগে মাঠের ভিতর ফ্রান্স কোচ দেশঁ এবং টিম ডাক্তারকে অনেকক্ষণ আলোচনা করতে দেখা গিয়েছে। আর তা নিয়েই তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা।