shono
Advertisement

বৃষ্টির দিনে কেমন আছে বন্ধুজন, মন টানে…

‘বন্ধু বিনে প্রাণ বাঁচে না…’ The post বৃষ্টির দিনে কেমন আছে বন্ধুজন, মন টানে… appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 04:27 PM Aug 05, 2018Updated: 04:57 PM Aug 05, 2018

শাম্মী হুদা: পায়ে জলের ছাট পেয়ে জানলাটা টেনে শুয়ে পড়ল অমিত। সকাল দশটাতেও বৃষ্টির খামতি নেই। এখন এক কাপ কড়া কফির সঙ্গে খবরের কাগজ পেলে মন্দ হত না। পরক্ষণেই, ফের বালিশে মাথা এলিয়ে দিল। রবিবারের মজাটা এভাবে ভেস্তে দিতে নেই। যতক্ষণ পারো বিনোদনে থাকো। ঘুমের থেকে বড় বিনোদন কীইবা হতে পারে। পায়ের তলায় মচমচিয়ে ভাঙছে শুকনো পাতা। অদূরেই প্রায় শুকিয়ে আসা ঝিলে চড়ছে হাঁস। কতক্ষণ রিনির হাত ধরে হেঁটেছিল মনে নেই। হাঁসেদের সম্মিলিত ডাকে চমক ভাঙে। মুহূর্তেই হাত ছাড়িয়ে নিয়েছে দু’জনে। মায়ের অনিচ্ছায় অমিতকে বিয়ে করা আদৌ ঠিক হবে কিনা তা নিয়েই ভাবছে রিনি। এরমধ্যে কখন হাত ধরেছিল মনে পড়ছে না। চাঁপার কলির মতো আঙুল। অঙ্কের স্যারের কাছে খাতা দিতে গিয়ে প্রথম দেখা। সেই আঙুলের কফিরঙা নেলপালিশ কবেই যেন অমিতকে সত্যযুগে টেনে নিয়ে গিয়েছে। যেমন করে শকুন্তলা দুষ্মন্তকে টেনেছিল। নাহঃ আর কিছু ভাবতে পারছে না। কলেজ শেষ হলেই বিলাসপুরের বাড়িতে ফিরে যাবে রিনি। কলকাতায় থেকে অমিত তখন কি করবে। রিনির বাবা খুব শিগগির বন্ধুর ছেলের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেবেন। অমিতের কি হবে। ওই কফিরঙা নেলপালিশ, চাঁপার কলির মতো হাত। না না এস্বপ্ন ব্যর্থ হতে পারে না। টিউশন স্যারের নোট দেওয়া নেওয়ার মধ্যে শুধু বন্ধুত্ব আটকে থাকতে পারে। কিন্তু সেতো রিনিকে মোটেই বন্ধু ভাবে না। কিন্তু রিনির মা কিছুতেই অমিতকে মেনে নেবেন না। এক ক্লাসে পড়ার জন্য নয়, অমিতরা বাঙাল আর রিনিরা পুরুলিয়ার ঘটি। কর্মসূত্রে বিলাসপুরে থাকে রিনির পরিবার।

Advertisement

বিদেশ বিভুঁইয়ে মেয়েকে কলেজে ভরতি করে দিতে রূমাদেবীর আপত্তি ছিল। তাই শিলিগুড়িতেই পড়তে পাঠিয়ে দিলেন। শহরের দেশবন্ধু পাড়ার আদিবাসিন্দা রিনির দাদু। বংশপরম্পরায় সবাইই প্রায় রেলে কর্মরত। সেই ছোটবেলায় যখন দাদুর হাত ধরে স্টেশনে বাইরে এসে দাঁড়াত রিনি, তখন ধুধু মাঠ ছাড়া কিছুই চোখে পড়ত না। আজকের জমকালো এনজেপি স্টেশন তখন দিনভর মাছের লোভে বসে থাকা বকের মতো নিঃসঙ্গ ছিল। দূর থেকে এখনও স্টেশনটা চোখে পড়ছে। তবে পুরোটা নয়, চারদিকে গজিয়ে ওটা নগর সভ্যতায় কোথাও হারিয়ে গিয়েছে সেদিনের নির্জনতা। রিনিও আর ছোটটি নেই। সামনের মাসেই একুশে পড়বে। পুজো পেরোলেই বিয়ে। অমিতকে কীইবা বলবে সে। বাঙাল বাড়িতে মেয়ের বিয়ে দেবেন না। রুমাদেবীর ধনুকভাঙা পণ। আজ তাই বন্ধুত্ব জিইয়ে রেখে সম্পর্কের ইতি টানতে চেয়েছিল। কিন্তু কোথা থেকে কি হয়ে গেল। ঝিলের পাড়ে হাঁটতে হাঁটতে কখন যে হাত ধরে ফেলেছে মনে নেই। সূর্য পাটে বসেছে, এবার ফিরতে হবে। কাল সকালেই ট্রেন। বিলাসপুরে ফিরে যাচ্ছে রিনি।

অ্যালার্ম ক্লকের রাজকীয় আওয়াজে স্বপ্ন ছিঁড়ে যায়। চাদর সরিয়ে বৃষ্টি ভেজা সকালকে দেখতে থাকে অমিত। নাহঃ এবার খাবারদাবারের আয়োজন না করলেই নয়। ফ্রেশ হয়ে ঘরে ঢুকতেই টেবিলে চায়ের কাপ দেখে নমিতামাসিকে মনে মনে ধন্যবাদ। আজ খিচুড়ি নাহলে ঠিক জমবে না। কিন্তু হরিদা এই বৃষ্টিতে বাজারে যেতে রাজি হবে না। ছাইপাঁশ ভেবে নমিতামাসিকে ছুটিই দিয়ে দিল। ইজি চেয়ারে গা এলিয়ে বৃষ্টি বিধৌত সকাল তখন নতুন অঙ্ক কষছে। হেড অফিসের মিটিংয়ে কাল সকালেই একবার দিল্লি যেতে হবে। কলকাতার রাস্তাঘাট কতটা ডুবেছে। নিউজ চ্যানেলে রাজনৈতিক নেতাদের কচকচানি দেখে বিরক্তিতে তেতো হয়ে এল মুখ। শান্তিনিকেতনে বাইশে শ্রাবণের তোরজোর চলছে। সুইগি-তে লাঞ্চ অর্ডারের জন্য ফোনটা হাতে নিয়ে জানালার কাছে চলে গেল অমিত। লাল মাটির পথে বাউল খ্যাপার গলায় তখন, বন্ধু বিনে প্রাণ বাঁচে না…

গান শুনতে শুনতেই স্নান সেরে নিল অমিত। পুরনোদিন উঁকি দিয়ে যাচ্ছে। জুলপির চুলেও হালকা রুপোলি রেখা। আচমকাই ফোনটা কানে তুলতে চেনা স্বর, চল বন্ধু হয়ে যাই। স্বপ্নটা ফের ফিরে এল, সুরমাদেবীর মতামতকে অগ্রাহ্য করেই চারহাত এক হয়ে যায়। তবে বিয়ে না মানলেও মেয়ের সংসারে যাবতীয় সিদ্ধান্তে অবিচ্ছিন্নভাবেই থেকে গিয়েছিলেন রুমাদেবী। সামান্য বিছানার চাদর, তাও মায়ের পছন্দের। রিনিকে আদর করতে গেলেই অমিতের মনে হত শাশুড়ি চোখ পাকিয়ে আছেন। তৃতীয়জনের উপস্থিতি বেশিদিন সহ্য হল না। একদিন রেগেমেগেই বিলাসপুরে ফিরে গেল রিনি। তারপর বাইপোস্টে আসা আইনি নোটিস। এরপরেও ছমাস কেটেছে কলকাতার এই ৭০০ স্কোয়্যার ফিটের ফ্ল্যাটে অমিত একা। সারাদিন অফিসের কাজের পর টিভি, হুইস্কির বোতল আর এক পূর্ণ না হওয়া স্বপ্ন। যা প্রায়ই তাড়া করে ফেরে এই আইটি প্রফেশনালকে। সুইগির ছেলেটা খাবার নিয়ে এল। কলিংবেলের শব্দে দরজা খুলতেই, সময় থমকে গিয়েছে। গোলাপি শাড়ির রিনি তখন ফোটা ফোটা জলকনায় আবৃত। দরজায় সেঁটে দাঁড়িয়ে যায় অমিত। ফোনটা বাঁচতেই হাতের দিকে নজর যায়, বন্ধু দিবসে উপলক্ষে বিশেষ ছাড়। প্রিয়তমার জন্য আজই সংগ্রহ করুন উপহার। বৃষ্টি সহ্য হয় না রিনির। ঠান্ডা লাগতে পারে, দরজা ছেড়ে সরে দাঁড়ায় অমিত। বিয়ে ভাঙলেও বন্ধুতা যেন জুড়েই যায়।

The post বৃষ্টির দিনে কেমন আছে বন্ধুজন, মন টানে… appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement